কী হওয়ার কথা আর হলো কী! লিওনেল মেসির মতো ফুটবল মহাতারকার আগমনকে সামনে রেখে উৎসবে পরিণত হয়েছিল কলকাতা শহর। চরম আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছিল ভক্তরা। তৈরি হয়েছিল রেকর্ড উচ্চতার ভাস্কর্য। কিন্তু যাঁকে ঘিরে এত আয়োজন, সেই মেসির কলকাতা সফর হয়ে থাকল তিক্ততায় ভরা।
দুই সতীর্থ লুইস সুয়ারেজ ও রদ্রিগো দি পলকে সঙ্গে নিয়ে শুক্রবার দিবাগত রাতে কলকাতা পৌঁছান মেসি। এরপর হোটেল কয়েক ঘণ্টার বিশ্রামের পর আজ সকাল থেকে ভারতে ভ্রমণের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেন আটবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী। শুরুতে স্পন্সরদের সঙ্গে গ্রিট অ্যান্ড গ্রিট শেষে হোটেল থেকে ভার্চুয়ালি ভাস্কর্য উদ্বোধন করেন। এরপর হোটেলে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন শাহরুখ খান।
হোটেলের কার্যক্রম শেষ করে যুবভারতী স্টেডিয়ামে যান মেসি। সেখানেই ঘটে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। মেসি গাড়ি থেকে নামতেই তাঁকে ঘিরে ধরেন সাবেক ফুটবলার এবং সেলিব্রেটিরা। ভিড়ে পড়ে বেশ বিরক্ত ছিলেন মেসি এবং তাঁর দুই সতীর্থ দি পল ও সুয়ারেজ। এমন ভিড়ের কারণে গ্যালারি থেকে মেসিকে দেখতে পাননি ভক্তরা। চড়া দামে টিকিট কিনে বিশ্বকাপ জয়ী ফুটবলারকে না দেখতে পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন সবাই। শুরু হয় ‘উই ওয়ান্ট মেসি’ স্লোগান।
পরিস্থিতি খারাপ দেখে ১২টার কিছুক্ষণ আগে মেসিকে মাঠ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। তাতে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। গ্যালারি থেকে একের পর এক বোতল ছোড়া হয়। ভেঙে ফেলা হয় গ্যালারির চেয়ার। বোতলের মতো ভাঙা চেয়ারও ছোড়া হয় মাঠে। কয়েকজন আগুন ধরানোর চেষ্টা করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিপেটা করেন পুলিশ সদস্যরা। তাতে অবশ্য কোনো কাজ হয়নি।
গ্যালারির সীমানা ভাঙেন উত্তেজিত ভক্তরা। একপর্যায়ে মাঠে ঢুকে পড়েন দুই-আড়াই হাজার মানুষ। কয়েকজন ছিঁড়ে ফেলেন গোল পোস্টের জাল। ভেঙে ফেলেন সাজঘরে যাওয়ার ট্যানেলের ছাউনি। মাঠের পাশে রাখা সোফা পোড়ানো হয়। উপড়ে ফেলা হয় তাঁবুসহ একাধিক জিনিস। এককথায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয় যুবভারতী। অনেকে তো মাঠের কার্পেট, ফুলের টবসহ অন্যান্য জিনিস নিয়ে স্টেডিয়াম থেকে বের হন। সব মিলিয়ে বিশাল ক্ষতি হয়ে গেল ভেন্যুটির।
মাঠের বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে উত্তেজনা। এ ঘটনায় ক্ষমা চেয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘এই ঘটনায় আমি দুঃখিত এবং বিরক্ত। আমি মেসি ও তাঁর সমস্ত ভক্তের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। তদন্ত কমিটি গঠন করে ঘটনা খতিয়ে দেখা হবে।’