উইকেটে তখন বাংলাদেশের জয়ের পথে কাঁটা হয়ে ছিলেন আজমতউল্লাহ ওমরজাই। চাপকে জয় করে খুল্লাম খুল্লা ব্যাটিং করে যাচ্ছিলেন তিনি। আফগান ইনিংসের ১৬তম ওভারে তাঁকে ফিরিয়ে দিলেন তাসকিন আহমেদ। তাসকিনের স্লোয়ার সোজা ব্যাটে খেলতে গিয়েছিলেন। কিন্তু ব্যাটের ওপরের কানায় লেগে তালুবন্দী হলেন সাইফ হাসানের হাতে। তখন কী যে উল্লাস বোলার তাসকিনের! মুঠোবন্দী হাত ঝাঁকিয়ে মুখে চিৎকার তাঁর। বাংলাদেশ শিবিরে তখন উল্লাস।
১৬ বলে ৩০ রান করা ওমরজাইকে ফিরিয়ে দেওয়ার পর সেই উল্লাস থেকেছে শেষ পর্যন্ত। ৮ রানে জিতে সুপার ফোরের আশা জিইয়ে রেখেছে বাংলাদেশ। গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে আফগানরা শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলবে। সেই ম্যাচে শ্রীলঙ্কা জিতলে সুপার ফোরে উঠবে বাংলাদেশ।
এর আগে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে তানজিম হাসান তামিমের ফিফটিতে ৫ উইকেটে ১৫৪ রান তোলে বাংলাদেশ। শুরুটা দারুণ হলেও মাঝের ওভারে ঘটে ছন্দপতন। সেই ঘাটতি শেষ দিকে আর কাটিয়ে উঠতে পারেনি বাংলাদেশ। কাটিয়ে উঠতে পারলে হয়তো টি-টোয়েন্টিতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে রেকর্ড স্কোর হতো। এই সংস্করণে আফগানদের বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোর ছিল ১৫৭।
১৫৪ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে দ্বিতীয় ওভারে রিশাদ হোসেন কী এক ভুল করলেন! পয়েন্টে রিশাদ যখন ক্যাচ ছাড়লেন, ইব্রাহিম জাদরান কোনো রানই করেননি। রিশাদকে অনুশোচনায় বেশি পুড়তে হয়নি। নাসুম আহমেদের শিকার হয়ে খানিক পরেই ইব্রাহিম ফিরেছেন ৫ রানে। বাংলাদেশ একজন বিশেষজ্ঞ বোলার কম খেলিয়েছে কাল। নুরুল হাসান সোহানকে জায়গা দিতে একাদশের বাইরে শেখ মেহেদী হাসান। একজন জেনুইন বোলার না থাকায় দুই খণ্ডকালীন বোলার সাইফ হাসান আর শামীম পাটোয়ারী ২৪ বলে (সাইফ ১৮ বলে ৩৯) মিলে দিলেন ৫৫ রান। তারপরও ম্যাচ হাত থেকে ফসকে যায়নি।
একাদশে ফিরেই দুর্দান্ত বোলিংয়ে শুরু থেকে বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ যে চাপটা তৈরি করেছেন, মাঝে সাইফ-শামীম দুই হাতে রান দিলেও শেষ দিকে দুই অভিজ্ঞ পেসার মোস্তাফিজুর রহমান আর তাসকিন আহমেদ আফগানদের আর পেরে উঠতে দেননি। পাওয়ারপ্লেতেই ম্যাচসেরা নাসুম ফিরিয়ে দিয়েছিলেন সেদিকউল্লাহ আতাল ও ইব্রাহিমকে। প্রথম স্পেলে ৩ ওভারে নাসুম ৩ ওভারে ১ মেডেনে ৭ রান দিয়ে নিলেন ২ উইকেট। পাওয়ারপ্লে একেবারেই কাজে লাগাতে পারেনি আফগানিস্তান, প্রথম ৬ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে তুলতে পারে ২৭ রান। ইনিংসের মাঝে দুই খণ্ডকালীন স্পিনার মুক্ত হস্তে রান দিলেও তাসকিন-মোস্তাফিজ ধসিয়ে দেন আফগানদের মিডল ও লোয়ার অর্ডার। ১৬ বলে ৩০ রান করে বাংলাদেশকে চোখরাঙানো আজমতউল্লাহ ওমরজাইকে ফিরিয়ে তাসকিন জানিয়ে দেন, রাতটা তাঁদের।
পারভেজ হোসেন ইমনের জায়গায় এদিন তানজিদ হোসেন তামিমের সঙ্গে ইনিংস শুরু করতে আসেন সাইফ হাসান। এই পরিবর্তনটা কাজে এসেছে; ১২ ইনিংস পর উদ্বোধনী জুটিতে ৫০ রানের দেখা পেয়েছে বাংলাদেশ। তবে পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার পরের ওভারেই সেই জুটি ভাঙেন আফগান অধিনায়ক রশিদ খান। তাঁর নিচু হয়ে আসা ডেলিভারিতে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হন সাইফ হাসান (৩০)।
৬৩ রানে সাইফের বিদায়ের পর উইকেটে আসেন লিটন দাস। অধিনায়ক অবশ্য এদিন সুবিধা করতে পারেননি। নুর আহমেদের রং আন ডেলিভারিতে সুইপ করতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হয়ে যান লিটন (৯)। এই নুর আহমেদই ফিরিয়ে দেন ৩১ বলে ৫২ রানের ইনিংস খেলা তানজিদকে। ৪টি চার ও ৩টি ছয়ে সাজানো তাঁর ইনিংসটির স্ট্রাইকরেট—১৬৭.৭৪।
শেষ দিকে ছক্কা মারায় যাঁদের ওপর দলের আস্থা, সেই শামীম হোসেন ও জাকের আলী অনিক এদিন হতাশ করেছেন। ১১ বলে ১১ রান করে আউট হয়েছেন শামীম। ১৩ বল খেলে ১২* করেছেন জাকের। দলীয় আড়াই শ পেরোনো স্কোরে ৬ বলে অপরাজিত ১২ রানের অবদান নুরুল হাসান সোহানের।
বল হাতে ২টি করে উইকেট নিয়েছেন নুর আহমেদ ও রশিদ খান। ১টি আজমতউল্লাহ ওমরজাই।