হোম > মতামত > সম্পাদকীয়

রাজনৈতিক সদিচ্ছা জরুরি

সম্পাদকীয়

বাংলাদেশের রাজনীতিতে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা দীর্ঘদিন ধরে চললেও ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর এই আলোচনা ভিন্নমাত্রা পেয়েছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের জন্য বেশ কয়েকটি কমিটি গঠন করেছে। এই কমিটিগুলো কাজ করছে। শিগগিরই কমিটিগুলোর প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। প্রশ্ন হলো, সংস্কার আগে হবে, নাকি নির্বাচন আগে। এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে ঐকমত্যের অভাব আছে বলে মনে হয়।

প্রতিটি পরিবর্তনের কেন্দ্রে থাকে ক্ষমতার ব্যবহার ও তার প্রকৃতি। আর ক্ষমতার সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক নিবিড়। তবে এখন ক্ষমতায় আছে একটি অরাজনৈতিক সরকার। এরা সংস্কারে আগ্রহী হলেও অধিকাংশ রাজনৈতিক দল চায় আগে নির্বাচন এবং সংস্কারকাজ শেষ করবে নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার।

২৪ ডিসেম্বর আজকের পত্রিকায় ‘ক্ষমতায় গেলে পাল্টে যেতে পারে রাজনৈতিক দলগুলো’ শিরোনামে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যাচ্ছে, একটি গোলটেবিল বৈঠকে উঠে এসেছে এই শঙ্কা যে রাজনৈতিক দলগুলো এখন যতই ভালো কথা বলুক না কেন, ক্ষমতায় গেলে তারা আবার বদলে যেতে পারে। বিষয়টি নিয়ে আমাদের গভীরভাবে ভাবা জরুরি।

গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, তা অযৌক্তিক নয়। অতীতে আমরা দেখেছি, ক্ষমতায় আসার পর রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান প্রায়ই পাল্টে যায়। সুশাসনের প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করে স্বার্থপর রাজনীতির চর্চা চলে। সে জন্য যেকোনো সংস্কার শুধু প্রস্তাবে সীমিত থাকলে চলবে না, বাস্তবায়নে দৃঢ় সদিচ্ছাও থাকতে হয়।

নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কার যে অতিজরুরি, সেটা নিয়ে বিতর্কের সুযোগ নেই। ড. বদিউল আলম মজুমদারের নেতৃত্বে গঠিত কমিশন নির্বাচনী ব্যবস্থার অসমতা দূর করে গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করতে ইতিবাচক পরামর্শই হয়তো দেবে। তবে, এককভাবে কোনো অস্থায়ী সরকার বা কমিশনের দায়িত্ব পালন যথেষ্ট নয়। পরিবর্তনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য নির্বাচিত সরকার এবং জনসাধারণকেও সমানভাবে আগ্রহী হতে হবে।

স্থানীয় সরকারব্যবস্থার ক্ষেত্রে ড. তোফায়েল আহমেদের প্রস্তাবগুলোও গুরুত্বপূর্ণ। স্থানীয় সরকারকে কেন্দ্রভিত্তিক শক্তি না করে একটি সুষম ও দায়বদ্ধ কাঠামোয় আনা হলে প্রকৃত বিকেন্দ্রীকরণ সম্ভব। নারীদের জন্য ঘূর্ণমান সংরক্ষণ পদ্ধতি একটি সময়োপযোগী ভাবনা, যা প্রতিনিধিত্ব আরও কার্যকর করতে পারে।

বড় প্রশ্ন হলো, রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছার ঘাটতি থাকলে এসব সংস্কারের ভবিষ্যৎ কী? অতীতে দেখা গেছে, পক্ষপাতমূলক রাজনৈতিক অবস্থান ও সুশাসনের অভাবে অনেক ভালো উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে।

প্রতিটি সংস্কারের উদ্দেশ্য শুধু আইন তৈরি করা নয়, তার চেয়ে বড় কথা, তার কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করা। তাই এই মুহূর্তে আমাদের প্রয়োজন সম্মিলিত সচেতনতা। নাগরিকদের শুধু চাহিদা জানানো নয়, বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণেও সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে।

পরিবর্তন সম্ভব কিন্তু তা আদায় করতে হবে দীর্ঘমেয়াদি ধৈর্য এবং মনোভাবের পরিবর্তনের মাধ্যমে। সুষ্ঠু নির্বাচন এবং সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য শক্তিশালী রাজনৈতিক সদিচ্ছা, স্বচ্ছতা এবং নাগরিক সচেতনতার সমন্বিত প্রয়াসের বিকল্প নেই।

আজ বিজয়ের দিন

রিক্রুটিং এজেন্সির প্রতারণা

গুলিবিদ্ধ হাদি ও নির্বাচন

নির্বাচনের পথে দেশ

কেন থমকে যাচ্ছে মেট্রোরেল

স্পর্ধা

মোহাম্মদপুরে জোড়া খুন

সরকারি হাসপাতাল বলে কথা

তরুণদের ভোট

ধর্ষণ ও আত্মহত্যা