হোম > মতামত > উপসম্পাদকীয়

বিভাজিত বোধ

রুশা চৌধুরী

রুশা চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত

প্রাচীন মানুষ নিঃসঙ্গ অবস্থা থেকে যখন দলবদ্ধ হতে চেয়েছিল তাদের মাথায় কোন প্রয়োজনটা সবচেয়ে বেশি জরুরি ছিল? নিরাপত্তা, নিয়ম, স্বস্তি নাকি একসঙ্গে সবকিছু? হয়তো এভাবেই ধীরে ধীরে একসময় পরিবার তৈরি করে ফেলেছিল মানুষ! এর সঙ্গে তৈরি হয়েছিল সমাজও।

‘পরিবারই’ কি মানুষের দলবদ্ধতার বা সেই বিনির্মাণের মূলমন্ত্র ছিল? ‘ধরা’ বা ‘অধরা’ সব সম্পর্ক এক সুতায় জড়িয়ে নেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টার শুরু হয়তো এই ‘পরিবার’ থেকেই। এভাবে একত্রিত হয়ে থাকতে থাকতে মানুষ একসময় বিশ্বাস করতে শুরু করে দিয়েছিল যে তারা অনেকের মাঝে, পরিবারের মাঝে, সমাজের নিয়মের মাঝেই থাকতে চায়। বারবার মানুষ নিজেকে বুঝিয়ে এসেছে, ‘সঙ্গীহীন জীবন একদম বৃথা’।

তারপর সময় বয়ে গেল...বয়ে যাওয়া সময়ের নানান সংঘাত, সংঘর্ষ মানুষের মনে অনেক রকম প্রশ্ন এনে দিল। দলবদ্ধ হয়েও আবার দ্বিধা-বিভক্ত হলো মানুষ। একদল বলল, ‘আসলে কি সঠিক এই সঙ্গীহীন বৃথা জীবনের কাঠামোটা? নাকি এই সবই এক মায়াবী খোলনলচে পরা বৃথা অবয়ব মাত্র?’

আর একদল বলল, ‘যদি বৃথাই হবে তাহলে কেন প্রত্যেক মানুষ জীবনের প্রতিটা সম্পর্কের মাঝেই নির্জনতা খোঁজ করে? কেন মানুষের নিভৃত হৃদয়ের নির্জনতা ঘোচে না?’

পুরোনো বাড়ি যেমন একসময় ভেঙে ফেলা হয় মানুষেরই প্রয়োজনে, তেমনি মানুষের নিজের একান্ত আপন কিছু সম্পর্কও ভেঙে যেতে অথবা ফুরিয়ে যেতে লাগল। কেন এই ফুরিয়ে যাওয়া? কেন বারবার নিজের মাঝে...শুধু নিজের মাঝে ডুব দেওয়া? এই ‘কেন’র নামও খুঁজে পেল মানুষ! এর নাম ‘আত্মকেন্দ্রিকতা’।

আত্মকেন্দ্রিক যেই জলস্রোত আজ চারপাশে তার উৎসধারা একদিন মানুষই খুঁজে বের করেছিল। এই উৎস মানুষের মনের সেই চিরন্তন ‘ষড়রিপুরই’ আরেক রূপ যেন। সেই প্রাচীনকাল থেকে এই ‘ষড়রিপুই’ মানুষকে একা হয়ে থাকতে আর রাখতে শিখিয়েছিল।

আমাদের দুঃখবোধ, আমাদের বিষণ্নতা, আমাদের একাকিত্ব, সবাইকে হারিয়ে দেওয়া, আর সবকিছুর শেষে আমাদের শুধু একা সবটাতে জিতে যাওয়ার অদম্য স্পৃহা—এই সবই কি সেই কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ আর মাৎসর্য থেকেই উৎপন্ন নয়?

জীবন আজ আর বহতা নদী নয়...কখনো সে হাইরাইজ বিল্ডিং, উন্নত দেশের হাতছানি, আবার কখনো যাদের হাত ধরে বেড়ে উঠেছি সেই হাতগুলো নির্মমভাবে ছাড়িয়ে নেওয়ারই অপর নাম যেন। এক অদ্ভুত চেইন রি-অ্যাকশন চলছে! খাবি খেতে খেতে ক্লান্ত হচ্ছে যে, তাকে ফেলেই চলে যাচ্ছে অন্যরা। থেমে থাকার বোকামি ভুলে যেতে হবে, ভুলে যেতে হবে অপ্রয়োজনীয় সবকিছু। এই অসম্ভব গতিময় জীবনে তাই আজকাল জীবনকে চেনার জন্য নেটফ্লিক্স বা অ্যামাজন দেখা লাগে। রবীন্দ্রনাথ আজও টিকে আছেন তবে চর্যাপদ, লালন, মাইকেলরা হারানোর পথে। আমাদের বাউলিয়ানাও বাজারে বিকোচ্ছে! করপোরেট দুনিয়ায় শাড়ি-পাঞ্জাবির নকশায় ঐতিহ্য ধুঁকতে ধুঁকতে বাঁচতে চাইছে।

এইসব আবোলতাবোল কথাগুলো কেন মনে এল? আজ খুব নিভৃত আলোর দিন ছিল। অবাক বিস্মিত আমার সামনে অসময়ের ফুলের ভারে নতজানু শিউলি ফুলে ভরা গাছ! হাতের মাঝে সেই প্রাচীন হাত যার সাহায্য ছাড়া আজকের এই আমার কোনো অস্তিত্বই পাওয়া যেত না। তবু ছেড়ে এলাম সেই হাত। যেমন করে অনেক বছর আগে আরও অনেক কিছু ছেড়ে এসেছিলাম। আমার সামনে, চারপাশে অজস্র হাত আর হাতের হাতছানি...যেই হাতটা সবচেয়ে বেশি ধরে থাকতে চাই তাকেই ছেড়ে দিতে হবে সবার আগে। অথবা আমার ভরা মুঠো আসলে শূন্য—এই সবকিছু পৃথিবীতে সামান্য মানুষ হয়ে জন্মাবার ভ্রমমাত্র!

এভাবে চলতে থাকলে কি সুষ্ঠু নির্বাচন হবে

প্রবীণ জীবনে বন্ধুত্বের গুরুত্ব

সংকট, সম্ভাবনার সন্ধিক্ষণে বাংলাদেশ

গণতন্ত্রের সন্ধিক্ষণ: তারেক রহমানের দেশে ফেরা

কেন পুড়িয়ে মারার মধ্যযুগীয় বর্বরতা

তারেকের প্রত্যাবর্তন: রাজনৈতিক ভবিষ্যতের এক মাহেন্দ্রক্ষণ

বিশ্বজুড়েই কেন গণমাধ্যম আক্রান্ত

সাইবার যুদ্ধ ও নজরদারি প্রযুক্তি: বৈশ্বিক নিরাপত্তা কোন পথে

মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে তুরস্কের নয়া ভূমিকা

রাষ্ট্রের মালিকানা এল না জনগণের হাতে