হোম > মতামত > সম্পাদকীয়

দারিদ্র্য

সম্পাদকীয়

গত তিন বছরে বাংলাদেশে দারিদ্র্য যে হারে বেড়েছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) এক সাম্প্রতিক গবেষণা প্রতিবেদনে এই ভয়াবহ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। সেই তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে দারিদ্র্যের হার ২৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ। সরকারি হিসাবে ২০২২ সালে তা ছিল ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ, যা আগের তুলনায় ৯ দশমিক ২৩ শতাংশ বেশি।

গবেষণার তথ্যমতে, প্রধান তিনটি কারণ যেমন কোভিডের কারণে বহু মানুষের চাকরি চলে যাওয়া, মূল্যস্ফীতি এবং রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে এই ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন বৃদ্ধি নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করেছে। চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা ব্যবসায়িক পরিবেশকে প্রভাবিত করেছে, যা নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বাধা সৃষ্টি করছে। মূলত এই কারণগুলোই দারিদ্র্য বৃদ্ধিতে প্রধান অনুঘটকের ভূমিকা পালন করেছে। একই সঙ্গে শহরের পরিবারগুলোতে আয় কমেছে, কিন্তু খরচ বেড়েছে। গ্রামে আয়ের সামান্য বৃদ্ধি হলেও তা উচ্চ মূল্যস্ফীতির তুলনায় নগণ্য। ফলে মানুষের জীবনযাত্রার মান নিম্নমুখী হয়েছে এবং অনেকেই দারিদ্র্যের শিকার হচ্ছেন।

গত এক বছরে বর্তমান সরকার নানা সেক্টরে সংস্কারের দিকে জোর দিলেও, দরিদ্র মানুষের অবস্থা পরিবর্তনের জন্য তেমন কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। গত সরকারের আমলে চলমান নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ঊর্ধ্বগতি কয়েক মাস নিয়ন্ত্রণে থাকলেও পরিস্থিতি আবার আগের জায়গায় চলে গেছে।

এই ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবিলায় দরকার জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করা। শুধু জিডিপি প্রবৃদ্ধির ওপর মনোযোগ না দিয়ে আমাদের উচিত দারিদ্র্য, বৈষম্য এবং সাধারণ জনগণের কল্যাণের দিকে মনোযোগ দেওয়া। সে জন্য দরকার একটি ‘জনমুখী’ অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা। জরুরি ভিত্তিতে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে, বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে এবং খাদ্য ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

দারিদ্র্য কমাতে জরুরি করণীয় হলো আয়বৈষম্য কমানো, যাতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল সমাজের সব স্তরের মানুষ পায়। কিন্তু আয়বৈষম্য কমাতে রাষ্ট্র অনাগ্রহী থাকে। একই সঙ্গে দরিদ্র শ্রেণির মানুষেরা তাঁদের অবস্থানের উত্তরণ ঘটাক—রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এ রকম সহযোগিতার মনোভাবও দেখা যায় না। এ কারণে জাতীয় বাজেটে দরিদ্র মানুষের জন্য নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতায় নানা প্রকল্প গ্রহণ করতে দেখা গেলেও, তা দিয়ে এই শ্রেণির মানুষ খুব একটা উপকৃত হন না।

এই শ্রেণির মানুষেরা যেখানে ভালোভাবে পেট পুরে খেতে পান না, সেখানে তাঁদের চিকিৎসা তো উচ্চাভিলাষী ব্যাপার। সে জন্য তাঁদের রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ, তাঁদের চিকিৎসা করার সামর্থ্য নেই।

এই গবেষণাটি কেবল একটি পরিসংখ্যান নয়, এটি আমাদের জন্য একটি সতর্কবার্তা। রাষ্ট্রকেই দারিদ্র্য লাঘবে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

বড়দিনের শুভেচ্ছা

শিক্ষকের ক্ষমতা

ধরা হোক হামলাকারীদের

কী ভয়ংকর!

শান্তি এখন খুব প্রয়োজন

শান্ত হোন

সংযোগ সড়কহীন সেতু

যা করণীয়

নিরাপত্তাহীনতা

আজ বিজয়ের দিন