হোম > মতামত > সম্পাদকীয়

অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট

সম্পাদকীয়

প্রায় সময়ই খবর হয়, যানজটের কারণে রোগীকে সময়মতো হাসপাতালে পৌঁছে দিতে পারে না অ্যাম্বুলেন্স এবং পথেই রোগীর মৃত্যু। ২০১৮ সালে সড়ক আন্দোলনের সময়টায় যখন দ্রুত ও সময়মতো হাসপাতালে পৌঁছাতে রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সের জন্য আন্দোলনকারীরা আলাদা লেন করে দিল, তখন জনমনে সত্যিই স্বস্তি এসেছিল কিছুদিনের জন্য।

প্রচলিত নিয়মে এ দেশে অ্যাম্বুলেন্সের জন্য আলাদা কোনো লেন নেই। যান অনুযায়ী পৃথক লেনের ব্যবস্থা থাকলেও তা কোনো চালক মানেন না। ট্রাফিক পুলিশও হিমশিম খায় এত এত যানবাহন সামাল দিতে। তাই যানজটে আটকে অ্যাম্বুলেন্সে রোগীর মৃত্যুর ঘটনা খবরে পরিণত হওয়াকে বন্ধ করা যায় না। কিন্তু রোগী নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স যাত্রা শুরু করার আগেই যদি কেউ তা আটকে দেয় এবং রোগী মারা যায়, সেটা নিছক দুর্ঘটনা হতে পারে না। এ ক্ষেত্রে যানজটে আটকে থাকা তো দূরের প্রশ্ন।

বিস্ময়কর হলেও এমন অমানবিক ঘটনা ঘটেছে নবজাত এক শিশুর সঙ্গে। ১৪ আগস্ট শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার ছাতিয়ানি গ্রামের নূর হোসেন সরদার ও রুমা বেগম দম্পতির নবজাতক জন্মের পরপরই শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভুগতে থাকে। শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে তাকে এক ঘণ্টা চিকিৎসা দেওয়ার পর ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। ঢাকা থেকে একটি অ্যাম্বুলেন্স রোগী নিয়ে শরীয়তপুর পৌঁছালে ওই অ্যাম্বুলেন্সটি ঠিক করা হয় নবজাতককে নিয়ে ঢাকায় যাওয়ার জন্য। সন্ধ্যায় শিশুটিকে নিয়ে স্বজনেরা অ্যাম্বুলেন্সে উঠলে সেটিকে আর যাত্রা করতে দেয়নি স্থানীয় অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই মারা যায় শিশুটি।

স্থানীয়দের বরাত দিয়ে আজকের পত্রিকায় ১৬ আগস্ট ছাপা হওয়া খবর থেকে জানা যায় সিন্ডিকেটের বিস্তারিত। শরীয়তপুর জেলার সিভিল সার্জনের গাড়িচালক আবু তাহের দেওয়ান। তাঁর একাধিক অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবসা রয়েছে। ছেলে সজীব দেওয়ান সেই ব্যবসা পরিচালনা করেন। একই সঙ্গে জেলার অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটও নিয়ন্ত্রণ করেন তাঁরা। অভিযোগ উঠেছে, সেদিন তাঁদেরই নেতৃত্বে একটা ব্যবসায়ী চক্র অ্যাম্বুলেন্সটিকে বাধা দেয়। তাঁদের অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া অন্য কোনো অ্যাম্বুলেন্সে তাঁরা রোগী নিতে দেবেন না। বাধা দেওয়া অ্যাম্বুলেন্সের চাবি নিয়ে চালককে তাঁরা মারধর করে এক ঘণ্টা আটকে রাখেন। এর মধ্যে শিশুটি মারা গেলে তাঁরা পালিয়ে যান।

ঘটনার ব্যাপারে দেওয়ান পরিবারের পিতা-পুত্রের কোনো বক্তব্য না পাওয়া গেলেও পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হেলালউদ্দিনের মন্তব্য পাওয়া গেছে। তিনি ঘটনা সম্পর্কে অবহিত আছেন বটে, কিন্তু লিখিত অভিযোগের অপেক্ষা করছেন। সিভিল সার্জন রেহান উদ্দীনও সত্যতা প্রমাণে ব্যবস্থা নেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। তাঁদের কথায় আমরা ভরসা রাখতে চাই। শুধু বিচার বা ছোটখাটো শাস্তিতে এই ঘটনার সুরাহা হবে না। ভেঙে দিতে হবে অ্যাম্বুলেন্সের সিন্ডিকেট। সমস্যার গোড়ায় হাত না দিলে তা ডালপালা গজিয়ে বহুদূর বিস্তৃত হওয়ার আশঙ্কা রয়ে যাবে।

আর কোনো বাবা-মায়ের বুক যাতে অমানবিক-অবিবেচক ব্যবসায়ীদের কারণে খালি না হয়, সেই দৃষ্টান্ত স্থাপিত হোক।

ইমরান খান

শাপলাপাতা মাছ

ছাদে মানুষ

উচ্চ রক্তচাপ

তফসিল, নির্বাচন ও জনগণ

ঢাকা শহর যখন মুমূর্ষু

মোবাইল কোম্পানির বাণিজ্য

চালের বস্তা

এটা কি গণতন্ত্রের ভাষা!

বাউলদের ওপর হামলা কেন