হোম > মতামত > উপসম্পাদকীয়

যে সত্য ট্রাম্প বদলাবেন না

অভিবাসীদের প্রয়োজন যুক্তরাষ্ট্রের

বিনিয়ামিন অ্যাপেলবাম

ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভ। ছবি: সংগৃহীত

গত বছর আমি অভিবাসন সম্পর্কে লেখার জন্য অনেক সময় ব্যয় করেছি। বোঝার চেষ্টা করেছি এই দেশে অভিবাসনের অর্থ কী, বর্তমান ব্যবস্থায় কী ভাঙন ধরেছে এবং আমরা কীভাবে এটি ঠিক করতে পারি।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয়বারের মতো অভিষেক অনুষ্ঠানের আগে আমি উদ্বেগের সঙ্গে তাঁর অভিবাসন দমনের পরিকল্পনাগুলো দেখেছি। আমি সন্দেহাতীতভাবে মনে করি যে এই দেশে কে প্রবেশ করে, কে বাস করে এবং কাজ করে তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তবে অভিবাসন কমানো অথবা ইতিমধ্যে এখানে যাঁরা বাস করছেন, তাঁদের ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করা একটি গুরুতর ভুল হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন প্রয়োজন। অভিবাসন হলো এই জাতির রকেটের জ্বালানির মতো। অভিবাসনের জন্য এই দেশে এমন লোকেরা আসেন, যাঁরা সৃজনশীলতা, উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও সম্পদ সঙ্গে করে নিয়ে আসেন। অভিবাসীরা হলেন এমন মানুষ, যাঁদের দক্ষতা, প্রতিভার পাশাপাশি একটি নতুন দেশে যাওয়ার জন্য প্রায়ই একটি কঠিন পথ পাড়ি দেওয়ার সাহস রয়েছে। মার্কিন সমাজে তাঁদের অবদান রাখার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। তাঁদের সম্পর্কে একটি মজার কথা হলো—আমরা আমেরিকানরা বেশির ভাগই অভিবাসীদের বংশধর, যদিও আমরা নিজেরা অভিবাসী হয়ে আসিনি!

এটাও সত্য যে সম্ভবত আগের চেয়ে এখন অভিবাসী বেশি প্রয়োজন যুক্তরাষ্ট্রের। কারণ আমাদের জনসংখ্যা ধরে রাখার জন্য পর্যাপ্ত শিশু আমাদের নেই।

উন্নত বিশ্বের কিছু জায়গায় ইতিমধ্যেই এটি ঘটছে। জাপান এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। প্রায় ১৫ বছর আগে থেকে তাদের জনসংখ্যা কমতে শুরু করে। উন্নত দেশগুলোর মধ্যে এটিই প্রথম জনসংখ্যা কমার ঘটনা। সেই সময় থেকে আমরা জাপানের বিশাল অংশ খালি হতে দেখেছি। অনেক এলাকা লোকশূন্য এবং অনেক বাড়িঘর পরিত্যক্ত। শনিবার দিন চিঠি পৌঁছে দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত ডাককর্মীও আর নেই।

যখন জনসংখ্যা ক্রমাগত কমছে, তখন এটি একটি বড় সমস্যা এবং এটি এমন এক সমস্যা, যা এড়ানো আমাদের জাতীয় স্বার্থের জন্য অত্যন্ত জরুরি। সত্যিই বাস্তবে এটি কেমন দেখাচ্ছে তা বুঝতে আমি কয়েকটি শহর ঘুরে দেখেছি। প্রথমে হিউস্টন। এটি এমন একটি শহর, যেখানে লাখ লাখ অভিবাসী আসায় জনসংখ্যা বেড়েছে। তারপরে বার্মিংহাম গেছি। কিন্তু শহরটি এমন এক অঙ্গরাজ্যে (অ্যালাবামা), যেখানে অভিবাসীদের আসা কঠিন এবং এখানকার পরিবেশও অপ্রীতিকর হয়ে উঠেছে। ফলে জনসংখ্যাও থমকে গেছে। আমার মনে হয়, এই দুটি শহরের মধ্যে বৈপরীত্যের কারণ হচ্ছে কেউ অভিবাসীদের স্বাগত জানায়, আবার কেউ ভয় দেখায়।

