চলতি বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে গাজা যুদ্ধ বন্ধে ২০ দফা পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন। প্রস্তাব উত্থাপনের মাঝে ট্রাম্প দুজন ব্যক্তির নাম উল্লেখ করেন, যারা এই প্রস্তাব সমর্থন করেছেন। তাঁরা হলেন—পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির।
ওই অনুষ্ঠানে স্বল্প সময়ের জন্য নাম দুটি উচ্চারিত হয়েছিল, কিন্তু সেটি ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাঁদের নামোল্লেখ ছিল শুধু যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের পাকিস্তান সংক্রান্ত বোঝাপড়ার নতুন অধ্যায়ের ইঙ্গিত এবং পাকিস্তানের রাজনৈতিক বাস্তবতারও প্রতিফলন। দুজনের নাম একসঙ্গে উচ্চারণ করার মাধ্যমে মার্কিন প্রেসিডেন্ট পাকিস্তানের বেসামরিক প্রধানমন্ত্রী আর দেশের সবচেয়ে ক্ষমতাধর সেনাপ্রধানকে সমান গুরুত্ব দেন। এতে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, শাহবাজ শরিফ সরকারপ্রধান হলেও প্রকৃত ক্ষমতা মুনিরের হাতেই বাঁধা।
১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর থেকে পাকিস্তান বারবার বেসামরিক ও সামরিক শাসনের দোলাচলে দুলেছে। দেশটিতে সর্বশেষ অভ্যুত্থান হয় ১৯৯৯ সালে। সে সময় তৎকালীন সেনাপ্রধান পারভেজ মোশাররফ প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে (শাহবাজের বড় ভাই) ক্ষমতাচ্যুত করে তখতে আসীন হন। ২০০৮ সালে পাকিস্তান আবার বেসামরিক শাসনে ফেরে। এরপর কয়েক দফা বেসামরিক সরকার ক্ষমতায় আসে, সামরিক চাপের ভেতরেও তারা কিছু নীতিনির্ধারণী স্বাধীনতা পেয়েছিল, দেশীয় এজেন্ডার একটা অংশ ঠিক করতে পেরেছিল, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করেছিল। সেই দিনগুলো এখন অতীত। চোখে পড়ার মতো কোনো অভ্যুত্থান ছাড়াই এখন দেশ চালাচ্ছে জেনারেলরা, আর বেসামরিক নেতৃত্ব শুধু বাহারি পোস্টার।
একে বলা যায় ‘মুনির মডেল’ নামে। গণতন্ত্রের আবরণে সামরিক নিয়ন্ত্রণ। ২০০৮ সালে সরাসরি সামরিক শাসন শেষ হওয়ার পর থেকে এটাই পাকিস্তানি রাষ্ট্রকাঠামোর সবচেয়ে তীক্ষ্ণ পুনর্গঠন। এই ব্যবস্থায় সেনাবাহিনী আর আড়ালে থেকে সুতো টানে না, বেসামরিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে পাশ কাটিয়ে বা কখনো সঙ্গে নিয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে শাসন করে। নীতি প্রণয়ন থেকে কূটনীতি, অর্থনীতির দিকনির্দেশনা—সবকিছুতেই তাদের হাতের ছোঁয়া স্পষ্ট। নিরাপত্তা আর গোয়েন্দা বিষয় তো তাদের ঐতিহ্যগত কর্তৃত্বের ক্ষেত্র হিসেবে আছেই।
ক্ষমতার এই সংহতি এখন শুধু অলিখিত প্রথায় সীমাবদ্ধ নেই, আইনেও গাঁথা হয়ে গেছে। কিছুদিন আগেই পার্লামেন্ট সংবিধান সংশোধন করে মুনিরকে দেশের সব বাহিনীর শীর্ষে বসিয়েছে। তাঁকে দেওয়া হয়েছে আজীবন আইনি দায়মুক্তি আর নবায়নযোগ্য ৫ বছরের মেয়াদ। অর্থাৎ, সেনাপ্রধানের চারপাশে বিস্তৃত এক নতুন কমান্ড কাঠামো আইনগত রূপ পেয়েছ, আর তিনি চাইলে মোট ১০ বছর পর্যন্ত দায়িত্বে থাকতে পারবেন।
