অনেকেরই মে মাসের ১৯ তারিখের এক অদ্ভুত ঘটনার কথা মনে পড়ে যাবে। ইচ্ছে হয়েছিল, তাই ধানমন্ডির একটি বাড়ি ঘেরাও করেছিলেন উত্তেজিত জনতা আর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীরা। জোর করে সে বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করেছিলেন তাঁরা। এই উত্তেজিত কর্মীদের মধ্যে ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মোহাম্মদপুর থানার তৎকালীন সমন্বয়ক সাইফুল ইসলাম রাব্বি। বলা নেই-কওয়া নেই, যে কাউকে আওয়ামী লীগের দোসর নাম দিয়ে মবের ভয় দেখিয়ে সে সময় হামলার ঘটনা ঘটে চলেছিল একের পর এক। পুলিশ অবশ্য ধানমন্ডির এই বাড়িকে উপলক্ষ করে মব সন্ত্রাস ঘটতে দেয়নি। বরং বৈষম্যবিরোধীদের অবাক করে দিয়ে যে কয়েকজনকে হেফাজতে নেয়, তাঁদের একজন ছিলেন এই রাব্বি। পুলিশের সঙ্গে তাঁর কথা-কাটাকাটির সময় বোঝা গেছে, কোনো কিছুরই পরোয়া তিনি করেন না। এমনকি, পুলিশ যখন আইনের কথা বলছে, তখনো তিনি পুলিশের ওপর রাগ দেখাচ্ছিলেন।
সেই রাব্বিকে যখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতা আবদুল হান্নান মাসউদ পুলিশ হেফাজত থেকে ছাড়িয়ে আনেন, তখন অনেক সমালোচনা হয়েছিল। মুচলেকা তো দেওয়া হয়েছে, কিন্তু তাতে কি রাব্বির কর্মকাণ্ডের ইতি ঘটেছে? ইতি যে ঘটেনি, তার প্রমাণ পাওয়া গেল গত রোববার রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বছিলা এলাকার একটি বেসরকারি ক্লিনিকে চাঁদা দাবির অভিযোগে যে পাঁচজনকে আটক করেছে সেনাবাহিনী, তাঁদের মধ্যে রাব্বির দেখা পেয়ে। আটক হওয়া পাঁচজন ‘বীরদর্পে’ দাঁড়িয়ে আছেন, এমন একটা ছবিও ছাপা হয়েছে আজকের পত্রিকায়।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ‘পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল রোববার সন্ধ্যায় সেফ হাসপাতাল নামের একটি ক্লিনিকে শিশুর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ‘সমন্বয়ক’ পরিচয়ে কয়েকজন উত্তেজনা তৈরি করেন এবং হাসপাতালের মালিকের কাছে চাঁদা দাবি করেন। হাসপাতালের মালিক ফোন করলে সেনাবাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পাঁচজনকে আটক করেন। পরে তাঁদের বিরুদ্ধে থানায় চাঁদাবাজির অভিযোগ করেন হাসপাতালের মালিক।’
এরপর আর কিছু কি বলার আছে? মওকা মেলে—এমন কোনো ঘটনা ঘটলেই রাব্বি বা তাঁর মতো কিছু মানুষের মন বেসামাল হয়ে যায়। কীভাবে ভয় দেখিয়ে চাঁদা আদায় করবেন, সেটাই তাঁদের কাছে মুখ্য বিষয় হয়ে ওঠে। এই প্রবণতা এখনো কমছে না, সেটাই বিস্ময়কর। এভাবে চলতে থাকলে কিছুদিন পর স্বাধীনভাবে কোনো ব্যবসা চালিয়ে নেওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। রাব্বির মতো বিনা পুঁজিতে ব্যবসার এই অমূল্য সুযোগটির সদ্ব্যবহার যাঁরা করছেন, তাঁদের থামানোর কোনো উপায় এখনো কি ভেবে বের করা গেছে? কোনো রাজনৈতিক দল কি বলেছে, এ ধরনের মতলববাজদের বর্জন করুন, কঠোর শাস্তি দিন। মুখে হয়তো বলা হয়, কখনো কখনো দু-একজনকে দল থেকে বহিষ্কারও হয়তো করা হয়, কিন্তু আকাশছোঁয়া লোভের অধিকারীরা এই দুর্বৃত্তদের কঠোর শাস্তি না দিলে কি এই মাস্তানি কমবে? প্রশ্ন রইল সরকারের কাছেও।