হোম > বিশ্লেষণ

ইউক্রেনকে মিগ-২৯ দিতে চায় পোল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি কেন

জাহাঙ্গীর আলম

রুশ বাহিনীর সঙ্গে পেরে উঠতে হলে এই মুহূর্তে ইউক্রেনীয়দের দরকার যুদ্ধবিমান। ইউক্রেনের বিমানবাহিনী যে পরিমাণে ও মানের যুদ্ধবিমান রয়েছে তা যথেষ্ট নয়।

ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে অস্ত্র ও অর্থ সহায়তা পাচ্ছে ইউক্রেন। এর মধ্যে নতুন কোনো যুদ্ধবিমান এখনো আসেনি। যদি আসেও সেটি হতে হবে এমন বিমান যা উড্ডয়নের জন্য ইউক্রেনের পাইলটরা আগেই প্রশিক্ষণ পেয়েছেন। তার মানে তাদের দরকার রাশিয়ার তৈরি বিমান, মূলত মিগ-২৯ ফাইটার। পূর্ব ইউরোপের কিছু দেশের বহরে মিগ রয়েছে। সপ্তাহখানেক আগে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছিল, এই ব্যবহৃত বিমানগুলো থেকে কিছু ইউক্রেনকে দেওয়া হতে পারে। 

গত মঙ্গলবার পোল্যান্ড বলেছে, ২৮টি মিগ-২৯ ইউক্রেনকে দিতে চায়। আর এটি দেওয়া হবে জার্মানিতে মার্কিন বিমানঘাঁটির মাধ্যমে। তবে পেন্টাগন সরাসরি সে প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে। যদিও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেছেন, এই প্রস্তাবে কীভাবে সাড়া দেওয়া যায় সেটি তাঁরা দেখবেন। পোল্যান্ডের আশা, ইউক্রেনকে দেওয়ার ফলে যে ঘাটতি তৈরি হবে যুক্তরাষ্ট্র সেটি পূরণে আরও উন্নত এফ-১৬ ফাইটার সরবরাহ করবে। 

এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-পোল্যান্ডের মধ্যে একটা টানা পোড়েন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ওয়ারশতে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের ঝটিকা সফর তেমন ইঙ্গিতই দেয়। 

ইউক্রেন সংকটের মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে পোল্যান্ড। যুদ্ধ শুরুর আগেই উত্তেজনার মধ্যে সাইবার হামলার শিকার হয়েছে পোল্যান্ডের অন্তত দুটি ব্যাংক। এসব ব্যাংকেই রয়েছে ইউক্রেনের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর অ্যাকাউন্ট। যুদ্ধ শুরুর পর সবচেয়ে বেশি শরণার্থী নিতে হচ্ছে পোল্যান্ডকে। ইউক্রেনের সঙ্গে ৩৩২ মাইল সীমান্ত তাদের। সামরিক সজ্জার দিক থেকেও এই অঞ্চলে পোল্যান্ড গত কয়েক বছরের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। পূর্ব ইউরোপে প্রতিরক্ষা খাতে সর্বাধিক বাজেটের দেশ এখন পোল্যান্ড। গত জানুয়ারিতে পূর্ব ইউরোপে সর্বাধিক সংখ্যক মার্কিন সেনা পাঠানো হয়েছে এই দেশেই। মস্কোর বিরুদ্ধে পশ্চিমের প্রতিরক্ষার ঘুঁটি হয়ে উঠেছে পোল্যান্ড। 

বর্তমান সংকটের বহু আগেই রাশিয়ার সঙ্গে দীর্ঘ বিরোধে জড়িত পোল্যান্ড। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে ১২৩ বছর ধরে পোল্যান্ড শাসন করেছে রাশিয়া। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় রাশিয়া আবার পোল্যান্ড দখল করে। ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত পোল্যান্ডে ছিল রাশিয়ার পুতুল কমিউনিস্ট সরকার। পুতিনের আঞ্চলিক অবস্থানের বিরুদ্ধে ওয়ারশর আপত্তির কারণে দুই দেশ বিবাদে জড়ায়। ১৯৯৯ সালে ন্যাটোতে যোগ দেয় পোল্যান্ড। সর্বশেষ ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের পশ্চিমমুখী অবস্থানকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে দেশটি। 

পোল্যান্ডকে ইউরোপে রাশিয়ার উপস্থিতির বিরুদ্ধে পশ্চিমের দূরতম একটি সম্প্রসারণ বলা যেতে পারে। যেখানে রাশিয়ার কালিনিনগ্রাদ এক্সক্লেভ এবং বেলারুশ কার্যকরভাবে একটি রুশ প্রক্সি রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। বেলারুশের রুশপন্থী নেতা আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো ২০২০ সালে বিতর্কিত ভোটে জিতে দেশব্যাপী বিক্ষোভের জন্ম দেন। তখন তিনি সরাসরি রাশিয়ার সমর্থন চেয়েছিলেন। আর তখন লুকাশেঙ্কোবিরোধীদের সমর্থন দিয়েছিল পোল্যান্ড। 

এরপর থেকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন পোল্যান্ডকে হুমকি দেওয়ার জন্য বেলারুশকে ব্যবহার করছেন। ২০২১ সালে পোল্যান্ড ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে কৃত্রিম অভিবাসী সংকট তৈরির পেছনেও লুকাশেঙ্কো রাশিয়ার সমর্থন পেয়েছিলেন বলে ধারণা করা হয়। 

