গত বুধবার ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স আয়োজিত ‘রোজায় নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় রাখা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় শঙ্কিত হওয়ার মতো বেশ কিছু তথ্য বেরিয়ে এসেছে। নিত্যপণ্যের পাইকারি বাজারে যে অস্বস্তি চলছে, তারই বিশদ আলোচনা হয়েছে এই সভায়। বোঝা যাচ্ছে, সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়া না হলে অচিরেই, বিশেষ করে রমজানের আগেই, নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা দেখা দেবে।
কথা সত্য, রাজনৈতিকভাবে এখন অস্থিরতা বিদ্যমান। রাজনীতির প্রভাব সর্বত্রই পড়ে। বাজারও তার বাইরে নয়। বাজার থেকে সব অপশক্তি দূর করতে হলে সরকারিভাবে যে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হয়, তা এখন খুব বেশি কার্যকর নয়। লাগামহীনভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়ানো হলে ভোক্তার পকেটের ওপর যে চাপ পড়ে, তা নিয়ে সরকারি মহলের কাউকে খুব একটা উচ্চবাচ্য করতে দেখা যাচ্ছে না। আর সাধারণ মানুষও সবকিছু সহ্য করে নিতে বাধ্য হচ্ছে। কিন্তু দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে পণ্যজগৎ নিয়ে বিদ্যমান অস্থিরতা অতিষ্ঠ করে তুলতে পারে ভোক্তার জীবনকে।
কেন এমন ভীষণ অস্থির জায়গায় এসে পৌঁছাল বাজার, তা নিয়ে কথা হয়েছে এই সভায়। পণ্য সরবরাহে বাধা, চাঁদাবাজির দৌরাত্ম্য আর পণ্যের লেবেলে করপোরেটদের লাগামহীন দাম বসানোর অপতৎপরতা ভোক্তাপর্যায়ে চাপ বাড়াচ্ছে—এ কথাগুলো উঠে এসেছে। এর ফলে জনগণের পকেট কাটা যাচ্ছে। রমজানে যদি লাগামহীনভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়, তাহলে সে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হবে।
মতবিনিময় সভায় ঢাকার বিভিন্ন পাইকারি ও বাণিজ্য সংগঠনের ব্যবসায়ী নেতারা অভিযোগ করে বলেন, দেশে চাঁদাবাজির প্রলয় শুরু হয়েছে। ট্রাক থেকে পণ্য ওঠানো-নামানো পর্যন্ত ঘাটে ঘাটে চাঁদা দিতে হচ্ছে। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকেও চাঁদা দিতে হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ছত্রচ্ছায়ায় চাঁদাবাজি এখন সংগঠিত রূপ নিয়েছে। মোড়কজাত পণ্যের অজুহাতে করপোরেট কোম্পানিগুলো বাজার দখল করছে। তাঁরা এ-ও বলেন, প্রশাসন সব জানে, তারপরও নিশ্চুপ।
ব্যবসায়ী ও বাণিজ্য সংগঠনের নেতাদের কথা যদি সত্যি হয়, তাহলে নিত্যপণ্য বাজারে এক ভয়াবহ অরাজকতার চিত্রই প্রস্ফুটিত হয়। একজন ব্যবসায়ী নেতা যখন বলেন, ‘৩ টাকার মোড়ক লাগিয়ে ৪০ টাকা দাম বাড়ায়, এটাই আজকের বাস্তবতা। অথচ এসব কিছুর দায় ভোক্তার ওপরই পড়ছে।’ তখন সত্যিই বিচলিত হতে হয়।
এফবিসিসিআইয়ের আলোচনায় যেটুকু বোঝা গেছে, তাতে মনে হয় স্থানীয় উৎপাদনে গ্যাস-সংকট ও লজিস্টিক জটিলতা না মিটলে রমজান মাসে চিনি ও তেল নিয়েও লঙ্কাকাণ্ড বেধে যাবে। চাঁদাবাজি বন্ধ না হলে পণ্যবাজারের সমূহ বিপদ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ দিকটা কতটা সামাল দিতে পারবে, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়। অসাধু ব্যবসায়ীরা নির্বিঘ্নে অনাচার চালিয়ে গেলে এই সংকট থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে না। অর্থনীতিকে ভোক্তামুখী করতে না পারলে সামনে যে বিপদ ধেয়ে আসছে, তা মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে পড়বে। এখনই এসব নির্মূলে সজাগ হওয়া দরকার।