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ এ বছরের শুরুতে এক সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট করে বলেছিলেন, দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা এখন হাইব্রিড। সামরিক ও বেসামরিক সরকার ‘ক্ষমতার কাঠামোর যৌথ মালিক।’ কোনো লজ্জা ছাড়াই তিনি যোগ করেন, ‘এই হাইব্রিড ব্যবস্থাটা দারুণ কাজ করছে।’
সেনাপ্রধানের সমর্থকেরা অবশ্য বিগত এক বছরের ‘দারুণ কাজের’ ফিরিস্তি তুলে ধরবেন। মুনিরের নেতৃত্বে পাকিস্তান নতুন আইএমএফ ঋণ পেয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক দৃঢ় হয়েছে। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও চীনের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের সংলাপ চালু হয়েছে, যেখান থেকে নতুন বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি এসেছে। সামরিক নেতৃত্বে গঠিত স্পেশাল ইনভেস্টমেন্ট ফ্যাসিলিটেশন কাউন্সিল এখন বিদেশি বিনিয়োগ ত্বরান্বিত করার মূল রাষ্ট্রীয় প্ল্যাটফর্ম—বিশেষ করে জ্বালানি, কৃষি ও খনিজ খাতে।
সমর্থকদের মতে, এমন কেন্দ্রীভূত ও সামরিক-নির্ভর শাসন পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার ভেতর এক ধরনের সামঞ্জস্য ফিরিয়ে এনেছে। কিন্তু, এখন যখন দেশ পরিচালনার দায়িত্ব কার্যত সেনাবাহিনীর হাতে, তখন সেনা কর্মকর্তাদেরও আর আড়ালে থাকার জায়গা নেই। দেশের সাফল্যের পাশাপাশি ব্যর্থতার দায়ও এখন তাঁদের কাঁধেই পড়বে।
রাষ্ট্র গলঃধকরণ
২০২২ সালের এপ্রিলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। তখন প্রায় সবারই ধারণা ছিল, তাঁর পতনের নেপথ্যে সেনাবাহিনীর সক্রিয় ভূমিকা আছে। এরপর শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বে যে সরকার ক্ষমতায় আসে, তারা পুরোপুরি সামরিক সমর্থনের ওপর দাঁড়িয়ে ছিল। বেসামরিক সরকারের পার্লামেন্টারি আবরণ ছিল, কিন্তু দেশের কঠিনতম কাজগুলো সামলাচ্ছিল সেনাবাহিনীই। ধ্বংসপ্রায় অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখা, রাজনৈতিক অস্থিরতা দমন, সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে নজরদারি, বিদেশনীতি পরিচালনা—সবই ছিল জেনারেলদের হাতে।
২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচন সেই বাস্তবতাকেই আবারও পুনর্নিশ্চিত করে। নির্বাচন কমিশনের নিষেধাজ্ঞায় ইমরান খানের দল দলীয়ভাবে ভোটে দাঁড়াতে পারেনি; নির্দলীয় প্রার্থী হিসেবেই অংশ নিতে হয়। তবু তারা সর্বাধিক আসন পায়, কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠতা গড়তে পারেনি। শাহবাজ শরিফের পাকিস্তান মুসলিম লিগ আবারও দুর্বল জোট সরকারের নেতৃত্বে ফিরে আসে। তারা পাকিস্তান পিপলস পার্টি এবং কয়েকটি ছোট দলের সঙ্গে মিলে সরকার গঠন করে। জাতীয় পরিষদের এই অঙ্ক তাদের বৈধতা দিতে পারে বটে, কিন্তু ক্ষমতার প্রকৃত ভিত্তি ছিল সেনাবাহিনীর পৃষ্ঠপোষকতা। দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ, আদালত ও প্রশাসনের ওপর প্রভাব, এবং প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর মধ্যে মধ্যস্থতা—সবকিছু মিলিয়ে রাজনৈতিক মাঠ কারা সাজাবে, কোন জোট সরকারে আসবে এবং কত দূর শাসন করতে পারবে, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা সেনাবাহিনীর হাতেই ছিল।
