হোম > জাতীয়

বিমানবন্দরে আগুন: তদন্ত প্রতিবেদন

আগুন নেভাতে বেবিচকের পর্যাপ্ত সক্ষমতা ছিল না

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎

ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আমদানি কার্গো ভিলেজে (পণ্য রাখার স্থান) গত ১৮ অক্টোবরের ভয়াবহ আগুনের ঘটনায় নাশকতার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সেখানে আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সার্ভিসের অংশে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছিল।

ওই ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিটির প্রতিবেদনে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগুন নেভাতে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) পর্যাপ্ত সক্ষমতা ছিল না। তদন্ত কমিটি বিমানবন্দর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য স্বতন্ত্র একটি কর্তৃপক্ষ গঠনের সুপারিশ করেছে।

তদন্ত প্রতিবেদনটি গতকাল মঙ্গলবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে হস্তান্তর করেন কোর কমিটির প্রধান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম। পরে বিকেলে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। সংবাদ সম্মেলনে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ১৮ অক্টোবর বেলা ২টা ৯ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের আমদানি কার্গো কমপ্লেক্সের কুরিয়ার শেডের বর্ধিত অংশের উত্তর-পশ্চিম পাশে ৪৮টি লোহার খাঁচার মধ্যবর্তী স্থানে আগুন লাগে। ২টা ১৫ মিনিটে ধোঁয়া দেখা যায়। সিভিল এভিয়েশনের প্রথম অগ্নিনির্বাপক গাড়ি যায় ২টা ২২ মিনিটে; দ্বিতীয়টি যায় ২টা ২৫ মিনিটে। উত্তরা ফায়ার সার্ভিসের অগ্নিনির্বাপক দল পৌঁছায় ২টা ৫০ মিনিটে। কুরিয়ার এলাকায় কোনো ফায়ার অ্যালার্ম, স্মোক ডিটেক্টর বা স্প্রিংকলার ছিল না। পলিথিনে মোড়ানো কাপড়, পারফিউম, রাসায়নিক, ব্যাটারি, ওষুধের কাঁচামালসহ বিপুল দাহ্য পণ্য এলোপাতাড়ি স্তূপ করে রাখা ছিল। তুরস্ক থেকে আসা বিশেষজ্ঞ দল, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বিশেষজ্ঞ, অগ্নিনির্বাপণ বিশেষজ্ঞ এবং পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফরেনসিক প্রতিবেদনে আগুনের উল্লেখিত কারণ নিশ্চিত করা হয়েছে।

আগুন নেভাতে বিলম্ব হওয়ার কারণ সম্পর্কে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে দ্রুত যাওয়ার ক্ষেত্রে বাধার মুখে পড়ে। অ্যাপ্রোন এলাকায় (যেখানে উড়োজাহাজ পার্ক করা, জ্বালানি ভরা, লোড-আনলোড করা, যাত্রী ওঠানো এবং রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করা হয়) রাখা স্তূপ করা পণ্যের ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি কুরিয়ার শেডে অগ্নিকাণ্ডস্থলে যেতে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছিল। এ ছাড়া ১৫০০ ডিগ্রি তাপমাত্রা, গ্রিলে তালা, হাইড্রেন্ট না থাকা, অজানা রাসায়নিক, পানি-ফোমের ঘাটতি এবং কাঠামো ধসে পড়ার কারণে আগুন নেভাতে বিলম্ব হয়।

এ ছাড়া আমদানি পণ্য সংরক্ষণের কার্যকর ব্যবস্থাপনা এবং তদারকি ছিল না। এমনকি দাহ্য এবং বিপজ্জনক পণ্যের জন্য কোনো বিশেষ সুরক্ষা ব্যবস্থা ছিল না। বেবিচকের অবকাঠামোর সুরক্ষার জন্য কোনো স্থায়ী ফায়ার স্টেশনও নেই।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কার্গো ভিলেজের ভবন নির্মাণে ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড মানা হয়নি। অ্যাপ্রোনে প্রতিদিন প্রায় ৪০০ টন আমদানি পণ্য ফেলে রাখা হয়। বিপজ্জনক পণ্যের জন্য আলাদা গুদাম নেই। বেবিচকের নিজস্ব ফায়ার স্টেশন নেই, সরঞ্জাম ও প্রশিক্ষণ অপ্রতুল। গত এক যুগে একই এলাকায় সাতবার আগুন লাগে। কিছু ঘটনা গোপন রাখা হয়েছে। ৯ বছর ধরে বেবিচক ও ফায়ার সার্ভিসের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়নি। ৭৫ শতাংশ নিলামযোগ্য পণ্য সময়মতো সরানো হয়নি।

