হোম > নারী

প্রতিরোধ গড়ার পূর্বশর্ত সমস্যার উৎস চেনা

ফিচার ডেস্ক

নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে আইন ও কাঠামো শক্তিশালী হওয়া অপরিহার্য। তবে শুধু আইনের ওপর নির্ভর করে নারীর প্রতি ন্যায়বিচার ও সমঅধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। সহিংসতা প্রতিরোধে যেমন সচেতনতা ও প্রতিরোধ গড়ে তোলা প্রয়োজন, তেমনি জরুরি সহিংসতার মূল উৎস চিহ্নিত করা। জানতে হবে কোথায়, কীভাবে, কারা ও কেন এই সহিংসতায় জড়াচ্ছে।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ সম্প্রতি প্রকাশিত ‘বাংলাদেশে নারী ও কন্যা নির্যাতন চিত্র-২০২৪’ শীর্ষক সমীক্ষা প্রতিবেদনে দেশের নারী ও কন্যাশিশুর ওপর সংঘটিত সহিংসতার ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। আট ধরনের সহিংসতার তথ্য পর্যালোচনা করে তৈরি এই সমীক্ষা প্রতিবেদন তুলে ধরেছে বর্তমান বাস্তবতা।

সহিংসতার ধরন ও মাত্রা

প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৪ সালে দেশে মোট ২ হাজার ৫২৫ নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে নারী ১ হাজার ৪১৯ এবং শিশু ১ হাজার ১০৬ জন। এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭৯০ জনে। যে আটটি সহিংসতার কথা বারবার এসেছে প্রতিবেদনে, সেগুলো হলো ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ, ধর্ষণের চেষ্টা, উত্ত্যক্তকরণ ও যৌন হয়রানি, যৌতুক, বাল্যবিবাহ, গৃহকর্মী নির্যাতন এবং সাইবার অপরাধ। প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা বলছে, ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির কন্যাশিশুরা যৌন সহিংসতার শিকার হচ্ছে বেশি। এসব অপরাধে জড়াচ্ছে অল্প বয়সী তরুণেরাও।

কে কোথায় কীভাবে ঝুঁকিতে

সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—

» স্কুল বা কলেজে যাতায়াতের পথে উত্ত্যক্ত ও ধর্ষণের ঝুঁকি বেশি।

» সহপাঠী বা প্রেমিকের দ্বারা ধর্ষণের শিকার সর্বোচ্চ।

» সামাজিক পরিসরে সহিংসতার আশঙ্কা বেড়েছে গণপরিবহনে।

» রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এলাকায় প্রভাব খাটিয়ে ধর্ষণ বা উত্ত্যক্তের ঘটনা বেশি ঘটায়।

» নিজের বা প্রতিবেশী বাড়ি শিশুদের জন্য বিপজ্জনক জায়গা হয়ে উঠেছে।

বয়সভিত্তিক ও পেশাভিত্তিক ঝুঁকি

১৮ বছরের নিচে কন্যাশিশুর ধর্ষণের হার ৬০ দশমিক ১ শতাংশ এবং নারীদের ক্ষেত্রে এই হার ৪৩ দশমিক ৪ শতাংশ। যৌতুক ও দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হওয়ার আশঙ্কা বেশি প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের মধ্যে। ঘটনার শিকার হওয়া নারীদের মধ্যে পেশাভিত্তিক কোনো পার্থক্য নেই। গৃহিণী, চাকরিজীবী, ষাটোর্ধ্ব নারী থেকে শুরু করে শিক্ষার্থী—সবাই সহিংসতার শিকার হচ্ছেন।

প্রতিরোধের জন্য তৃণমূলে নজর

এই পরিসংখ্যান বলছে, ধর্ষণসহ অন্যান্য সহিংসতার মূল ক্ষেত্র গ্রাম বা উপজেলা পর্যায়। উপজেলা পর্যায়ে ধর্ষণের ঘটনার হার ৫৭ শতাংশ। মেট্রোপলিটনে সেই হার ১২ শতাংশ। অপরাধে জড়াচ্ছে মূলত ২১ থেকে ২৫ বছর বয়সী তরুণেরা। ২০২৪ সালে ধর্ষণের ঘটনা ছিল ৩৬৪টি। এ বছরের প্রথম ছয় মাসে তা দাঁড়িয়েছে ৩৫৪টিতে। এই প্রবণতা ভয়াবহতার দিকেই ইঙ্গিত করে।

নারী ও কন্যাশিশুর বিরুদ্ধে সহিংসতা শুধু একটি আইনগত সমস্যা নয়; এটি সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও নৈতিক অবক্ষয়ের প্রতিফলন।

আছে ইতিবাচক দিক

সমীক্ষার ফল বিশ্লেষণ শেষে কিছু ইতিবাচক দিক উল্লেখ করা হয়। বলা হয়েছে, ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা, মামলা তুলে নিতে চাপ সৃষ্টি করা ও সালিসের মাধ্যমে অভিযুক্ত ব্যক্তির শাস্তি নিশ্চিতের পরিবর্তে আপসের চেষ্টার বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিবাদের তৎপরতা ও উদ্যোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। বেড়েছে ভুক্তভোগীর মামলা করার প্রবণতা।

বড়দিনের বিখ্যাত গানগুলোর নেপথ্যের নারীরা

উদ্যোক্তা মেলা: সংখ্যা কমলেও আশাবাদী নারী উদ্যোক্তারা

রোজের ফুটে ওঠার গল্প

আন্তর্জাতিক নারী: অন্ধকার আকাশ যাঁর ল্যাবরেটরি

অধিকারের পক্ষে মার্থার লড়াই

‘মেয়েদের ফুটবলে বাধা দিতে খোঁড়া হয়েছিল মাঠ’

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য মন্ত্রণালয় ও সংসদে আসনের দাবি

জটিল প্রক্রিয়ার কারণে অনলাইনে হয়রানির শিকার হয়েও অভিযোগ করতে পারেন না নারীরা

ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারে শাহেলীর লড়াই

১১ মাসে নির্যাতনের শিকার ২,৫৪৯ নারী ও কন্যাশিশু