ফলে এই মুহূর্তে পোল্যান্ডের সঙ্গে পশ্চিমের আরও ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। ইউক্রেনের সংকটের মধ্যে পোল্যান্ড লাভবান হতে পারে বলেও ধারণা করছেন বিশ্লেষকেরা। 

রাশিয়ার অগ্রযাত্রা ঠেকাতে পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেনকে অত্যাধুনিক অস্ত্র সরবরাহ করছে। ট্যাংক ও বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র পেয়েছে ইউক্রেন। অবশ্য রাশিয়া এই অস্ত্র সরবরাহকারী দেশের বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেনি। 

তবে ইউক্রেনকে দ্রুত যুদ্ধবিমান পাঠানোর উদ্যোগ কয়েক ধাপ আগ বাড়িয়ে যাওয়ার শামিল। এ ক্ষেত্রে পোল্যান্ড কিন্তু ক্রেমলিনের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে যথেষ্ট নার্ভাস। এই পদক্ষেপ কিয়েভে যুদ্ধবিমান পেতে সাহায্য করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে সাব্যস্ত করা হতে পারে। পরিস্থিতি অত্যন্ত স্পর্শকাতর, কিন্তু কৌশলটি বেশ স্থূলই বলা চলে। 

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সতর্ক করে বলেছে, অন্য দেশের ঘাঁটিতে থাকা যুদ্ধবিমান রাশিয়ার লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করলে সেটি সেই দেশও এই সামরিক সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে বলে বিবেচিত হতে পারে। 

তবে যুক্তরাষ্ট্র যদি তাদের ঘাঁটি থেকে যুদ্ধবিমান ইউক্রেনে স্থানান্তর করে, তাহলে রাশিয়া সম্ভবত এই যুদ্ধে আমেরিকানদের সরাসরি টেনে আনতে চাইবে না। 

এখনো পর্যন্ত এই বিশ্বাস রাখা যেতে পারে যে, রাশিয়া পোল্যান্ডের বিরুদ্ধে সামরিকভাবে প্রতিশোধ নিতে চাইবে না। কারণ দেশটি ন্যাটোর সদস্য। তবে রাশিয়া ওয়ারশর বিরুদ্ধে অন্যান্য পদক্ষেপ বিবেচনা করতে পারে। হতে পারে বিশেষ অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা। 

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো—নিজেদের সংগঠিত ও জানবাজী রাখা প্রতিরক্ষা বাহিনীর সঙ্গে পশ্চিমের দেওয়া ট্যাংক ও বিমানবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র থাকা সত্ত্বেও, রুশ বাহিনী এগিয়েছে মূলত স্থলপথে। 

ইউক্রেনের বিমানবাহিনীর যতটুকু শক্তি-সামর্থ্য তা নিয়েই যদি ময়দানে টিকে থাকে তাহলে শিগগিরই রাশিয়া আকাশ থেকে হামলা শুরু করতে পারে। আর তখন আক্রমণ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারবে না ইউক্রেন। বহরের নতুন বিমান যুক্ত করতে পারলে ইউক্রেনের আকাশসীমা অন্তত কিছু সময়ের জন্য হলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ থাকবে। আর রাশিয়াও কিয়েভে বিমান হামলার বিষয়ে দুবার ভাবতে বাধ্য হবে। 

বর্তমানে ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান সমস্যা হলো আর্টিলারিতে রাশিয়ার প্রাধান্য। আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করার প্রয়াসে কয়েক দিন ধরে খারকিভ এবং মারিউপোলের মতো শহরগুলোতে অব্যাহতভাবে গোলাবর্ষণ করছে রাশিয়া। 

ইউক্রেন তার বিমানগুলো আকাশ থেকে শত্রুর কনভয়ে আক্রমণ করার জন্য ব্যবহার করার চেষ্টা করতে পারে। অবশ্য এমন সিদ্ধান্ত বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হবে কারণ, রাশিয়া গত কয়েক দিনে বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

কোন স্বার্থে মুসলিমপ্রধান সোমালিল্যান্ডকে সবার আগে স্বীকৃতি দিল ইসরায়েল

নাইজেরিয়ায় কোন আইএসকে আঘাত করল মার্কিন বাহিনী

নাইজেরিয়ায় কেন হামলা চালাল মার্কিন বাহিনী, খ্রিষ্টান নিপীড়নের সঙ্গে এর সম্পর্ক কী

‘ভেনেজুয়েলা সংকট’ কীভাবে আন্তর্জাতিক সংঘাতের রূপ নিচ্ছে

ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—ট্রাম্প প্রশাসনের এই দাবি কি যৌক্তিক

চীন চাইলে এক দিনেই ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে পারে, কিন্তু কীভাবে

‘ডেথ সেলে’ ইমরান খান—ক্রিকেট বিশ্বের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন

ইরান ও ইসরায়েলে সমানতালে চলছে যুদ্ধের প্রস্তুতি

পাকিস্তানকে এফ-১৬ আধুনিকীকরণের প্যাকেজ, ভারতকে কী বার্তা দিতে চান ট্রাম্প

ডার্ক ফ্লিট: নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে যেভাবে চলে ইরান ও ভেনেজুয়েলার তেল পাচার