হোম > মতামত > উপসম্পাদকীয়

কলেজগুলোতে শৃঙ্খলা ফেরাতে

মো. আল আমিন

মো. আল আমিন। ছবি: সংগৃহীত

১৯৯২ সালে সংসদীয় আইনের মাধ্যমে বাংলাদেশের একটি পাবলিক কলেজিয়েট বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরুর পর বর্তমানে ৩৪ লাখ ২৫ হাজার ৮৩২ জন শিক্ষার্থী নিয়ে ২ হাজার ২৫৭টি অধিভুক্ত কলেজ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এর কার্যক্রম চলছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৫৫৫টি সরকারি কলেজ, ১ হাজার ৩৬১টি বেসরকারি কলেজ এবং ৩৪১টি অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। সরকারি কলেজগুলো বাদে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় একটি কমিটি গঠন করে দেয়, যা গভর্নিং বডি নামে পরিচিত। গঠিত এই গভর্নিং বডির একজন সভাপতি ও একজন বিদ্যোৎসাহী সদস্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর কর্তৃক মনোনীত হন। সাধারণত সভাপতি পদে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যে এলাকায় অবস্থিত, সেই এলাকার প্রভাবশালী ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতাদের মধ্যে একজনের মনোনীত হওয়া লক্ষ করা যায়। অনেক ক্ষেত্রে সভাপতি পদে মনোনয়ন পেতে এলাকাভিত্তিক ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতার মৌখিক সুপারিশের প্রয়োজন পড়ে! শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সভাপতি হওয়ার জন্য রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই প্রতিযোগিতা সংঘাতে রূপ নেয়।

এমন একটি সংঘাতে গত ২২ ফেব্রুয়ারি শেরপুর জেলা সদরের চরমোচারিয়া ইউনিয়নের হরিণধরা উচ্চবিদ্যালয়ের অ্যাডহক কমিটির সভাপতি মো. শফিকুল ইসলাম মুক্তার নেতৃত্বে হওয়া হামলায় বিদ্যালয়টির অফিস কক্ষে মো. হারেজ আলী নামে একজন নিহত হয়েছেন বলে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। গভর্নিং বডির সদস্যদের কমিটিতে আসার বিনিময়ে কলেজ থেকে বেতন-ভাতা বা অন্য কোনো আর্থিক সুবিধা গ্রহণের সুযোগ নেই। তবু এটা নিয়ে কেন এত আগ্রহ? এর প্রধান কারণ, শিক্ষা খাতে সহজেই প্রভাব বিস্তার ও ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের সুযোগ। সব ধরনের শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ এনটিআরসিএর মাধ্যমে হলেও এখনো অধ্যক্ষ/প্রধান শিক্ষক, উপাধ্যক্ষ/সহকারী প্রধান শিক্ষক এবং সব ধরনের কর্মচারী নিয়োগ গভর্নিং বডির মাধ্যমে সম্পন্ন হয়ে থাকে।

এসব নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতি ও আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ বেশ পুরোনো। উদাহরণস্বরূপ নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলার কিশামত বদি উচ্চবিদ্যালয়ে (এমপিওভুক্ত) গভর্নিং বডির সদস্যদের ‘ম্যানেজ’ করে প্রধান শিক্ষকসহ একই পরিবারের সহকারী শিক্ষক, কর্মচারীসহ মোট ১৬ জনের নিয়োগ ও এমপিওভুক্তির ঘটনা ঘটেছে। তা ছাড়া রাজনৈতিক বিবেচনায় মনোনয়ন পাওয়া সভাপতি তাঁর দল করা শিক্ষক ও কর্মচারীদের রাজনৈতিক স্বার্থের কারণে অধিক সুযোগ-সুবিধা দেন মর্মে প্রায়ই লক্ষ করা যায়। প্রতিষ্ঠানগুলোর গভর্নিং বডির সভাপতি কিংবা সদস্য হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট কোনো বিশেষ যোগ্যতা কিংবা অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয় না। ফলে দাপ্তরিক কাজে শূন্য অভিজ্ঞতা নিয়ে অনেক ব্যক্তি তদবির কিংবা রাজনৈতিক বিবেচনায় স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পর্যায়ের কলেজগুলোর ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দাপ্তরিক কাজে বাস্তব অভিজ্ঞতা না থাকায় এই ব্যক্তিবর্গ খেয়ালখুশিমতো কিংবা অন্যের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে নানা রকম বিধিবহির্ভূত কার্যক্রমে নিজেদের নিয়োজিত করেন। এতে দেশের অনেক বড় বেসরকারি এমপিওভুক্ত স্নাতক কিংবা স্নাতকোত্তর পর্যায়ের কলেজগুলোতে চরম বিশৃঙ্খলা ও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে।