প্রতিবেদনে চার পক্ষকে দায়ভার দেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো—বেবিচক কুরিয়ার শেড ও কার্গো শেডের ইজারাদাতা হিসেবে ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী স্থাপনা ও পরিচালনায় যথাযথ সুরক্ষা অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। বিমান বাংলাদেশ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ, কুরিয়ার এজেন্সিগুলো অগ্নিনিরাপত্তা মানেনি এবং কাস্টম হাউস নিলামযোগ্য পণ্য অন্যত্র সরায়নি।

তদন্ত কমিটির ১০ সুপারিশ

প্রতিবেদনে কমিটি ১০টি সুপারিশ করেছে। এগুলো হলো—বেবিচককে নিয়ন্ত্রক রেখে বিমানবন্দর পরিচালনার জন্য স্বতন্ত্র কর্তৃপক্ষ বা অপারেটর নিয়োগ। আইকাও ও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা মেনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। বিমান বাংলাদেশকে শুধু ফ্লাইট পরিচালনায় সীমিত রাখা। বিশেষ শ্রেণির ফায়ার স্টেশন নির্মাণ। জরুরি ভিত্তিতে ফায়ার সেফটি প্ল্যান ও সনদ গ্রহণ। বিপজ্জনক পণ্যের গুদাম স্থানান্তর। নিলামযোগ্য পণ্যের আলাদা গুদাম তৈরি করা। বিমানবন্দরে কাজ করা সব বিভাগের কর্মীদের ১৮ শতাংশকে অগ্নিনির্বাপণ প্রশিক্ষণ দেওয়া। নিয়মিত ফায়ার ড্রিল। অ্যাপ্রোনে মালামাল মজুদ নিষিদ্ধ ও ডিজিটাল কার্গো ইনভেন্টরি চালু করা।

কমিটি সতর্ক করেছে, ত্রুটিগুলো দ্রুত সংশোধন না হলে একই ধরনের বড় দুর্ঘটনা আবারও ঘটতে পারে।

কার্গো ভিলেজের ওই আগুন ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি স্টেশনের ৩৭টি ইউনিট প্রায় সাত ঘণ্টার চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুনের কারণে ওই সময় বিমানবন্দরে কয়েক ঘণ্টা উড়োজাহাজ চলাচল বন্ধ থাকে।

রাষ্ট্রপতি বরাবর অব্যাহতিপত্র দিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান

তামাক নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ অনুমোদনে অন্তর্বর্তী সরকারকে স্বাগত জানাল বিএনটিটিপি

প্রধান বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীর শপথ কাল

সুষ্ঠু ভোটের ব্যাপারে সরকার সিরিয়াস: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন সোমবার, ঢাকার ৬ জেলায় এ পর্যন্ত সংগ্রহ ৫০৯টি

তারেক রহমান ও জাইমার ভোটার নিবন্ধন সম্পন্ন, রোববার উঠবে কমিশনে

নিষিদ্ধ দলের নেতারা আটকে যেতে পারেন তফসিলের শর্তে

সরকারের কোনো না কোনো অংশ এই হামলা ঘটতে দিয়েছে: নূরুল কবীর

তারেক রহমান-জাইমার ভোটার হওয়া নিয়ে কমিশনের সিদ্ধান্ত রোববার: আখতার আহমেদ

কক্সবাজার-হাতিয়ায় সমুদ্রে মিসাইল ফায়ারিং পরিচালনা, নৌযান চলাচলে সতর্কতা আইএসপিআরের