আনিসুল ইসলাম মাহমুদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি (একাংশ) ও আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ১৪ দলীয় জোটের শরিক জাতীয় পার্টির (জেপি) নেতৃত্বে ‘জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক জোট’ নামে একটি জোট গঠন করা হয়েছে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে গঠিত এ জোটে জাপা-জেপি ছাড়া আরও ১৪টি রাজনৈতিক দল রয়েছে।
আজ রোববার রাজধানীর গুলশানে হাওলাদার টাওয়ারে এক মতবিনিময় সভায় এ জোট গঠনের সিদ্ধান্ত হয়।
জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক জোটের মুখপাত্রের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জাতীয় পার্টির (একাংশ) মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারকে। এ ছাড়া আত্মপ্রকাশের আগে জোটের অন্তর্ভুক্ত সব দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সমন্বয়ে একটি লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন জাপার (একাংশ) চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। প্রধান অতিথি ছিলেন জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। সভায় বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, জাতীয় পার্টির জ্যেষ্ঠ কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশিদ, নির্বাহী চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চুন্নু, জাপার কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা।
আরও উপস্থিত ছিলেন জনতা পার্টি বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গোলাম সারোয়ার মিলন, মহাসচিব শওকত মাহমুদ, জাতীয় পার্টি (মতিন) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এ এন এম সিরাজুল ইসলাম, মহাসচিব জাফর আহমেদ জয়, মুসলিম লীগের সভাপতি মহসিন রশিদ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান শেখ সালাউদ্দিন সালু, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির নির্বাহী সভাপতি মাওলানা আশরাফুল হক, বাংলাদেশ ইসলামিক জোটের চেয়ারম্যান আবু নাসের অহেদ ফারুক, জাতীয় সংস্কার জোটের সভাপতি মেজর (অব.) আমীন আহমেদ আফসারী, বাংলাদেশ মানবাধিকার পার্টির চেয়ারম্যান মো. আখতার হোসেন, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপার সভাপতি মহিউদ্দিন বাবলু, বাংলাদেশ সর্বজনীন দলের সভাপতি নূর মোহাম্মদ মনির, সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন, পিচ অ্যালায়েন্সের চেয়ারম্যান হাজী এস এম এ জলিল, ন্যাপ ভাসানীর মহাসচিব জহিরুল ইসলাম, এস এম আশিক বিল্লাহ চেয়ারম্যান ডেমোক্রেটিক পার্টি ও গণতান্ত্রিক জোট বাংলাদেশ, মোহাম্মদ আনিসুর রহমান।
জাপার (একাংশ) চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন একটা ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। আমরা মনে করছি, আগামী ফেব্রুয়ারিতে দেশ নির্বাচনের দিকে যাবে। কিন্তু সবার মধ্যে নির্বাচন নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাজ করছে। তারপরও আমাদের নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হবে।’
জাপার (একাংশ) চেয়ারম্যানের আরও বলেন, ‘আমরা দেশের জনগণের কাছে একটি তৃতীয় ধারার সুস্থ রাজনীতি উপহার দিতে চাই। দেশ আজ বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে দুই ভাগে বিভক্ত। আওয়ামী লীগ নির্বাচন করতে পারবে কি না, সন্দেহ আছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে আমরা যদি সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি, তাহলে আমাদের ভালো ফল করার সম্ভাবনা আছে। আমাদের জোটের মূল মন্ত্র হবে—বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, উদার গণতন্ত্র ও সকল ধর্মের মানুষের সহাবস্থান। এই জোটটি শুধু নির্বাচনী জোট হবে না, আমরা ভবিষ্যতে এই জোট নিয়ে বাংলাদেশের প্রতিহিংসার রাজনীতি নির্মূল করব। বিকশিত করব সুস্থধারার রাজনীতি।’
নতুন জোটের মুখপাত্র এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ও আগামী দিনে দেশে সুস্থধারার রাজনীতিকে বিকশিত করার লক্ষ্যে আমরা বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, উদার গণতন্ত্র, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে একটি বৃহত্তর জোট গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সে লক্ষ্যে আজ (রোববার) আমরা মতবিনিময় সভা করেছি। মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ১৬টি রাজনৈতিক দলের নেতারা বৃহত্তর জোট গঠন করার লক্ষ্যে ঐকমত্য হয়েছেন।’
রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, ‘আমরা আশা করছি, চলতি সপ্তাহে ঢাকার একটি পাঁচ তারকা হোটেলে এই জোট আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করবে। আমরা আশা করি, যদি দেশে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ থাকে, তাহলে দেশ ও দেশের জনগণের স্বার্থে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণ করব। তবে এখন পর্যন্ত দেশে নির্বাচন আয়োজনের মতো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়নি।’