বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক জাহানারা আলম যেন প্যান্ডোরার বাক্স খুলে দিলেন! সেখান থেকে একে একে বেরিয়ে আসছে দুর্গন্ধযুক্ত ঘটনা। যাঁরা নারীক্রিকেটারদের সুরক্ষা দেবেন বলে প্রতিশ্রুত, তাঁদেরই কেউ কেউ ক্রিকেটারদের জন্য হয়ে উঠেছেন বিভীষিকা। এ রকম একটি অভিযোগ ওঠার পর সত্যিই জাতীয় নারী দলের সংগঠক, নেতাদের নীতিবোধ, সততা, স্বচ্ছতা—সবই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়।
ব্যাপারটা এমন নয় যে, এবারই প্রথম নারী দলের সদস্যরা যৌন নিপীড়নের অভিযোগ করেছেন। ভয়াবহ তথ্য হলো, অভিযোগ করার পরও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। যে কেউ বুঝতে পারবেন, একটি দলে নিয়মানুবর্তিতা, নির্দেশ মেনে চলা খুব গুরুত্বপূর্ণ। নিয়ম অনুযায়ী না চললে খেলাধুলায় ভালো ফল আসে না। কিন্তু ভালো পারফরম্যান্সের জন্য মানসিকভাবে যে মুক্ত পরিবেশ গড়ে তুলতে হয়, শঙ্কাহীন মানসিকতা গড়ে তুলতে হয়, তার অভাব হলে সরাসরিভাবেই মাঠে তার প্রভাব পড়ে। এ কথা তো সত্য, নিকট অতীত থেকে এখন পর্যন্ত ক্রিকেটে আমাদের যে সাফল্যগুলো এসেছে, তার বেশির ভাগই এনেছেন আমাদের নারী ক্রিকেটাররা। কিন্তু তাদের ওপর যদি দলের অভিভাবকেরাই যৌন হয়রানির মতো অপরাধ করে থাকেন, তবে সেটা খাটো করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। অভিভাবকেরাই যদি নারী ক্রিকেটারদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করেন, তাহলে তাঁরা নিরাপদ থাকবেন কী করে? এই মানসিক চাপ খেলার মাঠেও সঞ্চারিত হতে বাধ্য।
বিষয়টি খুব জটিল। মূল দলে থাকা না-থাকার বিষয়টিও তো নির্ভর করে নির্বাচক, ফিজিওসহ অনেকের ওপর। তাঁরা পারফরম্যান্স দেখে মূল দলে রাখবেন খেলোয়াড়দের, সেটাই নিয়ম। কিন্তু যদি কোনো ‘অজ্ঞাত কারণে’ (পড়ুন যৌনতার প্রলোভন দেখানোর মাধ্যমে) কোনো খেলোয়াড় সেরা একাদশে না আসতে পারেন, তাহলে ঘটনাটি যাচাই করে দেখবে কে? এ ধরনের অন্যায় আচরণের প্রত্যক্ষ সাক্ষী থাকে না। টেলিফোন রেকর্ড বা সে রকম কিছু হয়তো থাকতে পারে, কিন্তু শরীর স্পর্শ করা, পিরিয়ড শেষ হলে দেখা করতে বলা—এগুলো নিশ্চয়ই সাক্ষী রেখে করা হয় না। দলে সুযোগ পাওয়ার মুলা ঝুলিয়েও ফায়দা হাসিল করার কথা ভাবতে পারেন অপরাধী। দলে যাঁরা সুযোগ পাচ্ছেন, তাঁরাও বিষয়টি নিয়ে নীরব থাকতে পারেন। এখন যাঁরা মূল দলে আছেন, মাঠে নামার জন্য প্রস্তুত—তদন্ত হলে তাঁরা কী বলবেন? দলের সংগঠকদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস কি থাকবে তাঁদের?
যে অভিযোগগুলো উঠেছে, সেগুলো খুবই ভয়াবহ। বিষয়গুলো খতিয়ে দেখার জন্য বিসিবি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটিতে যাঁরা আছেন, তাঁদের ওপর নির্ভর করছে স্বচ্ছ তদন্ত হবে কি না। তবে বিসিবির বাইরে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিটি হওয়া উচিত ছিল। কেননা, এই কমিটিতে বিসিবির সংশ্লিষ্টতা থাকায় তদন্তকাজে পক্ষপাত হতে পারে। এটা মাথায় রাখা দরকার। সব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে আমাদের নারী ক্রিকেটাররা নিরাপদ ক্যারিয়ার গড়ে তুলে সাফল্য অর্জন করুক—এটাই আমাদের কামনা।