টেলিভিশন যখন স্মার্ট হইয়া গেল, রান্নাঘরের বহুবিধ গ্যাজেট যখন স্মার্ট হইয়া গেল, আমি তখন এই একুশ শতকের সিকি ভাগ চলিয়া যাইবার পরেও কেতাদুরস্ত তথা স্মার্ট হইতে পারিলাম না। ইহা আমার ব্যর্থতাই বটে। আমার ব্যর্থতা এক্ষণ দারা-পুত্র-পরিবারের কাঁধে ভূত হইয়া চাপিয়া বসিয়াছে। সক্কলে আমাকে শুনাইয়া, সক্কাল বিক্কাল, না, বিক্কাল বলিয়া কিছু নাই, সক্কাল-বিকাল কহিতে থাকে, তুমি অকেতাদুরস্ত তথা আনস্মার্ট। তুমি খস।
আমি কী করিব, আপনারাই বলুন। বাল্যে, না না, বাল্যে নয় যৌবনে যখন আমার বন্ধুরা গাছতলায়, রেস্তোরাঁয় বসিয়া ঘুটুর ঘুটুর করিয়া প্রেমালাপ করিত, আমি তখন বেজায় বিজি থাকিতাম দেশোদ্ধারে। সেই হেতু কোকিল ডাকিল না। কোকিল ডাকিল না বলিয়া বসন্ত আসিল না। আর বসন্ত আসিল না বলিয়া জীবনে প্রণয় আসিল না। আমার বন্ধুরা যখন গলাবন্ধ, তথা টাই পরিয়া স্যুটেডবুটেড হইয়া নিজেরাই জীবনে প্রতিষ্ঠিত হইবার লক্ষ্যে ডেসটিনি ঠিক করিয়া ফেলিয়াছিল, আমি তখন তাহাদিগের উপহাসের পাত্র হইয়া ফ্যাফ্যা করিয়া ঘুরিয়া বেড়াইয়া জীবনের মূল্যবান সময় নষ্ট করিয়াছিলাম। আমি যখন একাকী জীবনের শোকে মুহ্যমান, দেখি বন্ধুরা প্রকৃতি-পরিবেশ-প্রতিবেশ বাঁচাইবার যুদ্ধে শামিল হইয়া পাহাড়ে বৃক্ষরোপণ করিতে চলিয়া গেল। আমি ভাবিলাম, যাক, অন্তত আরও বেদনাবোধ করিলে গলায় ফাঁস লইবার উত্তম বৃক্ষ পাওয়া যাইবে। আমি নিশ্চিন্ত হইলাম। কিন্তু হায়, কিয়ৎকাল বাদে দেখিলাম, বন্ধুরা গলাবন্ধ খুলিয়া তুলিয়া রাখিতেছে আর আমি একাকী জীবনের কষ্টের কথা তাহাদিগকে শুনাইয়াই চলিয়াছি।
এই পর্যন্ত আমার অবস্থার কথা শুনিয়া আমার পূর্বপুরুষ পূর্ণচন্দ্র খাচুয়া কহিলেন, ‘বাঙালি শুধুই খচ্চর নহে, তদুপরি অসহায়।’ আমি কহিলাম, আজ্ঞে, আপোনি যথার্থ কহিয়াছেন।
তিনি কহিলেন, নিতম্বদেশ আঢাকা দেখিয়া ফুটাইতেছে তারা হুল।
আমি কহিলাম, ভিমরুল ভিমরুল।
এইবার তিনি গুরু পুরন্দর ভাটের সহিত দেখা করিতে রওয়ানা দিলেন।