দৈনিক প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার এবং সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট ও উদীচী কার্যালয়ে হামলার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আজ সোমবার সকাল পর্যন্ত ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে রাকিব হোসেন ও মো. নাইম প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার ভবনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী হিসেবে ভিডিও ফুটেজে শনাক্ত হয়েছেন। নাইম লুট করা টাকা দিয়ে টিভি ও ফ্রিজ কিনেছিলেন।
ঢাকার তেজগাঁওয়ের কুনিপাড়া এলাকার বাসিন্দা মো. নাইমকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নাইম স্বীকার করেছেন, তিনি মোট ১ লাখ ২৩ হাজার টাকা লুট করেছেন। লুট করা টাকা দিয়ে মোহাম্মদপুর থেকে একটি টিভি ও একটি ফ্রিজ কিনেছিলেন। এগুলোও অভিযানে উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের সময় নাইমের কাছ থেকে লুট হওয়া ৫০ হাজার টাকা পাওয়া যায়।
তবে ১ লাখ ২৩ টাকা কোন ভবন থেকে লুট করেন নাইম এ বিষয়ে কোনো তথ্য জানানো হয়নি।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের তথ্য অনুযায়ী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গ্রেপ্তার ৯ জনের মধ্যে ৭ জনের পরিচয় নিশ্চিত হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযানে গ্রেপ্তার অন্যরা হলেন—মো. কাশেম ফারুক, মো. সাইদুর রহমান, ফয়সাল আহমেদ প্রান্ত, মো. সোহেল রানা এবং মো. শফিকুল ইসলাম।
অন্যদিকে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার ভবনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী হিসেবে শেরপুর জেলার বাসিন্দা গ্রেপ্তার রাকিব হোসেনকে ভিডিও ফুটেজে শনাক্ত করা হয়েছে। তাঁর ফেসবুক আইডি থেকে ধ্বংসস্তূপের ছবি তুলে পোস্ট করা হয়। তিনি ফেসবুকে তাঁর আইডি থেকে উসকানিমূলক পোস্টও করেন।
ঢাকার কারওয়ান বাজার রেললাইন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার মো. সোহেল রানার বিরুদ্ধে মাদকসহ অন্যান্য আইনে ঢাকার বিভিন্ন থানায় ১৩টি মামলা রয়েছে। একই এলাকা থেকে গ্রেপ্তার মো. শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে এর আগেও অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দুটি মামলা রয়েছে।
এ ছাড়া চট্টগ্রামে ভারতের সহকারী হাইকমিশনারের বাসভবনের কাছে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টাকারীদের মধ্যে তিনজনকে ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে শনাক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে গ্রেপ্তার কাশেম ফারুক বগুড়ার আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া কাসেমুল উলুম মাদ্রাসার প্রাক্তন ছাত্র এবং ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা। মো. সাইদুর রহমান ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার নোয়াকান্দা গ্রামের বাসিন্দা।
পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ও গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অভিযানে বাকি দু’জনের পরিচয় যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গতকাল রোববার প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসকে জানিয়েছে, সাম্প্রতিক এসব ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ইতিমধ্যে ৩১ জনকে প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করা হয়েছে। গ্রেপ্তার অন্যদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
উল্লেখ্য, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর গত ১৮ ডিসেম্বর রাতে দৈনিক প্রথম আলো, ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার ভবন এবং ছায়ানট ভবনে হামলার ঘটনা ঘটে। রাজধানীর তোপখানায় উদীচী কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগের ঘটনাটি ঘটে এর পরদিন ১৯ ডিসেম্বর।