ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালনের জন্য জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) পদায়নে লটারি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ ক্ষেত্রে আগে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন না করা ২৫, ২৭ ও ২৮তম ব্যাচের রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ কর্মকর্তারা প্রাধান্য পাবেন। গত শনিবার সন্ধ্যায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত নির্বাচনকালীন ৬৪ জেলায় এসপি নিয়োগ-সংক্রান্ত এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে নীতিগত এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বৈঠকসংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র ও পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যোগ্য কর্মকর্তাদের একটি তালিকা প্রস্তুত করে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত কমিটির কাছে পাঠানো হবে; কমিটি যাচাই-বাছাই শেষে প্রধান উপদেষ্টার উপস্থিতিতে লটারির মাধ্যমে তাঁদের পদায়ন করবে।
জানতে চাইলে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) বাহারুল আলম বলেন, নির্বাচনে কোনো বিতর্কিত কর্মকর্তাকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রাখা হবে না। নিরপেক্ষ ও যোগ্য কর্মকর্তাদেরই পদায়ন করা হবে।
জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় প্রশাসনে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরির প্রস্তুতি চলছে দীর্ঘদিন ধরে। ইতিমধ্যে দেশের ৬৪ জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক নিয়োগ হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও বিভাগীয় কমিশনার পর্যায়ে বাছাই করে নতুন পদায়নও প্রায় শেষ হয়েছে।
এর আগে নির্বাচন-সংক্রান্ত প্রস্তুতি সভায় প্রধান উপদেষ্টা মাঠ প্রশাসনের নিয়োগে লটারি পদ্ধতির নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সে নির্দেশনা মোতাবেক ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসনের পদায়ন সম্পন্ন হয়েছে। নবনিযুক্ত জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বৈঠক করে বিশেষ বার্তাও দিয়েছেন।
নির্বাচনী প্রস্তুতির অংশ হিসেবে মাঠ প্রশাসন গুছিয়ে আনা হলেও পুলিশ বিভাগে এখনো কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন দৃশ্যমান নয়। দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি পর্যায়ে শূন্য পদ থাকা সত্ত্বেও পদোন্নতির উদ্যোগ ছিল স্থগিত। অনেক জেলার এসপি ও রেঞ্জ ডিআইজির বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠলেও বদলির পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এতে পুলিশ প্রশাসনে হতাশা, স্থবিরতা এবং আগের মতো দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ কানে আসছিল। এমন পরিস্থিতিতে ১৯ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পুলিশ-১ শাখার উপসচিব ফরিদা খানমের সই করা এক নোটিশে জানানো হয়, ২২ নভেম্বর শনিবার স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কক্ষে জেলা এসপি, ডিআইজি ও তদূর্ধ্ব পর্যায়ের নিয়োগ-বদলি ও শৃঙ্খলা-সংক্রান্ত কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হবে।
এই কমিটির সভাপতি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। কমিটির সদস্যরা হলেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব নাসিমুল গনি ও আইজিপি বাহারুল আলম। নৌপরিবহন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন কমিটির সদস্যসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, প্রথমে শনিবার সকাল নির্ধারণ করা হলেও পরে সময় পরিবর্তন করে বিকেল ৪টা ঠিক করা হয়। ২ ঘণ্টার বৈঠকে নির্বাচনী সময়ে পুলিশের নিয়োগ ও বদলি-সংক্রান্ত নীতিমালা চূড়ান্ত করা নিয়ে আলোচনা হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদরের সূত্র জানায়, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মাঠপর্যায়ে পুলিশের ব্যাপক বদলি-পদায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা অনুযায়ী যোগ্য কর্মকর্তাদের তালিকা কমিটির হাতে দেওয়া হয়েছে এবং লটারির মাধ্যমে তাঁদের জেলাওয়ারি পদায়ন নির্ধারণ করা হবে। গত সপ্তাহে ৬ জেলায় নতুন এসপি নিয়োগ দেওয়া হলেও আপাতত তাঁদের যোগদান স্থগিত রাখা হয়েছে। তাঁদের পদায়নও লটারির মাধ্যমেই চূড়ান্ত করা হবে। একই পদ্ধতিতে ডিআইজি ও কমিশনার পর্যায়েরও পদায়ন হতে পারে। এরপর প্রধান উপদেষ্টা পুলিশ বাহিনীকে কর্মস্থল-সংক্রান্ত বিশেষ নির্দেশনা দেবেন।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র বলছে, এসপির পরের ধাপে লটারির মাধ্যমে থানার ওসি নিয়োগ দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে সৎ, নিরপেক্ষ ও যোগ্য পরিদর্শকদের খুঁজে পেতে ইউনিটপ্রধানদের কাছে থেকে একটি তালিকা চাওয়া হয়েছে। সেই তালিকা ধরে একটি ‘ফিট লিস্ট’ও তৈরি করা হয়েছে। একই সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে আটকে থাকা শীর্ষ পর্যায়ের পদোন্নতির জট খুলতে শুরু করেছে। অর্ধশতাধিক ডিআইজির পদোন্নতি-সংক্রান্ত এসএসবির গত বৈঠক বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার, ডিআইজি ও তদূর্ধ্ব পর্যায়ের নিয়োগ-বদলির বিষয়েও কর্মকর্তাদের শনিবার আলোচনায় ডাকা হয়েছিল।
পুলিশে পদোন্নতি ও পদায়ন নিয়ে দীর্ঘদিনের অসন্তোষের বিষয়ে পুলিশ সদরের পদস্থ এক কর্মকর্তা বলেন, পদোন্নতির সিলেকশন বোর্ডের বৈঠক হয়েছে, ফলে জট খুলতে শুরু করেছে। মাঠ কর্মকর্তাদের পদায়নগুলোও চূড়ান্ত হয়ে যাচ্ছে।