হোম > বিশ্লেষণ

ট্রাম্পকে নাচাতে বাজিকর পুতিনের চাল

পুতিন আশা করছেন, তিনি তাঁর সুবিধাজনক শর্তেই ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্পকে রাজি করাতে পারবেন। ছবি: এএফপি

রাশিয়ার ঢোল পেটানো আর কতিপয় ইউরোপীয়র হতাশা দেখে মনে হতে পারে, ভ্লাদিমির পুতিন কখনোই ইউক্রেন যুদ্ধ জয়ের এত কাছে ছিলেন না! কিন্তু আক্রমণের তিন বছর পরেও, ‘জয়’ বলতে তিনি আসলে কী বোঝাতে চান, তা স্পষ্ট নয়। তাঁর লক্ষ্যগুলোও অস্পষ্ট।

ইউক্রেনে পুতিনের ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ পরিকল্পনা করা হয়েছিল গোপনে। রুশ জনগণ তো বটেই, এমনকি সরকারের লোকেরাও অন্ধকারে ছিল! পুতিন রুশ সার্বভৌমত্ব রক্ষার কথা বলেছেন সে সময়। কিন্তু পরবর্তী পরিস্থিতি এমন কিছু বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে, যা তাঁর নিয়ন্ত্রণের বাইরে। যদিও গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সৌদি আরবে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে পুতিন প্রশাসনের আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা শুরু হয়েছে। কিন্তু এরপরও ইউক্রেনের রাজনৈতিক বাস্তবতা, ইউরোপের পুনঃসশস্ত্রীকরণ প্রচেষ্টা এবং সর্বোপরি ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর পরিকল্পনায় জল ঢেলে দিতে পারে।

ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্পের কোনো সুস্পষ্ট পরিকল্পনা নেই, অন্তত এখন পর্যন্ত তেমন কিছু প্রকাশ পায়নি। তবে তাঁর হাতে ইউক্রেন ইস্যুতে গ্রহণ করার মতো যথেষ্ট বিকল্প আছে। তিনি চাইলেই ইউক্রেনের জন্য সহায়তা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিতে পারেন, সেই সঙ্গে রাশিয়ার ওপরও নিষেধাজ্ঞা বাড়াতে পারেন। কিন্তু সম্ভবত সেসব কিছুই ঘটবে না। কারণ, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ও পুতিনের মধ্যকার কূটনৈতিক কৌশলের নতুন পর্বের মহরত হলো রিয়াদে। রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার তিন বছর পর এই প্রথম আমেরিকা ও রাশিয়ার কর্মকর্তাদের মুখোমুখি বৈঠক হলো। তাঁরা ইউক্রেন এবং ‘পারস্পরিক ভূরাজনৈতিক স্বার্থ’ নিয়ে ধারাবাহিক আলোচনা শুরু করতে রাজি হয়েছেন। তবে আসলে কী আলোচিত হবে তা অস্পষ্ট। এ ছাড়া, ট্রাম্প–পুতিন বৈঠক আয়োজনের প্রস্তুতিও শুরু হবে শিগগির, যদিও এখনো কোনো তারিখ নির্ধারণ করা হয়নি।

এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, এ ধরনের উন্মুক্ত ও অস্পষ্ট আলোচনা পুতিনের জন্য বেশ সুবিধাজনক। ট্রাম্প যেখানে এই আলোচনাকে দেখেন ‘অযৌক্তিক’ যুদ্ধের ইতি টানার উপায় হিসেবে, সেখানে পুতিন এগুলোকে সম্ভাব্য বৃহত্তর সংঘাতের একটি পর্যায় হিসেবে দেখছেন। রুশ নেতা হিসাব কষে দেখছেন, ইউক্রেন বা ন্যাটো জোটের চেয়ে তাঁর ধৈর্য ও সক্ষমতা বেশি। পোকার খেলোয়াড়ের মতো, পুতিন প্রয়োজনের সময় আত্মবিশ্বাস ও শক্তিমত্তার সঙ্গে কাজ করতে দক্ষ। কিন্তু বাস্তবে, তাঁর হাতে থাকা তাস ঠিক ততটা শক্তিশালী নয়, যতটা তিনি প্রতিপক্ষকে বিশ্বাস করাতে চান। অন্যদিকে, যুদ্ধের অবসান তাঁর জন্য নিজ দেশে নতুন জটিলতা তৈরি করতে পারে।

