কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সরকারের বিরুদ্ধে হত্যা, গুম, মিথ্যা মামলায় হয়রানি, গ্রেপ্তার ও দমন-নিপীড়নের অভিযোগ এনেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ বুধবার এক বিবৃতিতে এ অভিযোগ করে তিনি বলেছেন, ‘গণবিচ্ছিন্ন সরকার আইন, সংবিধান, গণতান্ত্রিক রীতি-নীতি, মানবিকতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে জনরোষ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে সুবিধা ও ইচ্ছামাফিক যা ইচ্ছা তাই করছে।’
মিথ্যা মামলার অভিযোগ প্রসঙ্গে বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সরকার প্রতিদিনই সাধারণ শিক্ষার্থীসহ বিএনপি ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীদের গণগ্রেপ্তার করে, মামলা, হামলা করে এবং রিমান্ডে রেখে নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে। প্রতিদিনই মিথ্যা মামলার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব মিথ্যা মামলায় আসামি কারা, অনেক ক্ষেত্রে মামলার বাদীই জানেন না। মৃত ব্যক্তি, বিদেশে অবস্থান করছেন এমন অনেককেই এসব মামলার আসামি করা হচ্ছ। এমন মামলায় সাভারের মৃত আজগর আলী, বিদেশে অবস্থানরত বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জয়নুল আবেদীন ফারুকসহ এমন অনেককে আসামি করা হয়েছে।’
ফখরুল আরও বলেন, ‘অন্য একটি মামলায় সাত মাস আগে মৃত্যুবরণকারী সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের বিরুদ্ধে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। পুলিশ এই বিশিষ্ট আইনজীবীকে গ্রেপ্তার করতে তার বাসায় হানা দেয়। আন্দোলনের আগে থেকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স ক্যানসারে আক্রান্ত তার স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে অবস্থান করলেও এবং বিএনপির গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক মোরশেদ হাসান খান তাঁর ক্যানসারে আক্রান্ত স্ত্রীর চিকিৎসায় ব্যস্ত থাকলেও তাঁদের বাড়িতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হানা দিচ্ছে। একজন বিচারপতির শিক্ষার্থী ছেলেকেও মিথ্যা মামলায় আটক করে রিমান্ডে নিয়ে হয়রানি নির্যাতন করা হয়েছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিষ্ঠুরভাবে দমন করতে বর্বরোচিত আক্রমণ চালিয়ে গণহত্যা করে সরকার অমার্জনীয় অপরাধ করে জানতে চায় কি তাদের অপরাধ? তাদের অপরাধের তালিকা এতই দীর্ঘ যে বিবরণ দিয়ে শেষ করা যাবে না।’
বিবৃতিতে তিনি বলেন, এখনো অনেক অভিভাবক তার শিক্ষার্থী সন্তানের খোঁজ পাচ্ছে না। অসংখ্য শিক্ষার্থীদের খোঁজ তাদের অভিভাবকেরা না পেয়ে উদ্বিগ্ন, অসহায় অবস্থায় আছেন। আটকের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতের সামনে হাজির করার আইন থাকলেও ডিবি হেফাজতে ৪-৫ দিন রেখে বেআইনি কাজ করছে গণবিরোধী সরকার। আবার আটক না করেই নিরাপত্তার নামে হাসপাতাল থেকে চিকিৎসাধীন ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের ডিবি অফিসে তুলে এনে তাদের জিম্মি করে রাখেছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন বল পূর্বক বন্ধ করতেই সরকারের কর্তাব্যক্তিরা বেআইনি কাজ করছেন, দিবালোকের মতো তা স্পষ্ট। সান্ধ্যকালীন কারফিউ চলাকালীন এলাকা ভাগ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ‘ব্লক রেইড’ পরিচালনা করছে ও নির্বিচারে ছাত্র গ্রেপ্তার করে অভিভাবক, তরুণ সমাজ এবং জনমনে ভীতি ও ত্রাসের সঞ্চার করছে।’
বিবৃতিতে অবিলম্বে হত্যা, গুম, মিথ্যা মামলায় হয়রানি, গ্রেপ্তার, দমন, নিপীড়ন বন্ধ করে আটককৃত শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবক, বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী দলের নেতা-কর্মী এবং নিরীহ জনসাধারণের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব। সরকারকে সতর্ক করে তিনি বলেন, ‘গণবিচ্ছিন্ন সরকার আজ ইতিহাসের নির্মম ও বর্বর হামলা, গণহত্যা চালিয়ে গণ শত্রুতে পরিণত হয়েছে। আন্দোলন দমনে নির্বিচার হত্যা মানবতাবিরোধী অপরাধ ও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে বিচারযোগ্য অপরাধ। দিন যতই যাচ্ছে সরকারের অস্তিত্ব সংকট ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। নির্লজ্জ সরকার যতই মিথ্যাচার, সাজানো মামলায় গ্রেপ্তার অব্যাহত রাখুক না কেনো, কোনো কিছুতেই ছাত্র গণ-আন্দোলনে দিশেহারা জনবিচ্ছিন্ন আওয়ামী সরকারের পতন ঠেকাতে পারবে না।’