এই পথ বেছে নিতে বেসামরিক রাজনীতিবিদদের খুব একটা দ্বিধা ছিল না। শাহবাজের মন্ত্রিসভার এক সদস্য ২০২৩ সালে বলেছিলেন, ‘ইমরান খানকে সেনাবাহিনী ছাড়া আমরা সরাতে পারব না।’ ২০২৩-এর আগস্টে ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে পাওয়া কিছু রাষ্ট্রীয় উপহার বিক্রি থেকে অর্জিত আয়ের তথ্য তিনি গোপন করেছিলেন, যা পাকিস্তানি আইনে দণ্ডনীয়। তখন থেকেই তিনি কারাগারে। তিনি দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনীতিক। তাঁর মোকাবিলা বেসামরিক রাজনীতির সামর্থ্যের বাইরে বলে অনেকেই মনে করেন। নিরাপত্তা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের ওপর সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ তাদের সুযোগ করে দেয় ইমরানের রাজনৈতিক আন্দোলনকে নিয়ন্ত্রণে রাখা, তাঁর দলের সাংগঠনিক ক্ষমতা দুর্বল করা এবং রাজনৈতিক অঙ্গনকে নিজেদের মতো রূপ দিতে। ইমরানবিরোধীদের সঙ্গে জেনারেলদের শুরুতে কৌশলগত যে জোট হয়েছিল, তা ধীরে ধীরে কাঠামোগত ক্ষমতা হস্তান্তরে রূপ নেয়।
দুই বছর কেটে গেছে। ইমরান খান এখনো কারাগারে, জনসমক্ষে কার্যত অদৃশ্য। এমন সব মামলায় জড়িয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁকে যেগুলোকে অধিকাংশ পাকিস্তানি ন্যায্য মনে করেন না। ২০২২ সালে তাঁকে সরিয়ে রাজনৈতিক সংকট থামানোর যে যুক্তি দেখানো হয়েছিল, সেটি এখন আর প্রাসঙ্গিক নয়। কিন্তু সেই দুর্বল মুহূর্তে বেসামরিক রাজনীতিবিদেরা যে ক্ষমতা সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছিলেন, তা আর ফেরত পাওয়া যায়নি। বরং আরও বিস্তৃত হয়েছে। শুরু হয়েছিল একজন মানুষকে কেন্দ্র করে, শেষে এসে রাষ্ট্রটাই গিলে ফেলা হলো।
ফিল্ড মার্শালের সুখের সময়
ঘটনাটি ঘটে ২০২৫ সালের মে মাসে, ভারতের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত কিন্তু ব্যাপক যুদ্ধে। সেই যুদ্ধের স্ফুলিঙ্গ ছিল ভারতীয় নিয়ন্ত্রণাধীন কাশ্মীরে একটি হামলা। এই হামলার পর নয়াদিল্লি ইসলামাবাদের ওপর দায় চাপায়। শুরু হয় যুদ্ধ। কয়েক দিনের লড়াইয়ের পর দুই পক্ষই সরে আসে, যুদ্ধ থেমে যায়। পাকিস্তান বিজয় দাবি করে এবং দেশটির সাধারণ মানুষও তা বিশ্বাস করে। ভারত ও তার জনগণও তাদের নিজস্ব দৃষ্টিকোণ থেকে বিজয় মনে করে। তবে মাঠের কাহিনির চেয়ে বেশি তাৎপর্যপূর্ণ ছিল যুদ্ধবিরতি কৌশল। প্রকাশ্যে আসে যে, শাহবাজ শরিফ ও তাঁর মন্ত্রিসভাকে কার্যত পাশ কাটিয়ে যুদ্ধ থামানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি মুনিরের সঙ্গে কাজ করেছে। এর মধ্য দিয়ে পাকিস্তানি ও বিদেশিদের কাছে একটি পুরোনো একটি সত্য আবারও প্রমাণিত হয় যে, যুদ্ধ ও শান্তির চূড়ান্ত নিয়ন্ত্রণ পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর হাতে।