১৯৮০-এর দশকে হিউস্টনে আধুনিক অভিবাসন সত্যিই তুঙ্গে ওঠে। এরপর শুরু হয় শহরটির মন্দার দিন। জ্বালানি তেলশিল্পে এক কঠিন সময় আসে এবং এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত অনেক কর্মী হিউস্টন ছেড়ে চলে যান। তখন শহরের কিছু বাড়িওয়ালা নতুন ভাড়াটেদের জন্য স্প্যানিশ ভাষায় বিজ্ঞাপন দেওয়া শুরু করেন। এর ফলে অভিবাসীরা শহরটির প্রতি আকৃষ্ট হতে শুরু করেন। এমনকি অভিবাসীরা মফস্বল এলাকায় পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েন। তাই হিউস্টন, বিশেষ করে বিপুলসংখ্যক লাতিন আমেরিকান অভিবাসীকে আকর্ষণ করতে শুরু করে। এর ফলে সেখানে একটি উত্থান চক্র শুরু হয়, যা আজও অব্যাহত রয়েছে। আর এই উত্থান চক্রে শহরের চেহারায় পরিবর্তন আসে। সেই সঙ্গে যুক্ত হয় সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক প্রাণবন্ততা, যা হিউস্টনকে এখন পর্যন্ত চালিয়ে আসছে।

অ্যালাবামা হলো মুদ্রার উল্টো পিঠ। এটি এমন একটি রাজ্য, যা জীবনকে কঠিন করে তোলার চেষ্টা করেছে। বিশেষ করে অনিবন্ধিত অভিবাসীদের জন্য। বৈধ অভিবাসীদের জন্যও রাজ্যটি সব সময় বিশেষভাবে সুখকর নয়। ২০১১ সালে রাজ্যটি একটি আইন পাস করে, যা দেশের সবচেয়ে কঠোরতম অভিবাসন বিধান বলেই পরিচিত। সেই আইনের কিছু বিষয় বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু এটি এমন এক বার্তা পৌঁছে দিয়েছে যে এই রাজ্য অন্য দেশের মানুষ চায় না, বিশেষ করে অনিবন্ধিত অভিবাসীদের। এর ফলে রাজ্যের বৃহত্তম শহর বার্মিংহাম স্থবির হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে অন্য সানবেল্ট শহরগুলো সমৃদ্ধ হয়েছে। আর তাই এখন বার্মিংহাম বিরান একটি এলাকা।

এই দেশে অভিবাসী শ্রমিকদের ভূমিকার গল্পটি আসলে নাগরিক অধিকার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। আপনি যদি এর ইতিহাসের দিকে তাকান, তাহলে দেখা যাবে যে আমরা যখন একটি দেশ হিসেবে পদক্ষেপ নিচ্ছি যে আফ্রিকান-আমেরিকান শ্রমিকদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে বিবেচনা করা ঠিক নয়, তখন আমরা একই সঙ্গে শান্তি প্রতিষ্ঠা করছি। অভিবাসীদের, বিশেষ করে অনিবন্ধিত অভিবাসীদের সঙ্গে একই রকম আচরণ করতে ভালোই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছি, যা আগে ছিল—দ্বিতীয় শ্রেণির শ্রমিক হিসেবে যাঁরা সম্পূর্ণ অধিকার পান না, যাঁদের ভোট দেওয়ার অনুমতি নেই, যাঁদের নাগরিকত্ব পাওয়ার কোনো পথ নেই। এটি আমাদের জাতির ইতিহাসে একটি অত্যন্ত অস্বস্তিকর অনুরণন।

মাংস প্যাকিং, লন কেয়ার এবং গৃহ নির্মাণের মতো শিল্পগুলোতে অভিবাসী শ্রমিকের সংখ্যা প্রচুর, যাঁরা অনেক আমেরিকান কর্মীর তুলনায় কম পয়সায় এবং অনেক কঠিন পরিস্থিতিতে কাজ করতে ইচ্ছুক। এটি স্পষ্টতই নিয়োগকর্তাদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয়। এবং এটি তাঁদের অবৈধ মর্যাদা বজায় রাখার জন্য এই বিকৃত প্রণোদনা তৈরি করে, যাতে তাঁদের সুবিধা নেওয়া যায়। এটি অভিবাসী কর্মীদের জন্য ভালো নয়, এটি আমেরিকান কর্মীদের জন্যও ভালো কিছু না। এটি সেসব সংস্থার জন্য কোনো ভালো কিছু না, যারা আসলেই ন্যায্য আচরণ করতে চায়।

