হোম > বিশ্লেষণ

এআই, সমরাস্ত্র ও নিখাদ ইউরেনিয়ামের আকাঙ্ক্ষা, মার্কিন সহায়তা পাবেন কি এমবিএস

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­

সৌদি যুবরাজ এমবিএস যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তিগত সহায়তায় নিজ দেশকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছেন। ছবি: সংগৃহীত

সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস) যুক্তরাষ্ট্রের এমন এক প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে চাইছেন, যা কাতার–যুক্তরাষ্ট্র চুক্তিকেও ম্লান করে দেবে। তাঁর চাহিদার তালিকায় আছে এআই চিপ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা–চালিত ড্রোন, আর সম্ভবত তাঁর দেশে মার্কিন পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন।

আজ রোববার ওয়াশিংটনে যাচ্ছেন এমবিএস। গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার মধ্যেই ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চাপ তিনি হজম করে গেছেন। এমনকি ইসরায়েল–ইরান যুদ্ধেও নিজ দেশকে রক্ষা করে ক্রমেই শক্তিশালী হয়ে উঠেছেন তিনি। তাঁর বিপরীতে আছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যিনি সৌদি আরবকে নিজ পক্ষপুটে আনতে আলোচনা টেবিলে নিজ দেশের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ—পারমাণবিক ও এআই প্রযুক্তির বিষয়টি উত্থাপনে প্রস্তুত।

একসময় মধ্যপ্রাচ্যের নেতারা হোয়াইট হাউসে যেতেন এমন সব চুক্তি নিয়ে, যেগুলো মূলত বোয়িং আর লকহিড মার্টিনকে ব্যস্ত রাখত। ইরানের শাহ অস্ত্র ব্যবস্থার বিশ্বকোষসম জ্ঞানের জন্য এমন সফরে কুখ্যাত ছিলেন। কিন্তু বিশ্লেষকদের মতে, মোহাম্মদ বিন সালমানের জটিল ‘শপিং লিস্ট’ এক পরিণত ও দূরদর্শী রাষ্ট্রের উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে ফুটিয়ে তোলে।

মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক থিংক ট্যাংক এডেলম্যান পাবলিক অ্যান্ড গভর্নমেন্ট অ্যাফেয়ার্সের মধ্যপ্রাচ্য প্রধান আইয়্যাম কামেল বলেন, ‘এমবিএস কেবল একটি খাতে সহযোগিতা চান না, তিনি দীর্ঘ মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্র–সৌদি আরব সম্পর্ককে শক্তিশালী করতে চান। সেটা প্রযুক্তি ও বাণিজ্যের দ্বিমুখী প্রবাহের মাধ্যমে। তিনি আরও বলেন, ‘সৌদি আরব এখনো বহুমেরুবিশ্বের অংশ হতে চায়, কিন্তু তারা ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগ নিতেও প্রস্তুত।’

বিশেষজ্ঞরা যে দিকটিতে নজর রাখা উচিত বলে মনে করছেন তা হলো—যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক ছাতার নিচে জায়গা পেতে সৌদি আরবের আগ্রহ। কাতারে হামাসের মধ্যস্থতাকারীদের ওপর ইসরায়েলের হামলার কয়েক দিনের মধ্যেই সৌদি আরব মুসলিম বিশ্বের একমাত্র পারমাণবিক শক্তিধর দেশ পাকিস্তানের সঙ্গে একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি করে।

পাকিস্তানের হাতে প্রায় ১৭০টি পারমাণবিক ওয়ারহেড আছে বলে ধারণা করা হয়। দুই দেশের বিবরণে বলা হয়, চুক্তিতে সামরিক সব ধরনের বিকল্পই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে সঙ্গে সৌদির পারমাণবিক আলোচনার বিষয়বস্তু গোপনে রাখা হয়েছে। তবে সাবেক এক মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলছেন, সৌদি আরবকে মার্কিন সামরিক সুরক্ষার আওতায় আনার ধারণা কার্যকর হতে পারে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘এতে সৌদিরা পাকিস্তানের পারমাণবিক ছাতার বাইরে আসবে এবং নিজেদের কাতারের চেয়ে বেশি নিরাপদ মনে করবে।’

