জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতৃত্বে তিনটি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে সদ্য গঠিত ‘গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট’-এর পরিধি আরও বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। এ জন্য ডান ও বাম ঘরানার বেশ কয়েকটি দলের সঙ্গে চলছে আলোচনা। জেএসডি (জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল), নাগরিক ঐক্য, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের একাংশ এবং গণঅধিকার পরিষদের একাংশ গণতান্ত্রিক সংস্কার জোটের সঙ্গী হতে পারে। আবার গণতন্ত্র মঞ্চে থাকা পাঁচটি দলেরই এনসিপির জোটসঙ্গী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে আলোচনা আছে।
এ বিষয়ে জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘তাদের (এনসিপির নেতৃত্বাধীন জোট) সঙ্গে যোগাযোগ আছে। তাদের প্রতি শুভকামনা আছে। আলাপ-আলোচনা ছিল। কিন্তু আমরা এখনো গণতন্ত্র মঞ্চটাকে রক্ষা করছি।’
‘গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট’-এর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে গত রোববার। এনসিপি ছাড়া এই জোটের অন্য দুই দল হলো আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) এবং রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন। জোট ঘোষণার সময় এনসিপির আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম বলেন, আরও কয়েকটি দল এই জোটে যুক্ত হতে পারে। তাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
গণতান্ত্রিক সংস্কার জোটের নেতারা জানিয়েছেন, জোটের ঘোষণাপত্র ও সংসদীয় আসনের প্রার্থিতা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন তাঁরা। তবে একই সঙ্গে জোটের কলেবর বাড়ানোর বিষয়েও আলোচনা চলছে। জোট গঠন নিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চ, গণঅধিকার পরিষদ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামসহ (একাংশ) একাধিক দলের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে গণতন্ত্র মঞ্চের গণসংহতি আন্দোলনসহ দু-একটি দল বিএনপির সঙ্গে আসন সমঝোতা করে বের হয়ে যেতে পারে। অন্যদিকে বিএনপির সঙ্গে সম্মানজনক আসন সমঝোতা না হলে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, নাগরিক ঐক্যসহ তিনটি দল নিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চ নতুন জোটে যোগ দিতে পারে।
জোটের এক নেতা বলেন, ‘গণতন্ত্র মঞ্চ, গণঅধিকার পরিষদ ছাড়াও জামায়াতের নেতৃত্বে থাকা ৮ দলের জোটের বাইরে থাকা ইসলামপন্থী দলের সঙ্গে জোট গঠনের বিষয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। একই সঙ্গে আমরা বামপন্থী একাধিক দলের সঙ্গেও আলোচনা করছি। আশা করি, কয়েক দিনের মধ্যে বিষয়টি চূড়ান্ত হতে পারে।’
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, ‘সংস্কারের পক্ষে থেকে দেশকে এগিয়ে নিতে চায়, এমন কয়েকটি দলের সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলছে। ইসলামপন্থী দু-একটি দলও এই আলোচনায় রয়েছে।’
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দিদার ভূঁইয়া বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা জোট নিয়ে সাধারণ জনগণের মধ্যে এবং রাজনৈতিক পরিসরেও খুব ভালো সাড়া পাচ্ছি। গণতান্ত্রিক শক্তি এবং জুলাইয়ের পক্ষের শক্তির যে দলগুলো আছে, তাদেরকে নিয়ে আমরা এই জোটটা নিয়ে আরও এগোতে চাই। তাদের অনেকের সঙ্গেই আগে থেকে কথা চলছিল এবং রেসপন্স বেশ ভালো।’
রাজনীতিসংশ্লিষ্টদের মধ্যে গুঞ্জন রয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারে থাকা দুজন ছাত্র উপদেষ্টার মধ্যে একজন চলতি সপ্তাহেই পদত্যাগ করে গণঅধিকার পরিষদ বা বিএনপিতে যোগ দিতে পারেন। তিনি কোন দলে যোগ দেবেন, তার ওপরেও গণতান্ত্রিক সংস্কার জোটে নতুন করে কোন কোন দল যুক্ত হবে—সে বিষয়টি নির্ভর করছে।
গণতান্ত্রিক সংস্কার জোটের একটি দলের শীর্ষ নেতা বলেন, ‘জোট গঠনের সঙ্গে নির্বাচনে কে কোন আসনে, কোন দলের প্রার্থী হবেন—সে বিষয়টিও জড়িত। তাই আমাদের জোটে নতুন করে কোন দল যুক্ত হবে, সেটা দেখতে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।’