রাশিয়ার আলোচনার অবস্থান মূল্যায়নের যেকোনো প্রচেষ্টা অবশ্যই সামরিক পরিস্থিতি থেকে শুরু করা উচিত। দেশটির সেনাবাহিনী ইউক্রেনে খুব একটা ভালো দক্ষতা দেখাতে পারছে না। তাদের অগ্রগতি অত্যন্ত ধীর। গত বছরের জুলাই থেকে তারা পোকরোভস্ক শহর দখল করতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু দখল করতে পারেনি। তাদের ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছে ব্যাপক। রাশিয়ার বেশির ভাগ সামরিক অগ্রগতি যুদ্ধের প্রথম কয়েক সপ্তাহেই ঘটেছে। ২০২২ সালের এপ্রিলে ইউক্রেনের উত্তর থেকে রাশিয়ার পশ্চাদপসরণের পর, তারা ইউক্রেনের ১৯ দশমিক ৬ শতাংশ ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছিল। সে সময় তাদের হতাহতের সংখ্যা ছিল আনুমানিক ২০ হাজার। বর্তমানে রাশিয়া ইউক্রেনের ১৯ দশমিক ২ শতাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণে রেখেছে এবং ব্রিটিশ গোয়েন্দা মূল্যায়ন অনুসারে, তাদের মোট হতাহতের সংখ্যা ৮ লাখে পৌঁছেছে। এক পশ্চিমা কর্মকর্তা বলেন, ‘দুই দেশের সেনাবাহিনী একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে কারণ তারা থামতে পারছে না, কোনো পক্ষই আসলে চূড়ান্ত পরিণতি নির্ধারক জয় অর্জনের আশা করছে না।’

কেবল সেনা হতাহতের ঘটনাই নয়, রাশিয়ার সামরিক সরঞ্জামের ক্ষয়ক্ষতিও অবিশ্বাস্য মাত্রায় পৌঁছেছে। কয়েক দশক ধরে গড়ে তোলা সোভিয়েত আমলের সাঁজোয়া বহরের অবস্থাই তার প্রমাণ। মজুত থাকা ৭ হাজার ৩০০ ট্যাংকের অর্ধেকের বেশি ধ্বংস হয়ে গেছে। অবশিষ্ট যেগুলো আছে, তার মধ্যে মাত্র ৫০০টি দ্রুত সংস্কারের উপযোগী। এপ্রিলের মধ্যেই রাশিয়ার টি–৮০ ট্যাংকের মজুত শেষ হয়ে যেতে পারে। গত বছর রাশিয়া যতগুলো আর্টিলারি বা গোলন্দাজ ইউনিট হারিয়েছে, তার পরিমাণ আগের দুই বছরের সম্মিলিত ক্ষতির দ্বিগুণ। পেশাদার চুক্তিভিত্তিক সেনা নিয়োগের খরচ বাড়ছে, আর সাধারণ জনগণের ব্যাপক মোবিলাইজেশন (যুদ্ধের ময়দানে নামানো) রাজনৈতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। জনমত জরিপ স্পষ্ট দেখাচ্ছে, রাশিয়ার জনগণ যুদ্ধের অবসান চায়।

রাশিয়ার অর্থনীতি নিষেধাজ্ঞার ধকল সামলে নিতে পেরেছে মূলত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দক্ষতা, উচ্চ পণ্যমূল্য এবং রাজস্ব প্রণোদনার কারণে। তবে উৎপাদনশীল খাত থেকে সামরিক খাতে সম্পদ স্থানান্তরের ফলে মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছে গেছে। সুদহার বর্তমানে ২১ শতাংশ, যা দুই দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। শ্রমবাজারে দীর্ঘস্থায়ী ঘাটতি রয়ে গেছে। অর্থনৈতিক পরিসংখ্যানের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে, কারণ দেশটির পরিসংখ্যান কর্তৃপক্ষ নিয়মিত প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস সংশোধন করে থাকে।