সৌদি আরব মূলত নিরাপত্তা শঙ্কার জায়গা থেকেই মার্কিন পারমাণবিক শক্তি ছায়াতলে আশ্রয় নিতে চাইছে। ২০১৯ সালে সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি আরামকোর স্থাপনায় ইরানের হামলার পর থেকে সৌদি আরব ভয় পেতে শুরু করে। সর্বশেষ, কাতারে ইসরায়েলি হামলা সেই ভয়কে আরও বাড়িয়েছে।

কাতারে ইসরায়েলি হামলার পর দোহারের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামতে ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন, যাতে কাতারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয় এবং উপসাগরীয় এই দেশে যে কোনো হামলাকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘শান্তি ও নিরাপত্তার’ প্রতি হুমকি হিসেবে ধরা হবে বলে উল্লেখ করা হয়।

ওয়াশিংটন বা উপসাগরীয় অঞ্চলের খুব কম কর্মকর্তাই এই প্রতিশ্রুতিকে গুরুত্ব দেন। কারণ, আনুষ্ঠানিক চুক্তি প্রতিশ্রুতির তুলনায় নির্বাহী আদেশ যেকোনো সময় বাতিল করা যায় এবং নতুন মার্কিন প্রশাসন এই ধরনের নির্বাহী আদেশ মানবে—এমন নিশ্চয়তাও নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সৌদি আরব আরও শক্তিশালী কিছু চায়।

সৌদি প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্রিন্স খালিদ বিন সালমান এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মুসাআদ আল আইবান এ সপ্তাহের শুরুতেই ওয়াশিংটনে গিয়ে সম্ভাব্য প্রতিরক্ষা অঙ্গীকার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। বিশ্লেষকদের মতে, ওয়াশিংটনে যুবরাজের পা পড়ার আগেই তাঁর সফরের একটি বড় সাফল্য হলো—দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় ইসরায়েল ইস্যুকে আলাদা করে ফেলা।

ট্রাম্প মে মাসে সৌদি সফরে যাওয়ার আগেই রিয়াদ আগাম আলোচ্যসূচি ঠিক করে নিয়েছিল, যাতে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রসঙ্গ আলোচনায় না আসে। এখন গাজায় নাজুক যুদ্ধবিরতি চলছে। ট্রাম্প দাবি করছেন, বছরের শেষের মধ্যে রিয়াদ ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে। কিন্তু পশ্চিমা ও আরব কূটনীতিকেরা জানিয়েছেন, সৌদি আরব আগের মতোই এ আলোচনায় ফিরতে অনিচ্ছুক। সৌদি আরব যুদ্ধবিরতির পাশাপাশি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের দিকে বাস্তব অগ্রগতি দেখতে চায়। কিন্তু একটি এমন শর্ত, যা মানতে ইসরায়েল দৃশ্যত প্রস্তুত নয়।

সৌদি আরব কি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারবে

সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বেসামরিক পারমাণবিক জ্বালানি নিয়ে যে আলোচনা চলছিল, তা মূলত ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের সম্ভাব্য পুরস্কার হিসেবেই দেখা হচ্ছিল। এখন সেই স্বাভাবিকীকরণ প্রক্রিয়া শীতল হয়ে গেলেও, আলোচনা থেমে নেই। চলতি বছরে যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি মন্ত্রী ক্রিস রাইট সৌদি আরবে আসেন পারমাণবিক প্রযুক্তি নিয়ে সহযোগিতার বিষয়ে কথা বলতে।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আব্রাহাম অ্যাকর্ডের চুক্তিগুলোকে নিজের পররাষ্ট্র নীতির বড় সাফল্য হিসেবে তুলে ধরেন। একই সঙ্গে তিনি ব্যবসায়িক চুক্তিতেও আগ্রহী। ওয়েস্টিংহাউস ও বেকটেলের মতো মার্কিন কোম্পানিগুলো পারমাণবিক চুল্লি ও সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি নির্মাণে যে ভূমিকা রাখে, সৌদি আরবের সঙ্গে সম্ভাব্য পারমাণবিক চুক্তিতে তাদের মুনাফা পাওয়ার সম্ভাবনা এই আলোচনাকে আরও এগিয়ে দিতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

