হোম > বিশ্লেষণ

ভারত-চীনের নতুন কৌশলগত সম্পর্ক: ড্রাগন ও হাতি একসঙ্গে নাচছে!

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­

চলতি জুলাইয়ের মাঝামাঝিতে চীন সফর করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। ছবি: এক্স

বিশ্ব রাজনীতির মানচিত্রে প্রাচীন দুই সভ্যতা ভারত ও চীন। দ্রুত বর্ধমান অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে দেশ দুটি নিজেদের অবস্থান সুসংহত করছে। তবে তাদের সম্পর্কের ইতিহাস জটিল—যেখানে সহাবস্থান ও সংঘাত হাত ধরাধরি করে চলে। সীমান্ত উত্তেজনা, বাণিজ্যবিষয়ক দ্বন্দ্ব এবং আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতার মধ্যেও নতুন বাস্তবতা বলছে—দুটি রাষ্ট্র এখন এক কৌশলগত ভারসাম্যের পথে হাঁটছে।

চীনের ‘ড্রাগন’ এবং ভারতের ‘হাতি’—এই দুটি প্রতীকের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক গুরুত্ব যেমন গভীর, তেমনি তাদের সম্পর্কের রূপক হিসেবেও এখন ব্যবহার হচ্ছে। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সফর, অর্থনৈতিক বিনিময় এবং বহুপক্ষীয় সহযোগিতার প্রেক্ষাপটে দেখা যাচ্ছে—এই ড্রাগন ও হাতি এখন যুদ্ধ নয়, বরং একসঙ্গে নাচার চেষ্টা করছে।

এই নৃত্য সাবধানী এবং কিছুটা জটিল। তারপরও তা দক্ষিণ এশিয়ায় এবং গোটা বৈশ্বিক দক্ষিণে এক নতুন সম্ভাবনার বার্তা বহন করে। কেন, কীভাবে এবং কোন শর্তে এই দুই পরাশক্তির মধ্যে কৌশলগত সম্পর্ক গড়ে উঠছে, তা খতিয়ে দেখা যাক।

চলতি জুলাইয়ের মাঝামাঝিতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের চীন সফরকে দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য গত ছয় বছরের মধ্যে প্রথম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এই সফরে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এবং ভাইস-প্রেসিডেন্ট হান ঝেং-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

এই বিষয়ে রাশিয়া টুডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—জয়শঙ্করের সফরে বড় কোনো চুক্তি হয়নি। তবে দুই দেশের মধ্যে আলোচনার দ্বার উন্মোচন এবং সম্ভাবনাকে পুনরুজ্জীবিত করতে এটি একটি ইতিবাচক বার্তা দেয়।

আরও বলা হয়েছে, ২০২৫ সালে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে ভারত ও চীনের মধ্যে একটি প্রতীকী মিলন ঘটেছে। দুই দেশেরই প্রাচীন সভ্যতা, দ্রুত প্রবৃদ্ধিশীল অর্থনীতি এবং বৈশ্বিক দক্ষিণে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান রয়েছে। তাই তাদের দ্বিপক্ষীয় বোঝাপড়া শুধু আঞ্চলিক নয়, বৈশ্বিক রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলে।

২০২৪ সালের অক্টোবরে কাজানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের বৈঠক দুই দেশের সম্পর্কের নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছিল। ২০২৪ সালের মধ্যেই চীন আবার ভারতের প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার হয়। আগের বছরের তুলনায় সেবার দুই বছরের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ৪ শতাংশ বেড়ে ১১৮.৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে।

তবে চ্যালেঞ্জও আছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা সীমান্ত বিরোধ। ২০২০ সালের গালওয়ান উপত্যকার সংঘর্ষ দুই দেশের মধ্যে প্রচণ্ড উত্তেজনা সৃষ্টি করেছিল। তবে ২০২৫ সালের জুনে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের চীন সফর একটি সম্ভাব্য স্থায়ী সমাধানের ইঙ্গিত দেয়। এ ছাড়া বাণিজ্যগত ও ভূরাজনৈতিক উত্তেজনাও বিদ্যমান। ভারত চীনা অ্যাপ নিষিদ্ধ করেছে, বিনিয়োগে সীমাবদ্ধতা দিয়েছে, অন্যদিকে চীনও ভারতে কিছু কাঁচামালের রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি রেখেছে।

বহুপক্ষীয় মঞ্চেও দুই দেশের ঘনিষ্ঠতা বাড়ছে। সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা (এসসিও), ব্রিকস ও জাতিসংঘে তারা যৌথভাবে কাজ করছে। আন্তর্জাতিক চাপও এ ঘনিষ্ঠতায় ভূমিকা রাখছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উভয়ের বাণিজ্য উত্তেজনা এবং রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের কারণে হোয়াইট হাউস ও ন্যাটোর চাপ দুই দেশকে আরও সংলগ্ন হতে বাধ্য করছে।

এ ছাড়া চীন-নেপাল-ভারত অর্থনৈতিক করিডর পুনর্বিবেচনা, সীমান্ত এলাকায় সেনা মহড়া পুনরায় শুরু এবং নদী ব্যবস্থাপনায় যৌথ উদ্যোগ দেশ দুটির মধ্যে ভবিষ্যৎ সহযোগিতার পথ তৈরি করতে পারে।

সব মিলিয়ে বিশ্লেষকেরা মত দিয়েছেন, চীন ও ভারতের সম্পর্ক এখন এক কৌশলগত রূপান্তরের পথে আছে। পারস্পরিক সম্মান ও স্বার্থ রক্ষা করে, বাস্তববাদী সংলাপ ও রাজনৈতিক সদিচ্ছার মাধ্যমে দুই মহাশক্তি যদি এগোয়, তবে বর্তমান বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার মধ্যে এশিয়া এক নতুন ভারসাম্যের দিকে এগোতে পারে।

দোনেৎস্ক: শান্তি-আলোচনার টেবিলে পুতিন-জেলেনস্কির অন্তিম বাধা, এর গুরুত্ব কতটা

কী হবে, যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ কেড়ে নেওয়া হয়

জাপানের ‘লৌহমানবী’ কি দেশকে চীনের সঙ্গে যুদ্ধের মুখে ঠেলে দিচ্ছেন

পুতিন-মোদির আসন্ন বৈঠকের মূলে কী আছে

শাহেনশাহ-ই-পাকিস্তান: আসিম মুনিরের সর্বেসর্বা হয়ে ওঠার স্বপ্ন কি তাসের ঘর

যে ইমরান খানকে আমি চিনতাম—শশী থারুরের স্মৃতিকথায় আশঙ্কা

যুক্তরাষ্ট্র-ভেনেজুয়েলার উত্তেজনায় রাশিয়া ও চীন কেন নীরব

দুবাইয়ে তেজস দুর্ঘটনা: সামনে আসছে ভারতের যুদ্ধবিমান কর্মসূচির পুরোনো দুর্বলতা

হাসিনার ভাগ্যে কী আছে

ইমরানকে সরানোর খেসারত: পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর নীরব অভ্যুত্থান, দেশ শাসনের নয়া মডেল