হোম > ল–র–ব–য–হ

পাথরগুলো এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যায় কীভাবে

ইশতিয়াক হাসান

পৃথিবীর সবচেয়ে উষ্ণ ও শুকনো জায়গাগুলোর একটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডেথ ভ্যালি। বছরে দুই ইঞ্চিরও কম বৃষ্টিপাত হয় এখানকার ঊষর জমিতে। বুঝতেই পারছেন জায়গাটায় মানুষের পক্ষে বাস করা কঠিন। তার পরও ডেথ ভ্যালি ন্যাশনাল পার্কে কাজ করেন এ রকম কিছু মানুষ ও পর্যটকদের জন্য যে কয়েকটি হোটেল আছে, সেগুলোর কর্মচারীরা থাকেন এখানে। এ ছাড়া আসেন পর্যটকেরা। আর এখানে দেখা মেলে গরমের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে এমন কিছু বন্যপ্রাণীর।

ডেথ ভ্যালির সবচেয়ে বড় আকর্ষণগুলোর একটি জীবিত কোনো প্রাণী নয়, বরং পাথর। এগুলোর দেখা পেতে হলে আপনাকে যেতে হবে রেইসট্র্যাক প্লায়ায়। ডেথ ভ্যালি ন্যাশনাল পার্কের ফার্নেস ক্রিক ভিজিটর সেন্টার থেকে মোটামুটি ৮০ মাইল পথ পেরোতে হবে গাড়িতে চেপে। তবেই পৌঁছে যাবেন মোটামুটি মাইল তিনেক লম্বা রেইসট্র্যাক প্লায়ায়। আশ্চর্যজনক হলেও এখানকার পাথরগুলো জায়গা বদলায়, মানে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় সরে যায়।

আবার এগুলো যে একেবারে ছোট পাথর, তা-ও নয়। কখনো কখনো এ ধরনের পাথরের ওজন ২০০ কেজির বেশিও হয়। এগুলো যে খুব আস্তে-ধীরে জায়গা বদলায় তা নয়। এ ধরনের কোনো কোনো পাথর এক মিনিটে ১৫ ফুট পর্যন্ত চলে যায়। এভাবে ১০০০ ফুট পর্যন্ত দূরে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে। তবে সমস্যা হলো, কেউ এদের নড়তে বা চলাচল করতে দেখার বিষয়টি একেবারেই বিরল। তাই বিষয়টা নিয়ে রহস্য ডালপালা মেলতে থাকে।

রেইসট্র্যাক প্লায়ায় এমন কয়েক ডজন পাথরের দেখা পেতে পারেন। একেবারে কম্পিউটারের মাউসের আকারের পাথর থেকে মাইক্রোওয়েভ বা তারও বড় আকারের পাথরও পাবেন। প্রতিটিই বালুর ওপর দেখবেন ট্রেইল রেখে গেছে। কোনোটা সোজা, কেবল কয়েক ফুট লম্বা। কোনোটা আবার একটা ফুটবল মাঠের সমান দূরত্ব পেরিয়েছে, সেটা সোজা না গিয়ে হয়তো হালকা বাঁক কিংবা কড়া মোচর নিয়েছে।

এই পাথরগুলোর এভাবে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়ার কারণে এদের নাম হয়ে গেছে সেইলিং স্টোন। আজ থেকে ১০০ বছরেরও বেশি আগে প্রথম এসব পাথরের ব্যাপারে জানতে পারে মানুষ। সালটা ১৯১৫, জোসেফ ক্রুক নামের একজন খনিজ সন্ধানী জাতীয় উদ্যানের রেইসট্র্যাক পায়া এলাকায় যান খনিজ অনুসন্ধানে। এ সময়ই যা দেখলেন তাতে রীতিমতো স্তম্ভিত হয়ে যান।

সেইলিং বা ঘোরাফেরা করে এমন পাথরের কথা বলেন ফিরে এসে তিনি। এগুলোর কোনো কোনোটা দুই ফুট চওড়া। এগুলো নিজে থেকেই এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় সরে গেছে এমনটাই মনে হয় তাঁর। গল্প ছড়িয়ে পড়লে দেশের নানা প্রান্ত থেকে ভূতাত্ত্বিকেরা ভিড় জমাতে থাকেন এমন ঘুরে বেড়ানো পাথরদের একনজর দেখতে। মরুভূমির মধ্যে এভাবে চলাফেরা করে বেড়ানোয় এসব পাথরের নাম দেন তাঁরা সেইলিং স্টোন।

মজার ঘটনা, রহস্যজনকভাবে এই পাথরগুলো সরার সময় বালুতে চিহ্ন রেখে যায়। ওপর থেকে দেখলে এদের এই চলায় আরও কিছু আশ্চর্য বৈশিষ্ট্য চোখে পড়ে। মরুভূমির মধ্যে এলোমেলো ঘুরে বেড়ানোর বদলে এগুলো যেন একটি আরেকটির পদাঙ্ক অনুসরণ করে। কখনো কখনো একই দিকে বাঁক নেয় এমনকি বালুর মধ্যে একটির সমান্তরালে আরেকটি যায়।

এই পাথরগুলোর চলার গতিও চমক জাগানো। দিনে কয়েক ইঞ্চি এগোনোর বদলে মিনিটে ১৫-১৬ ফুট গতিতে এগিয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে এদের বেলায়। বলা চলে, যুগের পর যুগ ধরে এখানকার পাথরের অদ্ভুত এই আচরণ ভূতাত্ত্বিকদের বিহ্বল করে রাখে।