পরবর্তী মাসগুলোতে এই যুদ্ধ এবং যুদ্ধবিরতির প্রক্রিয়া পাকিস্তানের ক্ষমতা ও রাজনীতি নিয়ন্ত্রণের মূলনীতি হয়ে দাঁড়ায়। জুনে ট্রাম্প মুনিরকে হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ জানান। এ সময় কোনো বেসামরিক নেতা তাঁর সফরসঙ্গী ছিলেন না। ইতিহাসে এই প্রথমবার কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট পাকিস্তানের কোনো বেসামরিক নেতাকে আতিথেয়তা না দিয়ে একা কেবল সেনাপ্রধানকে গ্রহণ করেন। সেনাবাহিনীর নিজস্ব বিবরণ অনুযায়ী—বৈঠকের বিষয়বস্তু কেবল নিরাপত্তা নয়, সেখানে ছিল বাণিজ্য, শক্তি, প্রযুক্তি, ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং বিরল খনিজসম্পদের আলোচনা। এসব বিষয় একসময় বেসামরিক সরকারের দায়িত্ব থাকলেও, তা এখন সরাসরি জেনারেলের ডেস্কে চলে আসে।
চলতি বছরের গ্রীষ্ম শেষের দিকে, মুনিরের নেতৃত্বে নতুন অর্থনৈতিক কূটনীতি শুরু হয়। জুলাইয়ে পাকিস্তানি কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারস্পরিক শুল্ক কাঠামো ঘোষণা করেন, যেখানে পাকিস্তান এই অঞ্চলে সবচেয়ে কম, মাত্র ১৯ শতাংশ শুল্কে সুবিধা পায়। এ ছাড়া, পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্রিপ্টোকারেন্সি, খনি ও জ্বালানি প্রকল্পের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করে।
এসব বিষয় স্পেশাল ইনভেস্টমেন্ট ফ্যাসিলিটেশন কাউন্সিলের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। ২০২৩ সালে বিদেশি বিনিয়োগ এবং কৌশলগত শিল্পের ওপর কেন্দ্রীয় নজরদারির গঠন করা হয়। এই সংস্থায় সামরিক–বেসামরিক যৌথ নেতৃত্ব আছে। প্রধানমন্ত্রী এই সংস্থার চেয়ারম্যান হলেও সেনাপ্রধান সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংস্থা অ্যাপেক্স কমিটির সদস্য এবং একজন কর্মরত জেনারেল জাতীয় সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন। এই নতুন চ্যানেলের মাধ্যমে বহু গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি বাস্তবায়িত হতে শুরু করেছে। উদাহরণস্বরূপ, ৮ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের ফ্রন্টিয়ার ওয়ার্কস অর্গানাইজেশন নামে সেনা পরিচালিত একটি সংস্থা যুক্তরাষ্ট্রের মিজৌরিভিত্তিক ইউএস স্ট্র্যাটেজিক মেটালসের সঙ্গে ৫০০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের বিরল খনিজ রপ্তানির চুক্তি করে। ইসলামাবাদে ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করা হয় যে, মুনির নিজেই এই চুক্তি তদারকি করেছেন।
এরপর হোয়াইট হাউসে আবারও বৈঠকে বসেন মুনির। গত ২৬ সেপ্টেম্বর অবশ্য মুনির ও শরিফ একসঙ্গে ওয়াশিংটনে যান। এটি ছিল ট্রাম্পের সঙ্গে মুনিরের দুই মাসের মধ্যে দ্বিতীয় সাক্ষাৎ। সেনাপ্রধান ট্রাম্পের সামনে পাকিস্তানের বিরল খনিজ ও রত্ন উপস্থাপন করছেন—এমন একটি ছবি সে সময় ব্যাপক প্রচার করা হয়। এটি হয়তো বিক্রেতার একটি প্রচারণামূলক ক্যাম্পেইন, কিন্তু তা এক ধরনের নীতিমালার ঘোষণাও বটে। সেটা হলো—পাকিস্তানের নতুন কূটনীতিতে সেনাবাহিনী হলো গ্যারান্টর, আলোচক এবং চূড়ান্ত সমঝোতার কারিগর।
