হোম > নারী

পরিবেশবান্ধব উদ্যোক্তা জান্নাতুল

মন্টি বৈষ্ণব, ঢাকা

বড় হয়ে কে কী হবেন—স্বপ্নের সেই অঙ্কুর শৈশবেই পাখা মেলতে শুরু করে অনেকের। কেউ চিকিৎসক, কেউ প্রকৌশলী, কেউ আবার সব ছেড়ে নতুন কিছু করারও স্বপ্ন দেখেন। জীবনযুদ্ধের লড়াইয়ে কেউ সেসব স্বপ্ন সফল করতে পারেন, কেউবা একেবারেই ভিন্ন কোনো পেশায় যুক্ত হয়ে যান।

স্বপ্নের শুরু
মুন্সিগঞ্জের জান্নাতুল ফেরদাউস রিক্তা পেশায় একজন স্থপতি। ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত মুন্সিগঞ্জেই পড়ালেখা এবং এরপর নারায়ণগঞ্জে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। ২০১৮ সালে তিনি স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের স্থাপত্য বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। এরপর চাকরি করেন প্রায় তিন বছর। যদিও সংসার সামলে শেষ পর্যন্ত ৯টা-৫টা অফিসে নিজেকে আবদ্ধ রাখতে পারেননি। তাই চাকরিকে বিদায় জানিয়ে শুরু করেন ‘ভূমি আর্টিজান’-এর যাত্রা, ২০২০ সালের আগস্টের শুরুর দিকে। এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য পিছিয়ে থাকা কারিগরদের একত্র করে তাঁদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা।

ব্যক্তিগতভাবে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলতে পছন্দ করেন জান্নাতুল। এটা তাঁর শখও বলা যেতে পারে। ২০২০ সালে করোনাকালে জীবনযুদ্ধে টিকে থাকা অনেকের পক্ষে কঠিন ছিল। সেই সময়ে তিনি একজন বেতের কারিগরকে খুব কাছ থেকে দেখেন। ওই কারিগর কাজ জানতেন, কিন্তু তখন তাঁর হাতে কোনো কাজ ছিল না, ঋণে জর্জরিত ছিলেন। তাঁকে দেখে জান্নাতুল দেশের সুবিধাবঞ্চিত পিছিয়ে থাকা কারিগরদের নিয়মিত আয়ের উৎস খোঁজার চিন্তা করেন। যেহেতু তিনি একজন স্থপতি, তাই তিনি গ্রাম থেকে গ্রামে ছুটে বেড়ান কারিগর খুঁজতে। এমন কারিগর খুঁজতে থাকেন, যাঁদের ওপর ভরসা করে তাঁর মেধা আর পরিশ্রমকে বিনিয়োগ করতে পারবেন।

পরিবেশবান্ধব উপকরণ
আমাদের দেশে নানান অজুহাতে কেটে ফেলা হচ্ছে গাছ। একের পর এক উজাড় হয়ে যাচ্ছে বন। স্থপতি জান্নাতুল চান তাঁর উদ্যোগের পণ্য হবে পরিবেশবান্ধব, দেশীয় কারিগর এবং কাঁচামালে তৈরি। তিনি বন উজাড় করে আসবাব তৈরি না করে কাঠের বিকল্প পরিবেশবান্ধব ও দীর্ঘস্থায়ী জিনিসের খোঁজ করতে থাকেন।

অনেক চিন্তাভাবনার পর কাঠের বিকল্প হিসেবে বাঁশ ও বেতকে গ্রহণযোগ্য বলে মনে করেন তিনি। পাশাপাশি পোড়ামাটির জিনিসপত্রে বাঁশ-বেতের শৈল্পিক কারুকার্য উপস্থাপনের চেষ্টা করেন। জান্নাতুল মনে করেন, একজন স্থপতি ও উদ্যোক্তা হিসেবে দেশীয় কাঁচামাল এবং কারিগরের তৈরি পণ্য দেশে ও দেশের বাইরে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছেন তিনি। এটাই তাঁর সফলতা। 

অনুপ্রেরণা
স্থাপত্য পেশায় অনেকেই ভবনের নকশা বা স্পেস ডিজাইন করেন। এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ হলো আসবাব। এই স্পেস ঠিকমতো ব্যবহারের উপযোগী করতে হলে তার সঙ্গে মিল রেখে আসবাব ও গৃহসজ্জাসামগ্রী দরকার। আসবাব ডিজাইন করা মূলত স্থাপত্য পেশারই একটি অংশ। বহির্বিশ্বের পাশাপাশি দেশেও বহু স্বনামধন্য স্থপতি রয়েছেন, যাঁরা স্থাপত্যচর্চার পাশাপাশি চিত্রকর্ম, ফটোগ্রাফি, সিনেমাটোগ্রাফি, চলচ্চিত্র নির্মাণ ইত্যাদিতে জড়িত আছেন। জান্নাতুল তাঁদের দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে আসবাব ও তাঁর গৃহসজ্জাসামগ্রীর নকশা করতে শুরু করেন।

ভবিষ্যতের চিন্তা
বাঁশ, বেত ও মাটি নিয়ে কাজ করেন বলে পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে শুরুর দিকে অনেক নেতিবাচক কথা শুনতে হয়েছে। কিন্তু সেসব কথা জান্নাতুল খুব একটা আমলে নেননি। তিনি মনে করেন, বাঁশ-বেত-মাটি যাঁরা অবহেলা করেন, তাঁদের জীবনবোধে ঘাটতি আছে। কারণ, সুদীর্ঘকাল থেকে এসব আমাদের জীবনাচরণের সঙ্গে জড়িত।

ইতিমধ্যে বাঁশ, বেত ও মাটি দিয়ে তৈরি বিভিন্ন পণ্যের দুটি ডিসপ্লে কর্নার তৈরি করেছেন জান্নাতুল। বাঁশ, বেত ও মাটির পণ্যের পাশাপাশি পাট নিয়ে কাজ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ভবিষ্যতে তিনি একটি আর্ট অ্যান্ড ক্র্যাফট স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে চান। যেখান থেকে কারিগরি শিক্ষা নিয়ে আগামী প্রজন্মের নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হবে। ‘ভূমি আর্টিজান’কে দেশে এবং দেশের বাইরে একটি ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান। যেখানে একই ছাদের নিচে পরিবেশবান্ধব গৃহসজ্জাসামগ্রী এবং দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার্য সব তৈজসপত্র পাওয়া যাবে।

বড়দিনের বিখ্যাত গানগুলোর নেপথ্যের নারীরা

উদ্যোক্তা মেলা: সংখ্যা কমলেও আশাবাদী নারী উদ্যোক্তারা

রোজের ফুটে ওঠার গল্প

আন্তর্জাতিক নারী: অন্ধকার আকাশ যাঁর ল্যাবরেটরি

অধিকারের পক্ষে মার্থার লড়াই

‘মেয়েদের ফুটবলে বাধা দিতে খোঁড়া হয়েছিল মাঠ’

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য মন্ত্রণালয় ও সংসদে আসনের দাবি

জটিল প্রক্রিয়ার কারণে অনলাইনে হয়রানির শিকার হয়েও অভিযোগ করতে পারেন না নারীরা

ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারে শাহেলীর লড়াই

১১ মাসে নির্যাতনের শিকার ২,৫৪৯ নারী ও কন্যাশিশু