আমাদের জাতীয় অভিবাসন নীতিতে তিনটি বড় পরিবর্তন আনতে হবে, এমন একটি ব্যবস্থা তৈরি করার জন্য, যা আমাদের জাতীয় স্বার্থে কাজে লাগবে। প্রথমত, আমাদের এই ব্যবস্থার অবসান ঘটাতে হবে, যেখানে এমন একদল শ্রমিক রয়েছেন, যাঁরা কম অর্থের বিনিময়ে এবং নিম্নমানের পরিবেশে কাজ করছেন। এর জন্য সীমান্ত নিরাপত্তা এবং আশ্রয় প্রক্রিয়ার পুনর্গঠন প্রয়োজন। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, নিয়োগকর্তাদের তাঁদের কর্মীদের কাছে জবাবদিহি করতে হবে, যা আমরা আসলে কখনো করিনি।

যদি আপনি ধরে নেন এটি কেবল বিচ্ছিন্ন ঘটনা, তাহলে তা বিপর্যয়কর হবে। কারণ আমাদের খুব দ্রুত কর্মী শেষ হয়ে যাবে। এখানে মানুষের আসা সহজ করার জন্য আপনাকে বৈধ অভিবাসনের বিষয়টি বাড়াতে হবে।

এর তৃতীয় ধাপ হলো, এই দেশে ইতিমধ্যেই ১ কোটি ১০ লাখের বেশি মানুষ আছেন, যাঁরা এখানে তাঁদের জীবন গড়েছেন। অন্যরা যখন আইনত আসার জন্য অপেক্ষা করছেন, তখন তাঁদের এখানে থাকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা অন্যায্য। তাঁরা তো ইতিমধ্যেই এখানে আছেন। কেবল নাগরিকত্ব প্রদানের মাধ্যমেই আমরা তাঁদের সেই অধিকার নিশ্চিত করতে পারি।

অভিবাসন নিয়ে আমাদের রাজনৈতিক বিতর্ক একেবারেই ব্যর্থ হয়েছে। সাম্প্রতিক নির্বাচনের সময়ে এর প্রমাণ মিলেছে। আপনি দেখবেন, ডেমোক্র্যাটরা এই অবস্থানের খুব কাছাকাছি চলে এসেছে যে যুক্তরাষ্ট্রে থাকতে হলে তাঁকে যেকোনো শর্ত মেনে নিতে হবে এবং এখানে থাকার জন্য ধন্যবাদও জানাতে হবে।

অন্যদিকে, আপনি দেখেছেন, রিপাবলিকানরা টানা এই যুক্তি দেখাচ্ছিল যে আইনি অভিবাসনও এই দেশের জন্য খারাপ: শ্রমিকদের জন্য, অর্থনীতির জন্য, আমাদের সংস্কৃতির জন্য এবং আমাদের নিরাপত্তার জন্য। দুই দলের অবস্থানই বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

আমাদের এমন একটি আইনি অভিবাসনব্যবস্থা প্রয়োজন, যা কার্যকরভাবে জাতীয় স্বার্থে কাজ করে। অভিবাসন সম্পর্কে চিন্তা করার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো, এই জাতির ভবিষ্যতের জন্য বিনিয়োগের কথা ভাবা। এটি আমাদের জন্য এমন একটি সুযোগ, যাতে আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত দেশটি পেতে পারি।

(দ্য নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনূদিত ও ঈষৎ সংক্ষেপিত)

এবার নির্বাচনের দিকে চোখ থাকবে সবার

আন্তর্জাতিক মূল্যহ্রাস ভোক্তার কাছে পৌঁছায় না কেন

ভারতজুড়েই কি ফুটবে পদ্মফুল

ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ

সমুদ্রস্তরের উত্থান ও দ্বীপরাষ্ট্রের নিরাপত্তা

সংকটেও ভালো থাকুক বাংলাদেশ

মন্ত্রীদের বেতন-ভাতা নিয়ে কথা

পাঠকের লেখা: বিজয় অর্জনের গৌরব

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সঙ্গে আমাদের কি বিচ্ছেদ হলো

একাত্তরে সামষ্টিক মুক্তি আসেনি