হোম > মতামত > সম্পাদকীয়

ডাকসু নির্বাচন

সম্পাদকীয়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ বা ডাকসু একসময় হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক চর্চা ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব তৈরির এক অমূল্য ক্ষেত্র। ষাটের দশকের গণ-আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত এবং পরবর্তী সময়ে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের দিনগুলোতেও ডাকসুর নেতারা সামনের কাতারে ছিলেন। আমাদের জাতীয় রাজনীতির বহু প্রভাবশালী নেতা এই মঞ্চ থেকেই উঠে এসেছেন। একসময় ডাকসু কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতিনিধি ছিল না, বরং দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণের ক্ষেত্রেও এর অবদান অনস্বীকার্য।

কিন্তু যে প্রতিষ্ঠান তরুণ প্রজন্মকে রাজনৈতিক পরিসরে নেতৃত্বের শিক্ষা দিত, তা দীর্ঘদিন কার্যত অচল হয়ে পড়ে থাকে। ১৯৯০ সালের পর প্রায় তিন দশক কোনো ডাকসু নির্বাচন হয়নি, ফলে একটি প্রজন্ম গণতান্ত্রিক অভিজ্ঞতা থেকে বঞ্চিত হয়। ছাত্রসমাজে যে জায়গাটি বিতর্ক, আলোচনা, নীতি প্রণয়ন ও যৌথ সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্কুল হিসেবে কাজ করার কথা ছিল, সেটি হারিয়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলো রাজনীতির নামে দলীয় আধিপত্য ও সহিংসতার শিকার হলেও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির স্কুল হয়ে ওঠার সুযোগ পায়নি।

২০১৯ সালে যখন নতুন করে নির্বাচন হলো, তখন নতুন আশার আলো জ্বলে উঠেছিল। শিক্ষার্থীরা ভেবেছিলেন তিন দশকের শূন্যতা ভরে উঠবে, নেতৃত্ব বিকাশের নতুন পথ খুলবে। কিন্তু সে নির্বাচন ঘিরে যেভাবে অনিয়ম, কারচুপি, ভোটকেন্দ্র দখল এবং অভিযোগের পাহাড় তৈরি হলো, তাতে সেই আশাভঙ্গের বেদনা আরও গভীর হলো।

প্রশ্ন হলো, আমরা কি ডাকসুকে কেবল অতীতের গৌরবগাথা হিসেবে দেখতে চাই, নাকি এটিকে আবার সক্রিয় করতে চাই? আজকের প্রেক্ষাপটে যখন দেশের সাধারণ নির্বাচন নিয়ে অবিশ্বাস ও সন্দেহ বিরাজ করছে, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শিক্ষাঙ্গনে একটি নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও নিয়মিত নির্বাচন গণতান্ত্রিক চর্চাকে নতুন প্রজন্মের কাছে জীবন্ত করে তুলতে পারে। ডাকসু যদি সক্রিয় থাকে, তবে শিক্ষার্থীরা শুধু আন্দোলনের মিছিলেই নয়, নীতিনির্ধারণ, বিতর্ক, পরিকল্পনা ও সংস্কৃতিচর্চার মধ্য দিয়েও নেতৃত্বের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবেন। একটি গণতান্ত্রিক সমাজে নেতৃত্বের প্রথম পাঠ আসা উচিত শিক্ষাঙ্গন থেকে এবং সেই পাঠদানের সবচেয়ে বড় মঞ্চ ডাকসুই হতে পারে।

এ ক্ষেত্রে মূল দায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের, যারা নির্বাচনের নিয়মিত আয়োজন নিশ্চিত করতে পারেনি, এবং রাজনৈতিক দলগুলোর, যারা ডাকসুকে নিজেদের প্রভাব বিস্তারের জায়গায় পরিণত করেছে। অথচ ছাত্র সংসদ আসলে শিক্ষার্থীদের কল্যাণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশের জন্য কাজ করার প্ল্যাটফর্ম হওয়া উচিত। সেটিকে দলীয় আধিপত্যমুক্ত রাখা ছাড়া ডাকসুর পুনর্জাগরণ সম্ভব নয়। সুষ্ঠু ভোট আয়োজন, প্রার্থীদের অবাধ প্রচারণা, ভোটকেন্দ্রের নিরপেক্ষতা এবং প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ছাড়া কোনো নির্বাচনই বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে না।

এখন সময় এসেছে নতুন করে ভাবার। ডাকসুকে নিয়মিত নির্বাচনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের হাতে ফিরিয়ে দিতে হবে। সহিংসতা, দখল ও কারচুপির সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে একে ছাত্র-ছাত্রীদের বাস্তব সমস্যার সমাধান এবং ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব গঠনের ক্ষেত্র বানাতে হবে।

নির্বাচনী ব্যয়

খুলনার এক গোলমেলে ব্যাপার

একটি প্রত্যাবর্তন, বহু প্রত্যাশা

বড়দিনের শুভেচ্ছা

শিক্ষকের ক্ষমতা

ধরা হোক হামলাকারীদের

কী ভয়ংকর!

শান্তি এখন খুব প্রয়োজন

শান্ত হোন

সংযোগ সড়কহীন সেতু