উত্তেজনা ক্রমেই বাড়ছে। শুধু রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেই নয়, সাধারণ মানুষের মনেও জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ককটেল, বাসে আগুন, জুলাই সনদ বিষয়ে রাজনৈতিক বিভিন্ন দলের বিতর্ক ইত্যাদি কারণে অস্থিরতা বাড়ছে।
জুলাই সনদ নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনার যে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল, তা পার হয়ে গেছে। কোনো আলোচনা হয়নি। বিএনপি বলছে, নির্বাচন পেছানো মানেই দেশের সর্বনাশ। জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনের আগে গণভোট, জুলাই আদেশ বাস্তবায়নের আদেশ জারিসহ পাঁচ দাবিতে আন্দোলন করছে। এসব বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আগামীকাল বৃহস্পতিবার কোনো সিদ্ধান্ত আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সহিংসতার আশঙ্কায় সারা দেশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের নিরসন না করে শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা দিয়ে এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। ঠান্ডা মাথায় সব পক্ষ একসঙ্গে বসে কোনো ফলপ্রসূ সিদ্ধান্তে আসতে পারলেই কেবল এই সংকট থেকে মুক্তি সম্ভব।
সব রাজনৈতিক দলই জনতা কী চায়, সে ব্যাপারে নিজেদের ভাবনাকেই তুলে ধরার চেষ্টা করে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে বিভক্ত মানুষের ভাবনা বিভক্তই হবে। কিন্তু সাধারণ জনগণ কয়েকটি ব্যাপারে একমত, সেই বিষয়গুলোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হলেই শুধু দেশবাসীর আকাঙ্ক্ষাগুলো মিলে যাওয়ার একটা দিশা পাওয়া যাবে।
গণতন্ত্র শক্তিশালী করতে হলে যেসব বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া দরকার, সেগুলো নিয়ে কিছুটা আলোচনা হতে পারে। যেসব বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ, সেগুলো নিয়ে সব রাজনৈতিক দলই নিশ্চয় ভাববে এবং একটা সিদ্ধান্তে আসবে।
সব গণতান্ত্রিক দেশেই স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পক্ষে থাকে সাধারণ জনগণ। সে পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে কি না, সেদিকে দেশের জনগণের দৃষ্টি থাকবে। নির্বাচন কমিশন স্বশাসিত, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ পদ্ধতি অনুসরণ করলে এই সংকটের একটা সুরাহা হবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে, জনগণের এই আকাঙ্ক্ষাও নতুন নয়। ঘুষ-দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতির সমাধি রচিত হবে, এই অঙ্গীকার দেখতে চায় জনগণ। ক্ষমতাবানেরাও যেন আইনের আওতার বাইরে না থাকে, তা নিশ্চিত করার ওপর নির্ভর করে দেশটা সত্যিই গণতান্ত্রিক পথে চলবে কি না। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং মুক্ত গণমাধ্যম জরুরি। জনগণ চায়, তথ্যপ্রবাহে কোনো বাধা থাকবে না। অংশগ্রহণমূলক রাজনীতি না হলে রাজনীতি একদেশদর্শী হয়ে যায়, স্বৈরাচারী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। এই ধরনের প্রবণতা যেন নির্বাচনের পর না আসে, সেটা নিশ্চিত হতে পারে ঐকমত্যের ভিত্তিতে। শুধু নির্বাচনের সময়ই নয়, নিয়মিতভাবে জনগণের মতামত নেওয়ার মতো পরিবেশ বা ঐতিহ্য সৃষ্টি করতে হবে। জনবান্ধব প্রশাসন হচ্ছে কি না, অর্থনৈতিক ন্যায্যতা পাওয়া যাচ্ছে কি না, সেগুলোও রাখতে হবে বিবেচনায়। আর নাগরিকের স্বাধীনতা, তার নিরাপত্তার নিশ্চয়তাও সাধারণ জনগণ চায়।
এসব চাওয়া-পাওয়ার জন্য বিরোধ ভুলে একটি জনগণের রাষ্ট্র গড়ে তোলার জন্য সব দলের প্রতি আহ্বান জানাই।