অতীতের সঙ্গে তুলনা ইঙ্গিতপূর্ণ। ২০১৯ সালে ইমরান খান যখন হোয়াইট হাউসে যান, তখনকার সেনাপ্রধান জেনারেল কমর জাভেদ বাজওয়া তাঁর সঙ্গে গেলেও তিনি সেখানে কেবলই আলঙ্কারিকভাবে উপস্থিত ছিলেন এবং শুধুমাত্র কিছু সরকারি ছবিতে বাজওয়াকে দেখা গেছে। কিন্তু ২০২৫ সালে এসে মুনির আর পেছনে থাকা নীরব পর্যবেক্ষক নন। তিনি নীতিনির্ধারণের প্রধান অংশ। এটি প্রত্যাশিতই ছিল। কারণ—পাকিস্তানে এখন এমন এক ক্ষমতা ব্যবস্থা বিরাজ করছে, যেখানে ক্ষমতার আসল ঠিকানা লুকানোর চেষ্টা বন্ধ হয়ে গেছে।
ওভাল অফিসে সেই বৈঠকের তিন দিন পর ট্রাম্প তাঁর গাজা পরিকল্পনা প্রচারের সময় শরিফ ও মুনিরের নাম উল্লেখ করেন। এই উল্লেখ ইসলামাবাদকে সন্তুষ্ট করেছে। এটি পাকিস্তান সরকারকে ভৌগোলিক ও কূটনৈতিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের উপযুক্ত অংশীদার হিসেবে প্রমাণ করার প্রচেষ্টার সমর্থন বলেই মনে হয়েছে। বিশেষ করে, এমন সময়ে যখন ওয়াশিংটন দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে তার অবস্থান পুনর্মূল্যায়ন করছে। যুক্তরাষ্ট্র–ভারতের সম্পর্কের অস্থির মুহূর্তে ইসলামাবাদ তার দীর্ঘমেয়াদি মিত্র উপসাগরীয় দেশগুলোর শাসকদের সঙ্গে সম্পর্ক এবং বিশ্বের একমাত্র পারমাণবিক শক্তিধর মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র হিসেবে অনন্য অবস্থান ব্যবহার করতে পারে যা ওয়াশিংটনকে আঞ্চলিক সংকট মোকাবিলায়, উপসাগরীয় অঞ্চলে কূটনৈতিক প্রভাব বজায় রাখতে এবং যেসব খেলোয়াড়কে সরাসরি প্রভাবিত করা যায় না তাদের সঙ্গে চ্যানেল রক্ষা করতে সাহায্য করতে পারে। এর ফলে, যুক্তরাষ্ট্র এখন পাকিস্তানকে গত কয়েক বছরের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে, যা পাকিস্তানি কূটনীতিতে সেনাবাহিনীর এগিয়ে আসার বিষয়টিকে স্বীকৃতি দিচ্ছে।
এই পরিবর্তন অতীতের সঙ্গে সম্পূর্ণ বিচ্ছেদ নয়, বরং পরিচিত ধারা নতুন সময়ের সাপেক্ষে আপডেট হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টরা দীর্ঘদিন ধরে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন পড়লে পাকিস্তানি সামরিক শক্তিধরদের বেছে নিয়েছেন। ১৯৬০-এর দশকে যখন ওয়াশিংটন এশিয়ায় নির্ভরযোগ্য স্নায়ুযুদ্ধের পার্টনার খুঁজছিল তখন আইয়ুব খান; ১৯৮০-এর দশকে আফগানিস্তানে মার্কিন সমর্থিত সোভিয়েতবিরোধী জিহাদ চলাকালে জিয়াউল হক এবং ৯ / ১১-এর পরে পারভেজ মোশাররফ যুক্তরাষ্ট্রের আস্থায় ছিলেন।
তবে বর্তমান সময়ের ভিন্নতা হলো, মুনির এই প্রভাবশালী অবস্থানে পৌঁছেছেন কোনো অভ্যুত্থান ছাড়াই। সেনাবাহিনী পাকিস্তানের আনুষ্ঠানিক শাসন কাঠামোর ভেতরে প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করেছে। বিনিয়োগ সংস্থা পরিচালনা, বৈদেশিক নীতি গঠন, কমান্ড ক্ষমতার পুনর্গঠন এবং সেনাপ্রধানকে বেসামরিক ক্ষেত্রেও সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। বিদেশের অনেকের কাছে পাকিস্তানের ইউনিফর্ম পরা নেতৃত্বের স্পষ্টতা গ্রহণযোগ্য বলেই মনে হচ্ছে।
