ঐতিহ্যবাহী শতবর্ষী প্যাডেল স্টিমার ‘পি এস মাহসুদ’ অভ্যন্তরীণ নৌরুটে পর্যটন সার্ভিসে যুক্ত হলো। আজ শনিবার সকালে বুড়িগঙ্গার তীরে অনুষ্ঠিত এক জমকালো অনুষ্ঠানে পুনরায় চালু হতে যাওয়া এই ঐতিহ্যবাহী স্টিমারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী লুৎফে সিদ্দিকীসহ সরকারের একাধিক সিনিয়র সচিব ও দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
উদ্বোধনকালে নৌপরিবহন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘প্যাডেল স্টিমার পি এস মাহসুদ হবে বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও নদীভিত্তিক পর্যটনের এক অনন্য মেলবন্ধন। এটি কেবল একটি নৌযান নয়, এটি বাংলাদেশের নদী সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের জীবন্ত প্রতীক।’
উপদেষ্টা জানান, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) অধীনে থাকা এই শতবর্ষী স্টিমারকে প্রমোদতরি হিসেবে পুনরায় চালুর সিদ্ধান্তে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।
উপদেষ্টা আরও বলেন, সরকার চায় নতুন প্রজন্ম কাছ থেকে দেখুক, কীভাবে একসময় নদীপথই ছিল যোগাযোগ ও সংস্কৃতির প্রাণ। তিনি নিশ্চিত করেন, পি এস মাহসুদের পাশাপাশি পি এস অস্ট্রিচ, পি এস লেপচা, পি এস টার্নসহ আরও কয়েকটি পুরোনো স্টিমার সংস্কারের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। নদীপথের ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও নদীভিত্তিক পর্যটনের সম্ভাবনাকে বিস্তৃত করাই এর লক্ষ্য।
বিআইডব্লিউটিসি জানিয়েছে, ২১ নভেম্বর (শুক্রবার) থেকে ঢাকা-বরিশাল নৌরুটে এটি পর্যটন সার্ভিস হিসেবে নিয়মিত চলাচল শুরু করবে।
স্টিমারটি প্রাথমিকভাবে সপ্তাহে এক দিন চলবে। প্রতি শুক্রবার সকাল ৮টায় ঢাকার সদরঘাট থেকে ছাড়বে এবং রাতে বরিশাল পৌঁছাবে। আবার শনিবার এটি বরিশাল থেকে ঢাকার পথে ফিরবে। বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তারা আশা করছেন, আগে স্টিমার রাতে চলাচল করলেও এবার দিনের বেলায় চালুর ফলে যাত্রী ও পর্যটকেরা নদী এবং তীরের দৃশ্য উপভোগে আরও বেশি আগ্রহী হবেন।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নূরুন্নাহার চৌধুরী এনডিসি বলেন, প্যাডেল স্টিমারটি চালু হলে তা দেশ-বিদেশের বহু পর্যটককে আকর্ষণ করবে। বিদেশি পর্যটকদের জন্য এতে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী খাবার, বাংলা গানের পরিবেশনাসহ নানা ব্যবস্থা রাখা হবে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) জানায়, স্টিমারটির সংস্কার ও আধুনিকায়ন প্রক্রিয়ায় মূল কাঠামো ও ঐতিহাসিক নকশা অক্ষুণ্ন রেখে ইঞ্জিন, নিরাপত্তা এবং ফায়ার সেফটি সিস্টেম সম্পূর্ণ নবায়ন করা হয়েছে। এতে রয়েছে আধুনিক কেবিন, পর্যটকবান্ধব ডেক এবং ডিজিটাল নেভিগেশন ব্যবস্থা।
নিরাপত্তা নিশ্চিতে এতে সংযোজন করা হয়েছে আন্তর্জাতিক মানের নিরাপত্তা সরঞ্জাম, লাইফবোট, ফায়ার সেফটি ও জিপিএস ব্যবস্থা। ইঞ্জিনে ব্যবহৃত হয়েছে কম ধোঁয়া নির্গমনকারী প্রযুক্তি, যা নদীপথে দূষণ হ্রাসে সহায়ক হবে।