হোম > মতামত > উপসম্পাদকীয়

ট্রমায় আক্রান্ত যে জাতি

আব্দুর রাজ্জাক 

একটি শিশু মাতৃগর্ভ থেকে যদি কোনো জটিল রোগ নিয়ে জন্মগ্রহণ করে অথবা জন্মের পরপরই ট্রমা পায়, সেই শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটে না। অনেক ক্ষেত্রেই তার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বিকলাঙ্গতা ঘটে। সেটা যেকোনো অঙ্গের হতে পারে। আমাদের সমাজে আমরা এই রকম ট্রমা বহনকারী বহু লোক দেখছি। তারা স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠতে পারছে না। অন্যের সাহায্য নিয়ে অথবা অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে সারা জীবন বেঁচে থাকে।

সেই রকম কোনো জাতি যদি আত্মপ্রকাশ করার পর থেকেই বিভিন্ন সামাজিক-বৈশ্বিক ট্রমা পায়, সেই জাতি সঠিকভাবে পথ চলতে পারে না। তাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক বিকাশ পরিপূর্ণরূপে ঘটে না। আমি বেশি পেছনে যাব না। ১৯৭০ সালে পাকিস্তান দুই ভাগে ভাগ ছিল। গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরে আসার জন্য একটি নির্বাচন হলো। ৩০০-এর মধ্যে ১৬৭ আসন পেল পূর্ব পাকিস্তানের একটি দল। পূর্ব পাকিস্তানের ৬৭ শতাংশ মানুষ এই দলকে ভোট দিয়েছিল। এটাই যথাযথভাবে প্রমাণ করেছিল যে, পূর্ব পাকিস্তান আলাদা জাতিসত্তা হিসেবে নিজেদের স্বাধীনতা অর্জন করতে চায়। আগেকার ২৪ বছরের ইতিহাস, বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রাম, ভৌগোলিক অবস্থান বিশ্লেষণ করলে এটা একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেখানে ৯ মাস যুদ্ধ হলো, ৩০ লাখ লোক শহীদ হলো, ২ লাখ মা-বোনকে লাঞ্ছনাসহ অনেক ঘটনা ঘটে গেল। অর্থাৎ জন্মের শুরুতেই বড় একটি ট্রমা নিয়ে এই জাতির পথচলা শুরু হলো।

এই বড় ট্রমার ওপরে ছোট ছোট আঘাত এসেছে। যেমন সর্বহারা পার্টি, পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি, জাসদের গণবাহিনীসহ বিভিন্ন বাহিনী সদ্য প্রসূত বাংলাদেশকে বিভিন্নভাবে অস্থিতিশীল করার নানান প্রচেষ্টা করেছে। রাষ্ট্রও তার বাহিনী দিয়ে কিছু কিছু ক্ষেত্রে অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করে জনগণকে দমন করার চেষ্টা করছে। জাতীয় জীবনের সবচেয়ে বড় ট্রমা ১৫ আগস্ট—যা থেকে সহজে বের হয়ে আসতে পারেনি বাঙালি। ব্যতিক্রমধর্মী এই আঘাতের ঘটনায় সামনে আসা কয়েকজন ব্যক্তির বিচার হলেও মাস্টার মাইন্ডরা রয়ে গেছে অজানা ও অধরা।

আবার এই ট্রমার ওপরে কিছু কিছু আঘাত দেওয়া হয়েছে—খালেদ মোশাররফকে হত্যা, জাতীয় চার নেতা হত্যা, জিয়াউর রহমানকে হত্যা। ক্যান্টনমেন্টে ও বিমানবাহিনীতে ক্যু, পাল্টা-ক্যু ছোট ছোট আঘাত ছিল। এরশাদ আমলে বিভিন্ন হত্যাকাণ্ড হলো—সেলিম দেলাওয়ার, রাউফুন বসুনিয়া, দীপালি সাহা, নূর হোসেন, ডা. মিলন হত্যা। এইসব ট্রমার যথাযথ তদন্ত ও সঠিক আইনের মাধ্যমে বিচার করা হয়নি।

এরপর যখন মোটামুটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা আমাদের দেশে চালু হলো, মনে হচ্ছিল সব ট্রমা, আঘাত, প্রত্যাঘাত ভুলে এবার আমরা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সামনের দিকে এগিয়ে যাব। কিন্তু এরই মাঝে ঘটে গেল একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা। এই রকম একটি মর্মান্তিক ঘটনার পরিপূর্ণ বিচারের সুফল এই জাতি দেখতে পারল না। সঠিক আইনের বিচারের শেষ ফল এখনো অধরাই থেকে গেল।

ব্যক্তিজীবনে যদি কেউ ট্রমা পায়, সেটা চিকিৎসার মাধ্যমে দূর করা যায়। জাতীয় জীবনেও সেই রকম—জাতীয় ট্রমাগুলোকে সঠিক আইনের মাধ্যমে বিচার করে জাতিকে সরল পথে পরিচালিত করলে ট্রমার ক্ষত আর থাকে না।

সর্বশেষ এ জাতির জীবনে বড় আঘাত এল ২০২৪-এর জুলাই মাসে। এই আঘাতের তথ্যে বিভ্রান্তি ছিল, সেটা বোঝাই যায়। এখানে কয়েকটি পক্ষ আছে, এক পক্ষ অন্য পক্ষকে দোষারোপ করছে। এখনো এটা প্রাথমিক পর্যায়ে আছে, দেখা যাক এই আঘাতের বিচার কোন দিকে গড়ায়। সাধারণ মানুষের পক্ষ হতে আমরা চাই, একেবারেই নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে অন্তত এই আঘাতের পরিপূর্ণ ও শান্তিপূর্ণ বিচার হবে। যেহেতু এইসব কর্মকাণ্ডের চাক্ষুষ প্রমাণ—অডিও ভিজ্যুয়াল ক্লিপ—অনেকের কাছেই আছে। দরকার নিরপেক্ষতা, সঠিক বিশ্লেষণ, সঠিক আইনের মাধ্যমে এর বিচার সুনিশ্চিত করা।

আমরা আর এই ট্রমা নিয়ে অর্থাৎ মানসিক আঘাত নিয়ে চলতে চাই না। আমরা মেধার বিকাশ ঘটাতে চাই—সম্মিলিতভাবে ব্যক্তি ও জাতীয় জীবনে। আমরা স্থায়ী অর্থনৈতিক উন্নয়ন চাই।

লেখক: প্রকৌশলী

এবার নির্বাচনের দিকে চোখ থাকবে সবার

আন্তর্জাতিক মূল্যহ্রাস ভোক্তার কাছে পৌঁছায় না কেন

ভারতজুড়েই কি ফুটবে পদ্মফুল

ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ

সমুদ্রস্তরের উত্থান ও দ্বীপরাষ্ট্রের নিরাপত্তা

সংকটেও ভালো থাকুক বাংলাদেশ

মন্ত্রীদের বেতন-ভাতা নিয়ে কথা

পাঠকের লেখা: বিজয় অর্জনের গৌরব

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সঙ্গে আমাদের কি বিচ্ছেদ হলো

একাত্তরে সামষ্টিক মুক্তি আসেনি