সেনাবাহিনীর জন্যও এই হাইব্রিড শাসন গ্রহণ করা যৌক্তিক। মুনির সাধারণ কোনো সেনাপ্রধান নন। এই বছরের শুরুতে তাঁকে ফিল্ড মার্শাল পদে উন্নীত করা হয়েছে (প্রায় ছয় দশকের মধ্যে প্রথম), সেনাপ্রধান হিসেবে মেয়াদ দুই বছর বাড়ানো হয়েছে, সামরিক শাখার প্রধান হিসেবে উন্নীত করা হয়েছে এবং এখন অর্থনীতি, অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও জাতীয় নিরাপত্তার দায়িত্বে আছেন। তিনি সাম্প্রতিক স্মৃতির মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী সেনা কর্মকর্তা।
তাঁর উত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে বিরূপ বিষয় হলো—সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশের চোখে সেনাবাহিনী বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছিল। ইমরান খানের অপসারণ ও পরবর্তী অস্থিরতা লাখ লাখ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে দীর্ঘদিনের পৃষ্ঠপোষকতা থাকা সত্ত্বেও দেশের ক্ষতিকর বল মনে করতে শুরু করেছিল। ২০২৩ সালের মে মাসে খানের সমর্থকেরা সেনা স্থাপনাগুলোতে হামলা চালায়, যার মধ্যে লাহোরে করপস কমান্ডারের বাসভবনও ছিল, যা পাকিস্তানে অনন্য ঘটনা। জেনারেলরা মনে করেন, ছায়ায় থাকার আর কোনো সুযোগ নেই। বরং প্রকাশ্যভাবে নেতৃত্ব দাবি করা ভালো, খলনায়ক সাজার নাটক আর নয়, বরং স্থিতিশীলতার শক্তি হিসেবে নিজেদের উপস্থাপন করা ভালো এবং প্রয়োজন।
তাদের হিসাব স্পষ্ট—ভারতের সঙ্গে মে মাসের সংঘর্ষের পর জনপ্রিয়তা বাড়ার পর, জেনারেলরা বুঝেছেন যে, অর্থনৈতিক কূটনীতি, বিনিয়োগ চুক্তি এবং অন্যান্য উদ্যোগ যদি জনসাধারণের বিশ্বাস অর্জন করতে চায়, তবে তা খোলামেলাভাবে করা প্রয়োজন। অর্থাৎ, সেনাবাহিনী এখন কেবল ক্ষমতা একত্রিত করছে না, বরং নিজেকে দেশের অপরিহার্য জীবনরেখা হিসেবে বাজারে উপস্থাপন করছে।
অদৃশ্য নয়, দৃশ্যমান হাত
পাকিস্তান আগেও সামরিক শাসন দেখেছে, কিন্তু আজকের পরিস্থিতি শুধুমাত্র আইয়ুব, জিয়াউল বা মোশাররফের যুগের পুনরাবৃত্তি নয়। এখানে কোনো অভ্যুত্থান হয়নি, সংবিধান স্থগিত হয়নি, পার্লামেন্টও বাতিল হয়নি। যে বিষয়টি এই মুহূর্তকে আলাদা এবং তাৎপর্যপূর্ণ করছে তা হলো—সেনাবাহিনী এখন গণতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যেই কাজ করছে, বাইরে থেকে নয়। জেনারেলরা কার্যত রাজনৈতিক ব্যবস্থা দখল করেছে, কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে সেটিকে নতুন কোনো ব্যবস্থা দিয়ে প্রতিস্থাপন করেনি। এটি প্রাতিষ্ঠানিক সীমারেখাকে আরও অস্পষ্ট করে তুলেছে, যা পাকিস্তানের রাজনৈতিক জীবনকে বছরের পর বছর প্রভাবিত করবে।