কোনো রহস্যের সমাধান না হলে নানা ব্যাখ্যাই মেলে। চুম্বকের প্রভাবকে শুরুতে এর জন্য দায়ী করেন অনেকে। তবে এখানকার পাথরের মধ্যে চৌম্বক পদার্থের অনুপস্থিতি তত্ত্বটাকে বেশি দূর এগোতে দেয়নি। অতি উৎসাহী কেউ কেউ দাবি করলেন, ভিনগ্রহের প্রাণীরাই এসব পাথরের জায়গা বদলের পেছনে আছে। কোনো কোনো গবেষক ঘূর্ণি বাতাস, পুরু বরফের চাঁই, ঝোড়ো বাতাসের মতো বিষয়কে দায়ী করলেন। তবে শেষ পর্যন্ত তত্ত্বগুলো বিজ্ঞানের আলোকে সত্যি প্রমাণ করা গেল না।

অবশ্য একপর্যায়ে এই পাথরগুলোর আশ্চর্য আচরণের যুক্তিসংগত ব্যাখ্যা মেলে। একাধিক গবেষকের থেকেই এটা এসেছে। যেমন পেলিওবায়োলজিস্ট রিচার্ড নরিস ও তাঁর চাচাতো ভাই জিম নরিস ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে প্লায়া এলাকা ভ্রমণ করে একটা ছোট পুকুরের সন্ধান পান। এর পরে তাঁরা পাথর নড়তে দেখেন। তাঁরা আবিষ্কার করেন, পাথর নড়ার পেছনে কয়েকটি বিষয় ভূমিকা রাখে। বৃষ্টির কারণে গর্তের মধ্যে পানি জমে ছোট পুকুরের জন্ম হয়। রাতে তাপমাত্রা কমায় এই পানি জমে বরফে পরিণত হয়। সূর্যের তাপে এই বরফ পরে গলতে শুরু করে। তখন পাতলা বরফের চাঙর বাতাসে বালুর ওপর দিয়ে চলতে শুরু করে। এগুলোই সামনে থাকা পাথরকে ধাক্কা দেয়। এতে এগুলো মিনিটে দুই থেকে ছয় মিটার পর্যন্ত জায়গা বদলায়। এ সময় পাথর সরার ফলে নরম মাটিতে চিহ্ন রয়ে যায়।

২০১৪ সালে টাইম–ল্যাপস আলোকচিত্রের মাধ্যমেও বিজ্ঞানীরা মোটামুটি একই ফলাফল পান। এতেও উঠে আসে বরফ, পানি আর বাতাসের কারণে এ ঘটনা ঘটে। ২০১৪ সালের শীতে যেমন বৃষ্টি ছোট্ট এক পুকুরের জন্ম দেয়। রাতে এটি জমে যায়। পরের দিন দুপুরের রোদে বরফটা গলতে শুরু করে পাতলা এক চাঙরে পরিণত হয়। হালকা বাতাসে এটা ভেঙে কয়েক টুকরো হয়ে পাথরদের ঠেলে সামনের দিকে নিতে থাকে।

এ ধরনের ঘটনা সাধারণত শীতে বৃষ্টির পর ঘটে। ডেথ ভ্যালি যেহেতু খুব শুকনো এক জায়গা, তাই এ ধরনের ঘটনা দুষ্প্রাপ্য। দেখা তো আরও কঠিন। ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারিতে যেতে পারেন। বৃষ্টির পূর্বাভাস আছে কি না, তাও জেনে যেতে হবে। তবে একটি পাথরকে নড়তে দেখার সম্ভাবনা খুব কম। তবে শীত মৌসুমে গেলে নড়ার ট্রেইল বা চিহ্ন দেখতে পাবেন তাতে সন্দেহ নেই।

ডেথ ভ্যালির পাথর রহস্যের মোটামুটি একটা সমাধানে পৌঁছা গেলেও পর্যটক ও বিজ্ঞানীদের জন্য এখনো এটা এক বড় বিস্ময়। তা ছাড়া ডেথ ভ্যালি জায়গাটার ভূপ্রকৃতি একেবারেই আলাদা। ক্যালিফোর্নিয়ার প্রচণ্ড উষ্ণ জায়গাটিতে একটিবার ভ্রমণ করতেই পারেন, সেই সঙ্গে পাথরের নড়ার বিষয়ে নিজের কোনো তত্ত্ব দাঁড় করানোর চেষ্টাও করতে পারেন।

সূত্র: ন্যাশনাল পার্ক. অর্গ, স্মিথসোনিয়ান ম্যাগাজিন, থ্রিলিস্ট ডট কম, এল দেট ইন্টারেস্টিং, স্মিথসোনিয়ান ম্যাগাজিন, হিন্দুস্তান টাইমস

মদের দোকানে তাণ্ডব, বাথরুমে পাওয়া গেল মাতাল র‍্যাকুন

ভারতে প্রায় কোটি টাকার এক হিরা খুঁজে পেলেন ‘শৈশবের দুই বন্ধু’

লিংকডইনে গার্লফ্রেন্ড চেয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়ার পর যা ঘটল

অফিসে ঘন ঘন টয়লেটে যাওয়ায় চাকরি হারালেন প্রকৌশলী

ব্যর্থ ব্যবসায়ী ফুড ডেলিভারি করে লাখপতি

বিমানের ডানায় আটকে গেল প্যারাস্যুট, অলৌকিকভাবে বাঁচলেন স্কাইডাইভার

সময়ের আগে অফিসে যাওয়ায় চাকরিচ্যুত নারী

২৩ লাখ টাকার ‘ডিম’ গিলে ফেললেন যুবক, এক সপ্তাহ পর যেভাবে উদ্ধার করল পুলিশ

১৯ হাজার ডলারের ‘ডিম’ গিলে যুবক কারাগারে

জরায়ুহীন হয়ে জন্মেছিলেন, তাঁর হয়ে সন্তান জন্ম দিলেন প্রিয় বন্ধু