হোম > জাতীয়

দিল্লিতে বাংলাদেশের জামদানির ব্যতিক্রম প্রদর্শনী, মুগ্ধ ‘উমরাও জান’-এর পরিচালক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­

জামদানি শাড়ির নিপুণ কারিগরি এবং এর পরতে পরতে লুকিয়ে থাকা গল্প যেন এক জীবন্ত শিল্পকর্ম। এটি একজন চলচ্চিত্র নির্মাতার কাছেও এক দারুণ অভিজ্ঞতা। ভারতের জাতীয় কারুশিল্প জাদুঘর ও হস্তকলা একাডেমিতে আয়োজিত ‘সেলিব্রিটিং জামদানি: অ্যা লিভিং হেরিটেজ ফ্রম বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রদর্শনীতে এসে এমনটাই জানালেন প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক মুজাফফর আলি। তাঁর পুরস্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ‘উমরাও জান’–এ নায়িকা রেখাকে তিনি একটি বাংলাদেশি জামদানি শাড়িতে সাজিয়েছিলেন। শনিবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত এই প্রদর্শনীতে মুজাফফর আলি সেই মুগ্ধতার স্মৃতিচারণ করেন। আয়োজন করেছে দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন।

প্রদর্শনী কক্ষে শিল্প সমালোচক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এবং অসংখ্য শাড়িপ্রেমী ভিড় জমিয়েছিলেন। তাঁরা প্রতিটি জামদানি শাড়ির অনন্য নকশা ও বুননের বৈচিত্র্য দেখে মুগ্ধ হন। জামদানি শুধু একটি পোশাক নয়, এটি হাজার বছরের একটি ঐতিহ্য, যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বাহিত হয়ে আসছে।

দিল্লিতে চলছে জামদানি শাড়ির ব্যতিক্রমী প্রদর্শনী। ছবি: সংগৃহীত

প্রদর্শনীতে সরাসরি জামদানি বুনন প্রক্রিয়া দেখানো হয়, যা দর্শনার্থীদের বিশেষভাবে আকৃষ্ট করে। দিল্লির বাসিন্দা এক জাপানি নারী সাকুরা (৩৯)। তিনি এই অভিজ্ঞতা দেখে উচ্ছ্বসিত। তিনি বলেন, ‘আমি বাংলাদেশে গিয়েছি এবং সেখান থেকে শাড়িও কিনেছি। কিন্তু জীবনে এই প্রথম দেখলাম কীভাবে হাতে জামদানি বোনা হয়! এটি অবিশ্বাস্য!’

নারায়ণগঞ্জের ৪১ বছর বয়সী তাঁতি মোহাম্মাদ জামাল হোসেন বলেন, ‘কেউ জামদানি শাড়ি নকল করতে পারে না, কারণ এটি মেশিনে তৈরি নয়, সম্পূর্ণ হাতে বোনা। দুজন তাঁতি মিলে একটি শাড়ি বোনার সময় একজন আরেকজনকে গল্প শোনান এবং সেই গল্পের ছন্দ অনুযায়ী শাড়ির নকশা তৈরি হয়।’

উমরাও জান চলচ্চিত্রে জামদানি শাড়িতে রেখা। ছবি: সংগৃহীত

তিনি জানান, একটি জটিল নকশার শাড়ি বুনতে এক বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। তিনি দাবি করেন, শীতলক্ষ্যা নদীর তীরের বাতাসে বিশেষ মাত্রার জলীয় বাষ্পের কারণে এখানকার সুতাগুলো নিখুঁত হয়। তাই নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ও সোনারগাঁওয়ের আশপাশে বোনা জামদানিই সবচেয়ে সেরা। বর্তমানে প্রায় ২০টি গ্রামের প্রায় ১ হাজার ৫০০ তাঁতি পরিবার এই ঐতিহ্যবাহী শিল্পকে বাঁচিয়ে রেখেছে।

রূপগঞ্জের তাঁতি মোহাম্মাদ সজীব জামদানি শাড়ির অর্থনৈতিক দিকটি ব্যাখ্যা করেন। তিনি জানান, নকশার জটিলতা অনুসারে একটি শাড়ি বুনতে দুই সপ্তাহ থেকে এক বছর পর্যন্ত সময় লাগে। একটি শাড়ির মূল্য ১০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা হতে পারে, যার মধ্যে উপকরণের দাম মাত্র ২ শতাংশ, বাকিটা শ্রমের মূল্য। এই তথ্য থেকে বোঝা যায়, জামদানি শুধু একটি পণ্য নয়, এটি তাঁতিদের শ্রম, ধৈর্য এবং শিল্প নৈপুণ্যের প্রতিচ্ছবি। এটি শুধুমাত্র হাতে বোনা শিল্প নয়, বরং একটি জীবন্ত ঐতিহ্য।

উমরাও জান চলচ্চিত্রের পরিচালক মুজাফ্ফর আলী। ছবি: সংগৃহীত

২০১৩ সালে ইউনেসকো জামদানি বুননকে ‘অমূল্য ঐতিহ্য’ হিসেবে ঘোষণা করে। তবে যান্ত্রিক উৎপাদন প্রক্রিয়া এবং সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এর রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর ফলে এই শিল্পটি এখন হুমকির মুখে। হাতে বোনা জামদানি শাড়ির তুলনায় মেশিনে তৈরি সস্তা শাড়ির সহজলভ্যতা এই শিল্পের অস্তিত্বের জন্য বড় হুমকি। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যেকার সাংস্কৃতিক সম্পর্ককে আরও মজবুত করতে এই প্রদর্শনীটি আয়োজিত হয়।

দিল্লিতে চলছে জামদানি শাড়ির ব্যতিক্রমী প্রদর্শনী। ছবি: সংগৃহীত

ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার এম রিয়াজ হামিদুল্লাহ বলেন, ‘আমাদের পারস্পরিক যোগসূত্র এবং ঐতিহ্যগুলোই আমাদের সম্পর্ককে সংজ্ঞায়িত করে। বাংলাদেশি জামদানি শাড়ি তেমনই একটি বন্ধন, যা নতুন করে আলোচনা শুরু করার প্রতিশ্রুতি দেয়। তাই আমরা এই প্রদর্শনীটি ভারতীয় রাজধানীতে উপস্থাপন করেছি।’ এই ধরনের সাংস্কৃতিক বিনিময় শুধু দুই দেশের মানুষের মধ্যে বন্ধনই মজবুত করে না, বরং ঐতিহ্যবাহী শিল্পগুলোকে টিকিয়ে রাখতেও সহায়তা করে।

তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

খালেদা জিয়ার প্রয়াণে তারেক রহমানকে মোদির শোকবার্তা

মির্জা ফখরুলের জন্য মনটা কাল থেকে খুব বিষণ্ন হয়ে আছে: প্রেস সচিব

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদুল হাসান আর নেই

২০২৫ সালে গণপিটুনি বেড়ে দ্বিগুণ: এমএসএফ

খালেদা জিয়ার জানাজায় তারেক রহমানকে সান্ত্বনা জানালেন প্রধান উপদেষ্টা

পোস্টাল ভোট দিতে ১১ লাখ নিবন্ধন, ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বাড়াল ইসি

খালেদা জিয়ার জানাজায় এসে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পাকিস্তানের স্পিকারের কুশল বিনিময়

২০২৫ সালজুড়ে আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে ‘মব সন্ত্রাস’: আইন ও সালিশ কেন্দ্র

ঢাকায় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পাকিস্তানের স্পিকার ও ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

‘খালেদা জিয়াকে এভাবে বিদায় দিতে হবে ভাবিনি’