এই পরিবর্তনে অনেক কিছুই অদৃশ্য থেকে দৃশ্যমান হয়েছে এবং তা গুরুত্বপূর্ণ। এটি ক্ষমতা কাঠামোর মূল খেলোয়াড়দের মনোভাব বদলে দেয়, পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রভাবিত করে এবং দেশ যে আন্তর্জাতিক পরিবেশে চলাফেরা করে সেটাকেও বদলে দেয়। এর একটি প্রভাব হলো—এই পুরো পরিবর্তন রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে এবং বেসামরিক জনজীবনে সামরিক আধিপত্যকে স্বাভাবিক করে তোলে। রাজনৈতিক দলগুলো এখানে আর মূল চালিকাশক্তি হিসেবে না থেকে স্রেফ প্রশাসনিক সংযোজন হিসেবে পরিণত হয়। পার্লামেন্ট হয়ে যায় নাট্যমঞ্চ এবং প্রধানমন্ত্রী হয়ে ওঠেন অন্য কোথাও নেওয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের প্রশাসক। এটি হলো রাজনীতিবিদদের সেই চুক্তির মূল্য, যা ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করতে সেনাবাহিনীর সঙ্গে করা হয়েছিল।
তবে ক্ষমতা কাঠামোতে সেনাবাহিনীর দৃশ্যমান অবস্থান নতুন ধরনের জবাবদিহি তৈরি করে। যখন সেনাবাহিনী খোলাখুলি নীতি নির্ধারণ করে, তখন তার ফলাফলও গ্রহণ করতে হয়। বৃদ্ধি থমকে গেলে, বিনিয়োগ ব্যর্থ হলে, নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়লে—জেনারেলরা অযোগ্য মন্ত্রিপরিষদকে দোষ দিতে পারবে না। প্রদর্শিত ক্ষমতা সাফল্যের পাশাপাশি ব্যর্থতার জন্যও জবাবদিহি করতে বাধ্য। এই ডাইনামিকস এরই মধ্যে স্পষ্ট। সামরিক নেতৃত্ব বারবার জনমত জরিপের কথা উল্লেখ করছে, প্রেস ব্রিফিংয়ে তাদের সিদ্ধান্তের পক্ষে উকালতি করছে এবং অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক অর্জনের ক্রেডিট চাইছে। এটি দেখায় যে, জেনারেলরা এখন নতুনভাবে সচেতন যে, অর্জন ব্যর্থ হলে তাদের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে।
বেসামরিক ক্ষমতাকাঠামোর ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাইপাস করার বিষয়টি সেনাবাহিনীকে দ্বিধার সম্মুখীন করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, স্পেশাল ইনভেস্টমেন্ট ফ্যাসিলিটেশন কাউন্সিলের কথা বলা যেতে পারে। বিদেশি বিনিয়োগ, প্রাকৃতিক সম্পদ এবং কৌশলগত শিল্প সম্পর্কিত বিষয়গুলো সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে রাখা দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করতে পারে এবং বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করতে পারে। কিন্তু সেনাবাহিনীর হাতে ক্ষমতা সংরক্ষণ মন্ত্রণালয়গুলোকে দুর্বল করতে পারে, বেসামরিক বিশেষজ্ঞের প্রয়োজনীয়তা হ্রাস করতে পারে এবং পার্লামেন্টারি তদারকি, গণমাধ্যমের সমালোচনা ও বিরোধীদের নজরদারি কমিয়ে দিতে পারে। কিন্তু এসব বিষয়ই মূলত গণতন্ত্রে সরকারকে আত্মসংশোধনের সুযোগ দেয়।
যখন একটি রাষ্ট্রের ক্ষমতা কতিপয় এলিট জেনারেলর মধ্যে কেন্দ্রীভূত হয়, তখন তা ভঙ্গুর হয়ে ওঠে। পাকিস্তানের অতীত সামরিক সরকারের উদাহরণ এটি স্পষ্ট দেখিয়েছ। সামরিক শাসন প্রায়ই সাময়িক স্থিতিশীলতা দেয়, কিন্তু বৃদ্ধি থেমে গেলে বা সংকট এলে, প্রাতিষ্ঠানিক বাফারের অভাব দ্রুত পতন ত্বরান্বিত করে।
ইমরান খানের দুই বছরের কারাবাস সামরিক বাহিনীর দুশ্চিন্তাকে বাড়িয়ে দিয়েছে। তারা যে দেশকে খোলেআম শাসন করছে—সেটা নিশ্চিত করার জন্য হয় নির্বাচন বা ন্যায়বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে হবে, নতুবা তাঁকে চিরতরে রাজনৈতিক অঙ্গনে থেকে সরিয়ে দিতে হবে। দুই পথই বিপজ্জনক। পুনর্বাসন নতুন শৃঙ্খলাকে অস্থির করতে পারে, অপরদিকে অবিরাম দমন সেনাবাহিনীর শাসনের বৈধতা দ্রুত ক্ষয় করে দিতে পারে।