তবে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের ফাঁস করা রাশিয়ার সেন্ট্রাল ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়েছে যে, মূল্যস্ফীতি কমার আগেই রাশিয়া মন্দার মুখে পড়তে পারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক উপপ্রধান ওলেগ ভিউগিন বলেছেন, সরকারকে খুব দ্রুত সামরিক ব্যয় হ্রাস করা অথবা লাগামহীন মূল্যস্ফীতির মধ্যে যেকোনো একটি বেছে নিতে হবে।

সার্বভৌম সম্পদ তহবিল ক্রমাগত ফুরিয়ে যাচ্ছে। সাবেক অর্থমন্ত্রী মিখাইল জাদোরনভের মতে, এই তহবিলের তারল্য মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৭ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে কমে ২ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। গত বছর রাশিয়ার রপ্তানি আয় ছিল ৪১৭ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা এবং বিশ্ব বাজারে নিম্নমুখী পণ্যমূল্যের চাপের কারণে বেশ চাপে আছে। ডিসেম্বরে এটি বছরওয়ারি হিসাবে আগের বছরের তুলনায় ২০ শতাংশ কমেছে। রুশ থিংক ট্যাংক ‘রে–রাশিয়া’—এর গবেষক কিরিল রোগভ যুক্তি দিয়েছেন, নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার বড় রপ্তানি খাত ইস্পাত ও কৃষিপণ্যের ধীর গতিতে দরপতন রাশিয়ার আগ্রাসনের সক্ষমতাকে সীমিত করবে।

রাশিয়ার এ ধরনের দুর্বলতা থাকার বিষয়টি পশ্চিমাদের মধ্যে অনেককে বিশ্বাস করাচ্ছে যে, আমেরিকা ক্রেমলিনকে যুদ্ধ বন্ধে যে ছাড় দিতে যাচ্ছে বা চাচ্ছে তা আসলে খুব একটা ভালো নয়। যদিও পশ্চিমারা ইউক্রেনকে নিশ্চিত নিরাপত্তার গ্যারান্টি দিতে সক্ষম নাও হতে পারে, তবে তারা রাশিয়াকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখতে পারে বলে যুক্তি দিচ্ছেন রোগভ।

তবে ট্রাম্পের লক্ষ্য দীর্ঘ সময় ধরে রাশিয়াকে দমিয়ে রাখা বা প্রতিহত করা নয়, বরং তিনি দ্রুত যুদ্ধের সমাপ্তির প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে মনোযোগী। এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত আমরা পুতিনকে সেই অবস্থানে নিয়ে এসেছি, যেখানে তাঁকে দেখতে চেয়েছিলাম গত তিন বছর ধরে। এখন যদি আমরা তাঁকে পরাজয়ের মুখ থেকে জয়ের সুযোগ করে দিই, তাহলে সেটা ভয়াবহ লজ্জার বিষয় হবে।’

পুতিন বিশ্বাস করেন, ট্রাম্প কেবল অস্থির প্রকৃতিরই নন, তাঁকে সহজে প্রভাবিতও করা যায়। প্রশংসা ও তাৎক্ষণিক সুবিধা দিয়ে তিনি আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে আকৃষ্ট করেছেন। গত ১১ ফেব্রুয়ারি পুতিন ২০২১ সাল থেকে রাশিয়ায় বন্দী থাকা মার্কিন নাগরিক মার্ক ফোগেলকে মুক্তি দেন। তবে পুতিনের মৌলিক দাবি অপরিবর্তিত। তাঁর এসব দাবির মধ্যে—একটি নিরপেক্ষ ইউক্রেন, যার সামরিক বাহিনী আকার ও সরঞ্জামের দিক থেকে সীমিত থাকবে এবং যেখানে পশ্চিমা সেনাদের উপস্থিতি থাকবে না। তিনি চান, ক্রিমিয়া ও অন্য চারটি অধিকৃত ইউক্রেনীয় প্রদেশকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হোক।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, পুতিন ২০২৪ সালের জুনে ইউক্রেন সংকট নিরসনে যে দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন তার মূল কথা হলো—তিনি এমন কোনো সাময়িক যুদ্ধবিরতি বা অস্ত্রবিরতি চান না, যা কার্যত রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাগুলো বহাল রাখবে এবং ইউক্রেনকে পুনরায় অস্ত্রসজ্জিত হওয়ার সুযোগ দেবে। বরং, পুতিন একটি ‘চূড়ান্ত সমাধান’ চান, যার মাধ্যমে রাশিয়ার ওপর আরোপিত পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে এবং মস্কো সামরিক শক্তি পুনর্গঠনের সুযোগ পাবে।

