শহরটিতে প্রবেশ করার পর পর্যটকেরা চমকে ওঠেন। আরে, গোটা শহরটিই তো অবিকল ইংল্যান্ডের কোনো শহরের মতো! ব্রিটিশ ধাঁচের ঘর-বাড়ি, রেস্তোরাঁ এমনকি সেখানকার বিখ্যাত ব্যক্তিদের ভাস্কর্য—কী নেই সেখানে! পর্যটকেদের অবাক হওয়ার কারণ টেমস নামের এই শহরের অবস্থান চীনে!
টেমস শহরের ভেতর দিয়ে হাঁটতে শুরু করলে একটি ব্রিটিশ শহরের সবকিছুই পাবেন। খোয়া বিছানো রাস্তা, ভিক্টোরিয়ান স্থাপত্যের চত্বর, পুরোনো দিনের সেই লাল টেলিফোন বাক্স এমনকি বিখ্যাত ব্রিটিশ ব্যক্তিত্ব ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল, উইলিয়াম শেক্সপিয়ার কিংবা উইনস্টন চার্চিলের ভাস্কর্যেরও দেখা পাবেন শহরটিতে। ব্রিটিশ স্থাপত্য রীতির বাড়িগুলো ঘিরে আছে সবুজ গাছগাছালি, গুল্ম। শহরটির নামকরণও ইংল্যান্ডের রাজধানী লন্ডনের টেমস নদীতে অনুপ্রাণিত হয়ে।
চীনের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহর সাংহাই। কাছেই সাগর। বিভিন্ন সমুদ্রবন্দর ও ইয়াংজি নদী থেকে ছেড়ে আসা প্রমোদ তরীগুলোও তাই এখানে ভেড়ে নিয়মিত। জাহাজ থেকে নামা মানুষ চীনা দালান-কোঠা দেখার পাশাপাশি এখানকার খাবার চেখে দেখতে চান। তবে তাঁদের কেউ কেউ চীনা ভূখণ্ডে ওই ব্রিটিশ স্থাপত্যরীতির শহরটি দেখার সুযোগও হাতছাড়া করতে চান না। অন্তত যাঁরা এর কথা জানতে পারেন আরকি! সাংহাই থেকে কেবল কিলোমিটার ত্রিশেক দূরে শংজিয়ান নিউ সিটির একটি অংশ নিয়ে গড়ে উঠেছে চীনা রাজত্বে এই আশ্চর্য ব্রিটিশ শহর।
এখন আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, সাংহাইয়ের ঠিক বাইরে এমন একটি ব্রিটিশ আদলের শহর বানানোর কারণ কী? আসলে এটি সরকারি একটি প্রকল্পের অংশ। এর উদ্দেশ্য ছিল সাংহাই শহরের ভিড়বাট্টা কমানোর জন্য সেখান থেকে কিছুটা দূরে সুন্দর পরিবেশে থাকার মতো একটি জায়গা তৈরি করা।
এই প্রকল্পের নির্মাণ করা একমাত্র বসতি কিন্তু টেমস শহর নয়। শংজিয়ান নিউ সিটির অন্তর্ভুক্ত এমন আরও আটটি শহর আছে। সেগুলোর কোনোটির দালানকোঠা ইউরোপের দেশ ফ্রান্স কিংবা জার্মানির আদলে, কোনোটির কানাডার বাড়ি-ঘরের মতো। আবার স্ক্যান্ডিনেভিয়ান স্থাপত্যরীতির শহরও আছে।
তবে পরিকল্পনা অনেকটাই ভেস্তে গেছে। এত বছর পরও শহরটি অনেকটাই ফাঁকা। কারণ যেমনটা ভাবা হয়েছিল মধ্যবিত্তদের টানেনি শহরটি। বেশির ভাগ দালানকোঠা কেনেন ধনকুবেররা নিজেদের দ্বিতীয় বাড়ি হিসেবে। বরং শহরে বেশি দেখা মেলে পর্যটকদের। আবার বাগদান ও ওয়েডিং ফটোগ্রাফির জন্যও নাম কামিয়েছে শহরটি। সেখানে গেলেই এমন কোনো জুটির ছবি তোলার আয়োজন দেখার সৌভাগ্য হয়ে যাবে আপনার সন্দেহ নেই।
সূত্র: সিএনট্রাভেলার. কম, টাইমআউট. কম, পোর্টহোল. কম