যদিও কিছু দেশ—যেমন যুক্তরাষ্ট্র—সামরিক নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে। কারণ, সেনাপ্রধানের দৃশ্যমান ভূমিকায় কার্যত নেতা হিসেবে থাকা পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতির পরিসর ছোট করে আনতে পারে পারে। এর ফলে, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আরও নিরাপত্তা কেন্দ্রিক হয়ে যাবে, যা মূলত বেসামরিক প্রশাসনের বিপরীতে সামরিক চ্যানেলের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। ফলে সংলাপ কঠিন হবে এবং উত্তেজনার ঝুঁকি বাড়বে। মধ্যপ্রাচ্যে—যেখানে পাকিস্তান সম্প্রতি সৌদি আরবের সঙ্গে পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে—সামরিক নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান অন্যান্য রাষ্ট্রের নিরাপত্তা হিসাব-নিকাশে আরও গভীরভাবে যুক্ত হবে, যার ফলে ইরানের সঙ্গে নীতিগত বিচ্যুতি এবং পাকিস্তানের অযাচিত সংঘর্ষে জড়িত হওয়ার ঝুঁকি বাড়বে।
পর্দা সরে গেছে, মঞ্চ আলোকিত
দশকের পর দশক ধরে পাকিস্তানের ডিপ স্টেট জেনারেলদের দায়িত্বহীনভাবে ক্ষমতায় থাকতে দিয়েছে, আর ব্যর্থতার বোঝা তুলে দিয়েছে সাধারণ নাগরিকদের কাঁধে। মুনির মডেল সেই চুক্তি উল্টে দিয়েছে। সেনা শক্তিকে প্রকাশ্য এনে সেনাবাহিনী কার্যকারিতা ও দ্রুততার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। এই চুক্তি উর্দি ও প্রজাতন্ত্রের মধ্যকার ফারাকটুকুও মুছে দিয়েছে। এটি কোনো ক্রমবর্ধমান অভ্যুত্থান নয়। এটি আরও সূক্ষ্ম কিছু: কৌশলগত সংহতি। সেনারা তাদের প্রাধান্যকে গোপন না করেই প্রতিষ্ঠিত করেছে।
হাস্যকর হলে সত্যি যে, এখন শাহবাজ শরিফ সেই ব্যবস্থারই প্রধান, যা তাঁর বড় ভাই নওয়াজ শরিফ এক সময় প্রতিরোধ করেছিলেন। বড় ভাই যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তখন তিনি জেনারেলদের সঙ্গে বারবার সংঘাতে জড়িয়েছেন। ১৯৯৮ সালে তখনকার সেনাপ্রধান জাহাঙ্গীর করমাত তুরস্কের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মতো একটি সংবিধানগত কাঠামো প্রস্তাব করেছিলেন—যেখানে শাসনে সেনাবাহিনীর অংশগ্রহণ আনুষ্ঠানিকভাবে অন্তর্ভুক্ত হতো। নওয়াজ সেটিকে বেসামরিক শাসনে হস্তক্ষেপ বলে মনে করেছিলেন। কয়েক দিনের মধ্যেই নওয়াজ করমাতকে পদত্যাগ করতে বলেন। সেই প্রথম পাকিস্তানের রাজনৈতিক যুদ্ধে বেসামরিক প্রধানমন্ত্রী জিতেছিলেন, জেনারেল নয়। শাহবাজের অধীনে পরিস্থিতি পুরোপুরি উল্টে গেছে।
এই শাসনকে বিভিন্ন চটকদার কিন্তু শালীন ভাষা বাদ দিলে, এই হাইব্রিড মডেল হলো—পুরোনো সত্যকে নতুন আঙ্গিকে ঢেকে রাখার চেষ্টা—সেনারা শাসন চালায় এবং বেসামরিক প্রশাসন তা মেনে চলে। এখন পার্থক্য শুধু এটুকুই যে পর্দা সরে গেছে, মঞ্চ পুরোপুরি আলোকিত—যেন সবাই তা দেখতে পারে।
ফরেন অ্যাফেয়ার্স থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকা সহসম্পাদক আব্দুর রহমান