এসডিজি-৪ বাস্তবায়নের সঙ্গে সমন্বয় রেখে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোর শিক্ষার মান বাড়াতে কলেজগুলো পরিচালনার ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন। গভর্নিং বডির সভাপতি হিসেবে অবশ্যই একজন শিক্ষাবিদকে মনোনীত করা উচিত। এ ক্ষেত্রে অবসরপ্রাপ্ত কিংবা কর্মরত অভিজ্ঞ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকদের রাখা যেতে পারে। কোনো কারণে অভিজ্ঞ শিক্ষাবিদ না পাওয়া গেলে শিক্ষাসংশ্লিষ্ট কাজে অভিজ্ঞতা আছে এমন অবসরপ্রাপ্ত উচ্চপদস্থ আমলা কিংবা শিক্ষাসংশ্লিষ্ট কাজে অভিজ্ঞতা আছে, এমন অবসরপ্রাপ্ত সামরিক অফিসারদের বিষয়টি বিবেচনায় আসতে পারে। দাপ্তরিক কাজে অভিজ্ঞতাবিহীন আনাড়ি পরিচালক কখনোই প্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পারেন না। এই বিষয়টি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুধাবন করা একান্ত প্রয়োজন।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় যদি তার প্রতিটি আঞ্চলিক কেন্দ্রে দক্ষ ও পর্যাপ্ত লোকবলসম্পন্ন উচ্চ ক্ষমতার মনিটরিং টিম নিয়োগ করে, যারা সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক কেন্দ্রের অধীনে থাকা কলেজগুলোর ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার দায়িত্ব পালন করবে, তবে কলেজগুলোতে গভর্নিং বডি রাখার আর প্রয়োজনীয়তা থাকে না। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি কলেজ পরিদর্শন শাখা রয়েছে, এই শাখাটির দক্ষতা ও লোকবল বহুগুণ বৃদ্ধি করা গেলে কলেজগুলোর মনিটরিং, অডিট এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীরা উচ্চ শিক্ষার পাঠ গ্রহণ করে, তাই এই প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনা করার লক্ষ্যে বর্তমান ব্যবস্থাপনার (গভর্নিং বডি) পরিবর্তন হওয়া জরুরি। স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কলেজগুলো পরিচালনার জন্য পেশাদার ব্যক্তিদের এ কাজে নিয়োজিত করতে না পারলে মানসম্মত প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা সম্ভব হবে না।

লেখক: প্রভাষক, রসায়ন বিভাগ, কাজী আজিমউদ্দিন কলেজ, গাজীপুর

বুদ্ধিজীবী দিবস যেন ভুলে না যাই

উড়োজাহাজগুলোও পরিবেশের ক্ষতি করছে

যে প্রশ্নগুলোর জবাব পেতে হবে

পুতিনের ভারত সফর: আঞ্চলিক ও বিশ্বরাজনীতিতে কী বার্তা দেয়

বিজয়ের মাসে শঙ্কার কথা বলি

পথকুকুর-বিড়াল হত্যা: আইন এবং শাস্তি

জীবনের অপরিহার্য অংশ সংগীত ও শরীরচর্চা

দুর্নীতি রোগে আক্রান্ত আফ্রিকা

মার্কিন নিরাপত্তা কৌশল কি আঞ্চলিক আধিপত্যবাদের ব্লুপ্রিন্ট

ইমরান খান প্রতিরোধের প্রতীক