জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ গ্রামে জনসভায় ভাষণ দিয়েছেন। দিঘিতে ওজু করে মসজিদে নামাজ আদায় করেছেন, করেছেন মাজার জিয়ারত। একবেলা খেয়েছেনও তিনি। যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার নায়ড়া গ্রামের মধ্যবয়সী ও বয়স্ক মানুষের স্মৃতিতে এখনো উজ্জ্বল সেই দৃশ্য।
ঘটনা ১৯৫৪ সালের ২৭ এপ্রিলের। যশোর সার্কিট হাউস থেকে বাসে করে শার্শা উপজেলার সামটা বাজারের নীল মোড়ে পৌঁছান বঙ্গবন্ধু। অবশ্য কেউ কেউ বলেন তিনি সাতক্ষীরা সার্কিট হাউস থেকে এসেছিলেন। এরপর বাঁশের সাঁকো দিয়ে বেত্রবতী নদী পার হয়ে গরুর গাড়িতে চড়ে বিকেল ৪টার দিকে ঝিকরগাছার নায়ড়া গ্রামে পৌঁছান। নায়ড়া বাজারে গরুগাড়ি থেকে নেমে বঙ্গবন্ধু প্রথমে উপস্থিত মানুষের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। এরপর খন্দকার দিঘির পানিতে ওজু করে পাশে শাহ্ সুফি সোলাইমানের (রহ.) মাজার জিয়ারত করেন। আছরের নামাজ আদায় করেন নায়ড়া বাজার জামে মসজিদে। মাগরিবের নামাজও এ মসজিদে আদায় করেন তিনি।
আছর নামাজ শেষে মসজিদের সামনে স্কুলের পাশে সমতল মাটিতে দাঁড়িয়ে আধা ঘণ্টা বক্তৃতা করেন বঙ্গবন্ধু। মাইক ছিল না, টিনের চোং মুখে লাগিয়ে বাঙালির ওপর পাকিস্তানিদের নির্যাতন–জুলুমের বর্ণনা তুলে ধরেন তিনি। পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে যুক্তফ্রন্টের পক্ষে ভোট চান।
এই সফরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে ছিলেন যশোরের চৌগাছার মশিয়ুর রহমান (শহীদ), ঝিকরগাছার ডাক্তার জি. সরওয়ার। সভা পরিচালনা করেন চেয়ারম্যান আবুল ইসলাম (পরে প্রাদেশিক পরিষদ ও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন)।
নায়ড়া গ্রামের খন্দকার আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে খাওয়ানোর সময় ডালের গামলা এগিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। তখন তাঁর বয়স ১০ বছর। নায়ড়া গ্রামে বঙ্গবন্ধুর আগমনের সব কথা মনে আছে তাঁর।
নায়ড়া এনইউআরএস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক খাইরুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিধন্য স্থানে কর্মস্থল হওয়ায় নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি। যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন (এমএম) বিশ্ববিদ্যলয় কলেজের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ইছানূর রহমান বলেন, নায়ড়া গ্রামে জন্ম নিয়ে আমি গর্বিত।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নায়ড়া বাজারে যে স্থানে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিয়েছিলেন সেখানে ১৯৯৭ সালে বঙ্গবন্ধু স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হয়েছে। বাঁকড়া–বাগআঁচড়া সড়ক থেকে নায়ড়া গ্রাম পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার রাস্তাকে বঙ্গবন্ধু সড়ক নামকরণ করা হয়েছে।