তবে বাস্তবতা হলো, রণক্ষেত্রের যুদ্ধ বন্ধ হলেও, পুতিন ইউরোপকে দুর্বল করার এবং রাশিয়ার প্রভাব বলয় পুনর্গঠনের চেষ্টা চালিয়ে যাবেন। ন্যাটোর ইউরোপ চ্যাপ্টারে সুপ্রিম অ্যালাইড কমান্ডারের উপদেষ্টা স্টিভ কোভিংটনের মতে, পুতিনের লক্ষ্য হলো ইউক্রেনকে গুঁড়িয়ে দেওয়া এবং ১৯৪৫—পরবর্তী মার্কিন–নেতৃত্বাধীন বিশ্বব্যবস্থাকে ধ্বংস করা।

গত বছর নিজ দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় পুতিন বলেছিলেন, ‘সমগ্র ইউরো–আটলান্টিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা আমাদের চোখের সামনে ভেঙে পড়ছে। ইউরোপ বৈশ্বিক অর্থনৈতিক বিকাশে একঘরে হয়ে পড়ছে, বিশৃঙ্খলার মধ্যে ডুবে যাচ্ছে...এবং আন্তর্জাতিক সক্ষমতা ও সাংস্কৃতিক পরিচয় হারাচ্ছে।’

পুতিন নিশ্চিতভাবেই খুশি হয়েছেন, যখন গত ১৫ ফেব্রুয়ারি মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি. ভ্যান্স একই মন্তব্যের প্রতিধ্বনি করেছেন। ২০০৭ সালে এই একই সম্মেলনে পুতিন প্রথমবারের মতো ঘোষণা করেছিলেন, তিনি পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হবেন। ক্রেমলিন অবশ্যই আশা করছে যে, রাশিয়া ঘেঁষা ডানপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো—যাদের প্রতি ভ্যান্সেরও সমর্থন আছে—ইউরোপের নির্বাচনে শক্তিশালী অবস্থান গড়ে তুলবে।

ক্রেমলিনের সামনে গ্রেমলিন

পশ্চিমা দুনিয়ায় ‘গ্রেমলিন’ মূলত লোককথায় প্রচলিত একটি দুষ্টু ও রহস্যময় প্রাণী। আধুনিক সংস্কৃতিতে, বিশেষ করে সিনেমা ও সাহিত্যে গ্রেমলিনকে ব্যাপকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, গ্রেমলিন হলো একপ্রকার কাল্পনিক, ছোটখাটো, দুষ্টু প্রকৃতির প্রাণী, যাদের কাজ হলো যন্ত্রপাতির ক্ষতি করা বা গোলমাল তৈরি করা। বিশ শতকের দিকে মূলত উড়োজাহাজ শিল্পকে কেন্দ্র করে এই কল্পকথা তৈরি হয়।

পুতিনের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হলো ক্ষমতায় টিকে থাকা। যুদ্ধ থেকে বের হয়ে আসার নিজস্ব ঝুঁকি আছে। বিশেষ করে যুদ্ধ শেষ হয়ে যাওয়ার পর লাখ লাখ সেনা ঘরে ফিরবে, তাঁদের ভরণ-পোষণ এবং বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে ক্ষমতার লড়াই তাঁকে বিচলিত করতে পারে।

ট্রাম্পের কূটনীতি নীরবে যুদ্ধের বিরোধিতা করা মধ্যপন্থীদের নতুন আশার সঞ্চার করেছে। তাঁদের রাজনৈতিক ক্ষমতা নেই, তবে এই ‘শান্তির সুবিধাভোগীরা’, যারা মূলত বেসরকারি ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদ এবং প্রযুক্তিবিদ—আশা করছেন যে, ট্রাম্প ও তাঁর দল রাশিয়ার ভবিষ্যৎ পথ পরিবর্তন করতে পারবেন। পুতিনের মুখোমুখি হতে অক্ষম এই গোষ্ঠী ট্রাম্পকে বোঝাতে চায় যে, পশ্চিমাদের সঙ্গে রাশিয়ার সংঘাত প্রশমিত করা তাঁর নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর হবে না; বরং তা আরও সুসংহত করবে।

