হোম > মতামত > উপসম্পাদকীয়

পরীমণি নিশ্চয়ই দোষী

রুমা মোদক

পরীমণির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অপরাধটি আমি খুঁজে পেয়েছি এবং সম্ভবত এর জন্য তাঁর শাস্তি অবশ্যম্ভাবী। যদিও এর সব কটিই সবার জানা এবং বহুল আলোচিত। তবু আবার বলি, তিনি হাজার কোটি টাকা লোপাট করেননি। খুন, হত্যা, গুমের মতো অপরাধ করেননি, মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কারণে তা ইতিমধ্যেই সবাই জেনে গেছেন।

যেসব অভিযোগে রাষ্ট্রের বিশাল বহর নিয়ে পরীমণিকে গ্রেপ্তার করা হলো, সেসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রথম দিকে শুনলাম পরীমণি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এবং নামধাম দিচ্ছেন। সে অনুযায়ী তালিকা করা হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরে দেখলাম, ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে তাঁরা বলছেন, তালিকা করা সম্ভব নয়!

আমার কিছু প্রশ্ন রয়েছে। পরীমণি যে আবেদন নিয়ে চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে এসেছিলেন, একজন উঁচুদরের অভিনয়শিল্পী হয়ে নিজের ক্যারিয়ার তৈরি করার সব গুণাবলি ছিল তাঁর। আমাদের চলচ্চিত্রশিল্প তার কতটুকু ব্যবহার করেছে? বা ব্যবহার করার মতো অবস্থায় আমাদের ইন্ডাস্ট্রি আদৌ আছে কি? বরং অন্যভাবে বলি, যে অমিত সম্ভাবনা ছিল সত্তর, আশি বা নব্বইয়ের দশকে, আজ সেই অবস্থান আদৌ ধরে রাখতে পেরেছে? ঈদ মৌসুমে যে আমরা আমাদের অগ্রবর্তী কয়েকটি প্রজন্ম অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করতাম কয়টি ছবি মুক্তি পাবে, কোন কোন হলে মুক্তি পাবে? সেই হলগুলো এখন কই? চলচ্চিত্রে শাবানা-ববিতার মতো, শাবনূর-পপির মতো ক্রেজ এখন কই? হলের সামনে টিকিটের লম্বা লাইন কিংবা টিকিটের কালোবাজার এখন এই প্রজন্মের কাছে রূপকথার গল্প।

আজ যাঁরা পরীমণির সঙ্গে তুলনায় বারবার শাবানা-ববিতার প্রসঙ্গ তুলে আনেন, তাঁরা যৌবনে চলচ্চিত্রে পেশাদারত্বের সঙ্গে চুটিয়ে অভিনয় করেছেন, আয় করেছেন। বার্ধক্যের পর্যায়ে অনেকেই সময়মতো নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন। সেদিন শিল্পাঙ্গনের একজন কর্তাস্থানীয় ব্যক্তিত্ব আক্ষেপ করে বলছিলেন, চলচ্চিত্রের এই মুরব্বিস্থানীয় অভিনেত্রীদের তিনি ডেকেও কোনো অনুষ্ঠানে আনতে পারেন না। তাঁরা তাঁদের আগের গৌরবময় অতীত ধুয়েমুছে সাফ করে দিতে চান, পারলে অস্বীকার করেন। তাঁদের কৃতকর্মের জন্য গর্বিত হওয়া দূরে থাক, তাঁরা এই পরিচয় দিতে কুণ্ঠিত। তাঁরা যা করেছেন, তার প্রতি বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধা তাঁদের মধ্যে কাজ করে না। এই ভঙ্গুর উত্তুঙ্গ প্রৌঢ় প্রজন্মের জন্যই আমাদের চলচ্চিত্রশিল্পের আজ এই দুরবস্থা।

যাত্রা, চলচ্চিত্র সব ধ্বংস করে দিয়ে আমরা পরীমণির কাছে চাইছি ছ্যাঁচড়ের মতো দু-চার পয়সা রোজগার করে কোনোরকমে চেয়েচিন্তে জীবন কাটিয়ে সতীত্বের পরাকাষ্ঠা দেখাবে। অথচ তাঁর সামান্য চোখের ইশারায় তিনি বুভুক্ষু পুরুষকে বাগে নিতে পারেন, তুড়ি মেরে আয় করে নিতে পারেন অঢেল অর্থ, বিলাসী জীবন। শরীরের বিনিময়ে যে অর্থবিত্ত সহজলভ্য, তা গ্রহণ না করে নিজেকে সতী-সাধ্বী রাখার দায় কেবল পরীমণির।

কিন্তু পরীমণির আসল দোষ আমি যা খুঁজে পেয়েছি তা হলো, তাঁর ‘চির উন্নত শির’। একটা প্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে যা করে বা করেছে, তার দায় তাঁর একার নয় কোনোভাবেই। আর পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র, মিডিয়া, প্রচলিত জনমানস এবং তাঁর সঙ্গলাভকারীরা পর্যন্ত যেভাবে তাঁকে পিষে মারার চেষ্টা করছে, পরীমণি সেই ভণ্ডদের মুখে একটা তীব্র চপেটাঘাত।

ধরা পড়ার পর পরীমণি যদি লজ্জায় আঁচলে মুখ ঢাকতেন, তাঁর তর্জনী আমাদের সো কল্ড ভদ্রসমাজের দিকে না তুলতেন, বোধ হয় আমরা তাঁর অপরাধ কিছু লঘু করে দেখতাম। তাঁর এই ঔদ্ধত্য আমাদের অভ্যস্ত চোখে বড়ই বেমানান। আমরা যে তাঁর ঝাঁজ সহ্য করতে পারছি না, তা স্বীকারেরও সৎ সাহস আমাদের নেই। আমাদের এই অসততা আর ভণ্ডামির মাশুল পরীমণি কতটা দেন, তা-ই এখন দেখার বিষয়। সময়ের চেয়ে অগ্রসর নারীকে কবে কোন সমাজ ধিক্কার না দিয়ে, শাস্তি না দিয়ে গ্রহণ করার দুঃসাহস দেখাতে পেরেছে?

লেখক: সাহিত্যিক

ছাত্র সংসদের কাজ গুন্ডামি করা নয়

ঘটনার ঘনঘটা নিয়ে বিদায় নিচ্ছে বছর

এভাবে চলতে থাকলে কি সুষ্ঠু নির্বাচন হবে

প্রবীণ জীবনে বন্ধুত্বের গুরুত্ব

সংকট, সম্ভাবনার সন্ধিক্ষণে বাংলাদেশ

গণতন্ত্রের সন্ধিক্ষণ: তারেক রহমানের দেশে ফেরা

কেন পুড়িয়ে মারার মধ্যযুগীয় বর্বরতা

তারেকের প্রত্যাবর্তন: রাজনৈতিক ভবিষ্যতের এক মাহেন্দ্রক্ষণ

বিশ্বজুড়েই কেন গণমাধ্যম আক্রান্ত

সাইবার যুদ্ধ ও নজরদারি প্রযুক্তি: বৈশ্বিক নিরাপত্তা কোন পথে