২০০৯ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি ‘১২৩ চুক্তি’ করে। সেখানে তারা অঙ্গীকার করে যে, তারা নিজস্বভাবে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করবে না, বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র তাদের বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচির অনুমতি দেয়। কিন্তু সৌদি যুবরাজ এমন চুক্তি চাইছেন, যেখানে নিজেদের মাটিতে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার অধিকার থাকবে। তাদের দাবি, দেশে বিপুল ইউরেনিয়াম মজুত রয়েছে।

বছরের শুরুতে সৌদি জ্বালানি মন্ত্রী প্রিন্স আব্দুল আজিজ বিন সালমান বলেন, ‘আমরা এটি সমৃদ্ধ করব, বিক্রি করব এবং আমরা ইয়েলোকেক তৈরি করব।’ ইয়েলোকেক হলো খনি থেকে উত্তোলনের পর সমৃদ্ধকরণের আগের পর্যায়।

এক সৌদি বিশ্লেষক বলেন, ‘সমৃদ্ধ না করা সৌদিদের জন্য বড় ছাড় হবে। এটি অর্থনৈতিক ইস্যুও। কারণ, ইউরেনিয়াম রপ্তানি করার চেয়ে নিজেরাই সমৃদ্ধ করলে তারা বেশি লাভ করবে। পাশাপাশি এটি জাতীয় মর্যাদার ব্যাপার। প্রশ্ন হলো, যদি সৌদিরা সমৃদ্ধ না করে, তাহলে বিনিময়ে ট্রাম্প থেকে তারা কী পাবে?’

প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বার্নার্ড হায়কেল আরব গালফ স্টেটস ইনস্টিটিউটের এক অনুষ্ঠানে বলেন, বিনিময়ে সৌদি আরব ‘পারমাণবিক অস্ত্র সুরক্ষা’ চাইতে পারে। তাঁর ভাষায়, ‘আমি মনে করি আপাতত তারা সমৃদ্ধকরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ থেকে সরে আসতে পারে, কিন্তু তারা যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক সুরক্ষা চাইবে। এতে সৌদি ভূখণ্ডে যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবস্থা মোতায়েনও থাকতে পারে।’

মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউটের ভিজিটিং স্কলার গ্রেগরি গস বলেন, ‘ইতিহাসে আমরা নানা জায়গায় পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করেছি। কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়াই সৌদি আরবে এমন মোতায়েন সম্ভব।’ তাঁর মতে, যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন যেকোনো জায়গায় যেতে পারে, ট্রাম্প চাইলে ভারত মহাসাগরে এসব সাবমেরিন টহল দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিতে পারেন।

সৌদি আরব কি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান পাবে

যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা জানান, সফরে সৌদি আরবের যুবরাজ ১৮টি বিমানে করে ১ হাজার কর্মকর্তা নিয়ে ওয়াশিংটনে যাচ্ছেন। ২০১৮ সালের পর এমবিএসের প্রথম হোয়াইট হাউস সফর এটি। সেই সফরের সাত মাস পর ওয়াশিংটন পোস্টের কলামিস্ট জামাল খাশোগিকে হত্যা করা হয়। এতে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তীব্র সমালোচনা করে এবং তৎকালীন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেনও তীব্র নিন্দা জানান।

বাইডেন প্রশাসনের শুরুর দিকে ওয়াশিংটন-রিয়াদ সম্পর্ক ঠান্ডা থাকলেও ২০২২ সালে তা আবার উষ্ণ হয়। মূলত রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার পর যুক্তরাষ্ট্রের সৌদি জ্বালানি প্রয়োজন হওয়ায়। এই সময়ে সৌদি যুবরাজ আরও শক্তিশালী অবস্থানে উঠে আসেন। তিনি ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের সঙ্গে সমঝোতা করেন এবং ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামত করেন। অনেক আগেই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাঁর বিচ্ছিন্নতা কাটিয়ে উঠেছেন। এবারকার সফর মূলত ট্রাম্পের গালফ সফরের সময় যে বিশাল প্যাকেজ চুক্তি ঘোষণা করা হয়েছিল তা চূড়ান্ত করা।

