স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগ একীভূত করায় সমন্বয়হীনতা দূর হবে বলে মনে করছেন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা। আগে পুলিশ ভেরিফিকেশন কিংবা পাসপোর্ট অফিসে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা এবং বিদেশে মিশনে যেতে দুই বিভাগের কর্মচারীদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা ছিল। দুই বিভাগ একত্র হওয়ায় এসব সমন্বয়হীনতা দূর হবে বলে আশা করছেন তাঁরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দুই বিভাগ একত্র হওয়ায় একজন সচিব, প্রশাসন উন্নয়ন আইন ও শৃঙ্খলা অনুবিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিবের পদ কমে গেল। এতে রাষ্ট্রের কিছু আর্থিক সহায়তা হবে। অন্যদিকে দুই বিভাগের অর্থ দুটি অর্থনৈতিক কোডে আসত। এখন সেই কোড একত্র হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন পদস্থ কর্মকর্তা বলেন, জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের সময় নরসিংদীর কারাগারে বহিরাগতদের হামলা হয়। হামলার অনেক সময় পর ঘটনাস্থলে পুলিশ হাজির হয়। চাকরির ভেরিফিকেশনের ক্ষেত্রেও পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) থেকে কালক্ষেপণ করা হতো। অনেক ভেরিফিকেশন ৩-৪ মাস কখনো ছয় মাসও অপেক্ষা করতে হতো। এর অন্যতম কারণ ভেরিফিকেশন শাখাটি ছিল সুরক্ষা সেবা বিভাগের। আর ভেরিফিকেশনের দায়িত্বে ছিল পুলিশ। যেটি জননিরাপত্তা বিভাগের অধীনে।
এছাড়া পাসপোর্ট অফিসগুলোতে মোবাইল কোর্ট করতে গেলে সেখানে পুলিশ পাওয়া দুষ্কর হয়ে যেত, কারণ সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীনে পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন অধিদপ্তর রয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মচারী বলেন, বিশ্বের ১৫টি দেশের ১৯টি মিশন রয়েছে। এসব মিশনে পাসপোর্ট ইস্যু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের কর্মচারীরা অগ্রাধিকার পেত। এ নিয়ে দুই বিভাগের মধ্যে মামলা পর্যন্ত গড়িয়েছিল। পরে তাদের মধ্যে কিছুটা সমন্বয় করে সাময়িকভাবে বিষয়টি সমাধান করা হয়েছিল। কিন্তু এখন আর সেই সমস্যা থাকবে না। এখন জ্যেষ্ঠতা এবং যোগ্যতা অনুসারে মিশনগুলোতে যাওয়ার সুযোগ পাবেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে বলেন, বিশ্বের কোনো দেশে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কোনো বিভাজন নাই, শুধু বাংলাদেশে এটি করা হয়েছিল। এতে বিদেশে গিয়ে প্রায় তাদের কিছুটা বিব্রত হতে হয়েছে।
বর্তমান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সিনিয়র সচিব নাসিমন গনি যোগদানের পর থেকে শুধু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব লেখা হচ্ছে। এর আগে সচিবেরা জননিরাপত্তা বিভাগ ও সুরক্ষা সেবা বিভাগ এই দুই নামে পরিচিত ছিলেন। তবে বর্তমানে দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন দুই বিভাগকে একত্র করণের পক্ষে মত দেন এবং প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু করেন।
২০১৭ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা ‘জননিরাপত্তা বিভাগ’ ও ‘সুরক্ষা সেবা বিভাগ’কে একত্রিত করে ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়’ হিসেবে পুনর্গঠন করা হয়েছে।
জননিরাপত্তা বিভাগের অধীন শাখা ও সংস্থাগুলো ছিল—পুলিশ সদর দপ্তর, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী, বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড, ন্যাশনাল টেলিকমিউনেকশন মনিটরিং সেন্টার তদন্ত সংস্থা, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীন শাখা ও সংস্থাগুলো ছিল—বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর, কারা অধিদপ্তর, বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।