অন্যদিকে আছে ‘যুদ্ধের সুবিধাভোগী গোষ্ঠী’। যদি সংঘাত পুতিন শাসনের ভিত্তি হয়, তবে সহিংসতা ও দুর্নীতি এর টিকে থাকার অন্যান্য উপাদান। অলিগার্কদের বিভিন্ন গোষ্ঠী নিষেধাজ্ঞার ফলে সৃষ্ট গ্রে মার্কেট বা পর্দার অন্তরালের বাজারে জ্বালানি তেল ও অন্যান্য পণ্য রপ্তানির কোটা থেকে লাভবান হয়। এক ধনকুবের রাশিয়ার এই বর্তমান অবস্থাকে ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) চোরাচালান প্রকল্পগুলোর সঙ্গে তুলনা করেছেন। রুশ অলিগার্করা তাদের লাভজনক ব্যবসা এত সহজে ছাড়বে না। নিরাপত্তা সংস্থাগুলো একদিকে এমন ‘ফিফথ কলাম’ বা ‘পঞ্চম স্তম্ভের’ সন্ধান করবে যারা শান্তির পক্ষে, আবার অন্যদিকে চরমপন্থী জাতীয়তাবাদীদেরও খুঁজবে, যারা যেকোনো সমঝোতাকে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখবে।

ট্রাম্প ‘হত্যাযজ্ঞ বন্ধ’ করতে চান এবং এ বিষয়ে তিনি সঠিক অবস্থানেই আছেন। যদি যুদ্ধবিরতি ইউক্রেন পুনর্গঠনের সুযোগ দেয়, ইউরোপের প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ায় এবং রাশিয়ার দুর্বল অর্থনীতির ওপর পশ্চিমা কিছু নিষেধাজ্ঞা বজায় থাকে, তবে তা পুতিনের উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে ব্যর্থ করলেও করতেও পারে। তবে পুতিন ‘বাজি ধরছেন’ যে, তিনি ইউক্রেনের চেয়ে দীর্ঘ সময় লড়াই চালিয়ে যেতে পারবেন, অথবা তিনি এমন একটি সমঝোতা ট্রাম্পের মাধ্যমে আদায় করতে পারবেন, যা রাশিয়াকে বিশ্ব অর্থনীতিতে পুনরায় যুক্ত হওয়ার সুযোগ দেবে, ইউক্রেনকে বিভক্ত ও আধা–ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করবে এবং ইউরোপকে এতটাই হতবাক করে দেবে যে, তারা নিজেদের রক্ষা করার সক্ষমতা হারাবে!

অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান

দোনেৎস্ক: শান্তি-আলোচনার টেবিলে পুতিন-জেলেনস্কির অন্তিম বাধা, এর গুরুত্ব কতটা

কী হবে, যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ কেড়ে নেওয়া হয়

জাপানের ‘লৌহমানবী’ কি দেশকে চীনের সঙ্গে যুদ্ধের মুখে ঠেলে দিচ্ছেন

পুতিন-মোদির আসন্ন বৈঠকের মূলে কী আছে

শাহেনশাহ-ই-পাকিস্তান: আসিম মুনিরের সর্বেসর্বা হয়ে ওঠার স্বপ্ন কি তাসের ঘর

যে ইমরান খানকে আমি চিনতাম—শশী থারুরের স্মৃতিকথায় আশঙ্কা

যুক্তরাষ্ট্র-ভেনেজুয়েলার উত্তেজনায় রাশিয়া ও চীন কেন নীরব

দুবাইয়ে তেজস দুর্ঘটনা: সামনে আসছে ভারতের যুদ্ধবিমান কর্মসূচির পুরোনো দুর্বলতা

হাসিনার ভাগ্যে কী আছে

ইমরানকে সরানোর খেসারত: পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর নীরব অভ্যুত্থান, দেশ শাসনের নয়া মডেল