দুই পক্ষ তখন ১৪২ বিলিয়ন ডলারের প্রতিরক্ষা বিক্রির ঘোষণা দেয়। এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানও সেই সম্ভাব্য চুক্তির অংশ ছিল। গত সপ্তাহে রয়টার্স জানায়, এই প্যাকেজে সৌদি আরবের জন্য ৪৮টি পর্যন্ত এফ-৩৫ থাকতে পারে। ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের কিছু কর্মকর্তার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই এ বিক্রির বিষয়ে উদ্বেগ আছে। ইসরায়েল বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যে একমাত্র দেশ যারা এফ-৩৫ চালায় এবং তাদের সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখতে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের বিনিময়ে আমিরাতকে এফ-৩৫ বিক্রির পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু চীনের প্রযুক্তিতে প্রবেশাধিকার নিয়ে উদ্বেগের কারণে বাইডেন প্রশাসন তা আটকে দেয়। সেই একই উদ্বেগ সৌদি আরব নিয়েও রয়েছে বলে বর্তমান ও সাবেক মার্কিন কর্মকর্তারা জানান।

অ্যারোডাইনামিক অ্যাডভাইজরির মহাকাশ বিশেষজ্ঞ রিচার্ড আবুলালাফিয়া বলেন, চুক্তি হলেও ডেলিভারি পেতে তিন থেকে চার বছর লাগবে, কারণ ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ আগেই অর্ডার করেছে।

তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলের সামরিক প্রাধান্য নিশ্চিত করতে অতীতেও সৌদিদের দেওয়া অস্ত্র ব্যবস্থায় সীমাবদ্ধতা রাখা হয়েছে। নব্বইয়ের দশকে সৌদি আরবকে যে এফ-১৫ এস স্ট্রাইক ইগল বিক্রি করা হয়েছিল, সেখানে রাডার ও ইলেকট্রনিক প্রতিরক্ষায় কিছুটা দুর্বল সংস্করণ দেওয়া হয়। এফ-৩৫ সম্পর্কে আবুলালাফিয়া বলেন, ‘এই বিমানগুলোতে দূর থেকে নিষ্ক্রিয় করে দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।’ অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র প্রয়োজনে যে কোনো সময় এগুলো বন্ধ করে দিতে পারে।

ইসরায়েল নিজস্ব সংস্করণ এফ-৩৫ আই অ্যাডায়ারে অনেক প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এনেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় তাদের তৈরি অতিরিক্ত জ্বালানি বহনক্ষমতা বিমানটির স্টেলথ ক্ষমতা অক্ষুণ্ন রেখে দীর্ঘ দূরত্বে উড্ডয়ন সম্ভব করেছে। এই পরিবর্তিত এফ-৩৫ ব্যবহার করেই ইরানে হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে হামলা চালানো সম্ভব হয়েছে।

সৌদি নিরাপত্তা বিশ্লেষক আল–গান্নাম বলেন, এ ধরনের প্রযুক্তিগত সহযোগিতার ‘স্থানীয়করণ’ই সৌদির প্রধান লক্ষ্য। তাঁর ভাষায়, যুক্তরাষ্ট্রের ‘সহায়তা ছাড়া’ সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় অস্ত্র নির্মাতা সৌদি অ্যারাবিয়ান মিলিটারি ইন্ডাস্ট্রিজ আন্তর্জাতিক মানের কোনো কোম্পানিতে পরিণত হতে পারবে না।

ড্রোন থেকে ডেটা সেন্টার: সৌদি আরবের এআই উচ্চাভিলাষ

এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব শত শত এমকিউ-৯ রিপার ড্রোন বিক্রির বিষয়েও আলোচনা চালাচ্ছে। তবে প্রতিরক্ষা খাতের অভ্যন্তরীণ সূত্র ও কর্মকর্তাদের মতে, সৌদি আরব এখন ক্রমশ বাছাই করে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম নিচ্ছে। তাই এই সফরের সময় নজর রাখার জায়গা হচ্ছে তুলনামূলক ছোট প্রতিরক্ষা কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সম্ভাব্য চুক্তি।

সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রের স্টার্টআপ শিল্ড এআই-এর সঙ্গে আলোচনা করছে। প্রতিষ্ঠানটির এআই-সমর্থিত ভি-ব্যাট ড্রোন ইতিমধ্যেই ইউক্রেনে ব্যবহৃত হচ্ছে। কোম্পানিটি আরও একটি ‘ভার্টিকাল টেকঅফ’ ড্রোন নিয়ে কাজ করছে, যা আকাশ থেকে আকাশে ও আকাশ থেকে ভূমিতে আঘাত হানতে সক্ষম অস্ত্র বহন করতে পারে।

আলাপ সম্পর্কে অবহিত এক ব্যক্তি বলেন, ‘রিয়াদ তাদের (শিল্ড এআই) বড় আগ্রহের এলাকা। সৌদিরা মাঝারি আকারের ড্রোন চাচ্ছে। তারা এমন কোলাবরেটিভ কমব্যাট এয়ারক্রাফট চায়, যা যুদ্ধবিমানের সঙ্গে পাশাপাশি উড়তে পারে; আর তারা এমন ড্রোনও খুঁজছে যা সামুদ্রিক নজরদারিতে কার্যকর।’

প্রতিবেশী সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো সৌদি আরবও মার্কিন এআই চিপের দিকে নজর দিচ্ছে। মে মাসে এনভিডিয়া ঘোষণা করেছে যে, তারা সৌদি আরবের এক ট্রিলিয়ন ডলারের পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের মালিকানাধীন এআই প্রতিষ্ঠান ‘হিউমেইন’-কে তাদের উন্নত ব্ল্যাকওয়েল চিপের হাজারো ইউনিট বিক্রি করবে।

সৌদি আরব নিজেকে এআই হাব হিসেবে তুলে ধরছে, কম দামের বিদ্যুৎ দিয়ে ডেটা সেন্টার চালানোর সুবিধা তুলে ধরে। হিউমেইন রিয়াদ থেকে দাম্মাম পর্যন্ত ডেটা সেন্টার নির্মাণ করছে; ২০৩৪ সালের মধ্যে এসব সেন্টারের মোট সক্ষমতা হবে ৬.৬ গিগাওয়াট। সৌদির আরেক এআই কোম্পানি ডেটাভল্ট লোহিত সাগর উপকূলে ৫ বিলিয়ন ডলারের একটি ডেটা সেন্টার তৈরি করছে।

যদিও মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সৌদি সফরে নানা এআই চুক্তি ঘোষণা করা হয় ছিলো বেশ জাঁকজমকের সঙ্গে, কিন্তু সেই চিপের সরবরাহ আটকে আছে, প্রকাশ্যে কোনো অগ্রগতির খবরও নেই। কিছু মার্কিন কর্মকর্তা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, সৌদি আরবে এসব মার্কিন এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে চীন হয়তো প্রবেশাধিকার পেতে পারে। যুবরাজ ওয়াশিংটনে গিয়ে এসব চুক্তির অগ্রগতি বাড়াতেই চাপ তৈরি করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

‘ভেনেজুয়েলা সংকট’ কীভাবে আন্তর্জাতিক সংঘাতের রূপ নিচ্ছে

ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—ট্রাম্প প্রশাসনের এই দাবি কি যৌক্তিক

চীন চাইলে এক দিনেই ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে পারে, কিন্তু কীভাবে

‘ডেথ সেলে’ ইমরান খান—ক্রিকেট বিশ্বের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন

ইরান ও ইসরায়েলে সমানতালে চলছে যুদ্ধের প্রস্তুতি

পাকিস্তানকে এফ-১৬ আধুনিকীকরণের প্যাকেজ, ভারতকে কী বার্তা দিতে চান ট্রাম্প

ডার্ক ফ্লিট: নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে যেভাবে চলে ইরান ও ভেনেজুয়েলার তেল পাচার

এআই চাকরি কেড়ে নিচ্ছে আমেরিকায়, কিন্তু নিয়োগ বাড়াচ্ছে ভারতে—কীভাবে

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিরাপত্তা কৌশল এশিয়ার জন্য চ্যালেঞ্জ না সম্ভাবনা

শত বছর আগে জাপানের কাছে হারের বদলা চান সি চিন পিং!