হোম > মতামত > সম্পাদকীয়

বিশ্বের জন্য রহমত মুহাম্মদ (সা.)

সম্পাদকীয়

আজ ১২ রবিউল আউয়াল, পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)। এই মহিমান্বিত দিনে মানবজাতির ইতিহাসে এক নতুন সূর্যের উদয় হয়েছিল মক্কার মরু প্রান্তরে। মা আমিনার কোল আলোকিত করেজন্ম নিয়েছিলেন এক মহামানব—যিনি বিশ্বমানবতার মুক্তিদূত হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। তাঁর আগমনে অজ্ঞানতা ও বর্বরতার ঘোর আঁধার ভেদ করে সূচনা হয়েছিল এক নতুন সভ্যতার, এক নবজাগরণের।

হজরত মুহাম্মদ (সা.) এমন এক সময়ে এসেছিলেন, যখন আরব সমাজ ছিল পাপে নিমজ্জিত। যেখানে ছিল মানবতা পদদলিত, নারীরা অবহেলিত, দাসেরা নিপীড়িত আর ধর্মীয় জ্ঞান ছিল কুসংস্কার ও পৌত্তলিকতায় আচ্ছাদিত। ঘোর সেই অন্ধকারে তিনি এসেছিলেন এক আলোর দিশা হয়ে, করুণার আধার হয়ে। তাই তো তাঁকে বলা হয় ‘রহমাতুল্লিল আলামিন’, অর্থাৎ সারা বিশ্বের জন্য যিনি রহমত।

নবুয়ত প্রাপ্তির আগেই তিনি তাঁর সততা ও বিশ্বস্ততার জন্য সবার কাছে সুপরিচিত ছিলেন। সমাজ তাঁকে ‘আল-আমিন’ বা ‘সবচেয়ে বিশ্বস্ত’ উপাধিতে ভূষিত করেছিল। তাঁর চরিত্র ছিল পূর্ণিমার চাঁদের মতো সমুজ্জ্বল, কথাবার্তায় ছিল স্নিগ্ধতা আর চলাফেরায় ছিল শান্ত সৌন্দর্য। সত্যবাদিতা ও ন্যায়ের প্রতি তাঁর আপসহীন মনোভাব তাঁকে এক অনন্য উচ্চতায় স্থাপন করেছিল।

৪০ বছর বয়সে হেরা গুহায় আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর ওপর ওহি নাজিল হয়। এখান থেকেই শুরু হয় এক দীর্ঘ, কণ্টকাকীর্ণ অথচ মহিমান্বিত যাত্রা। ২৩ বছরের নিরলস প্রচেষ্টা, ত্যাগ, কষ্ট আর ভালোবাসার এক মহাকাব্য তিনি রচনা করেন, যার প্রতিটি অধ্যায়ে রয়েছে মানবতার জয়গান। মক্কার শৈশব, হিজরতের কষ্ট এবং মদিনার আলোকিত সমাজ গঠন—সব মিলিয়ে একটি পরিপূর্ণ জীবনদর্শন তিনি মানবজাতির জন্য রেখে গেছেন।

রাসুল (সা.) ছিলেন দয়াময়, ক্ষমাশীল ও উদার হৃদয়ের অধিকারী। শত্রুরাও তাঁর চরিত্রের উচ্চতাকে অস্বীকার করতে পারেনি। তায়েফের ঘটনায় যখন তিনি রক্তাক্ত, তখন ফেরেশতা পাহাড় দিয়ে শত্রুদের নিশ্চিহ্ন করার প্রস্তাব দিলেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করে বলেছিলেন—‘হয়তো এদের বংশধররা একদিন সত্যকে গ্রহণ করবে।’ এটাই ছিল তাঁর মহানুভবতা ও দূরদৃষ্টি। তিনি শুধু একটি ধর্ম প্রচার করেননি, তিনি গড়ে তুলেছিলেন এক সোনালি প্রজন্ম—যাঁরা ছিলেন চরিত্রে দৃঢ়, কাজে পরিশ্রমী এবং ন্যায়ের প্রতি নিবেদিত। সাহাবায়ে কেরামের জীবন ছিল রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনের জীবন্ত প্রতিচ্ছবি।

আজ আমরা যখন ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) পালন করি, তখন আমাদের মনে রাখতে হবে—এটি কেবল উৎসবের দিন নয়, বরং আত্মদর্শনের দিন। রাসুল (সা.)-এর জন্মদিন স্মরণ করা মানে শুধু মিছিল, মিলাদ বা আলোচনায় সীমাবদ্ধ থাকা নয়, বরং তাঁর আদর্শকে হৃদয়ে ধারণ করা এবং জীবনে বাস্তবায়ন করাই তাঁর প্রতি প্রকৃত ভালোবাসা।

আজকের এই বিশৃঙ্খল ও বিভ্রান্ত সময়েও আমরা যদি আবার সেই ‘আঁধারের আলো’ হয়ে আসা নবীর জীবনবোধকে অনুসরণ করি, তাহলে ব্যক্তিজীবন, সমাজ, এমনকি গোটা বিশ্বে আবার ফিরে আসবে সেই হারিয়ে যাওয়া শান্তি, সৌহার্দ্য ও সুবিচার।

একটি প্রত্যাবর্তন, বহু প্রত্যাশা

বড়দিনের শুভেচ্ছা

শিক্ষকের ক্ষমতা

ধরা হোক হামলাকারীদের

কী ভয়ংকর!

শান্তি এখন খুব প্রয়োজন

শান্ত হোন

সংযোগ সড়কহীন সেতু

যা করণীয়

নিরাপত্তাহীনতা