‘বাংলা, ইংরেজি, অঙ্ক, সাধারণ জ্ঞান আর বিষয় ভিত্তিক কিছু প্রশ্ন-সব পরীক্ষায় ঘুইরা-ফিইরা একই জিনিস। সাঁটলিপিকার, কম্পিউটার অপারেটর এই সব পদে সব জায়গায় একই নিয়োগ পদ্ধতি। তাইলে এইগুলার আলাদা আলাদা পরীক্ষা নিয়ে বেকারদের কাছ থেকে দফায় দফায় আবেদন ফি হাতানো আর ভোগান্তি বাড়ানোর মানে কি?’ এসব বলছিলেন তরুণ চাকরি প্রত্যাশী আশরাফুল ইসলাম।
আজ শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ঢাকায় তাঁর সমন্বিত পাঁচ ব্যাংকের অফিসার (ক্যাশ) পদের পরীক্ষা। একই দিনে খুলনায় পোস্ট মাস্টার জেনারেলের কার্যালয় দক্ষিণাঞ্চলের উচ্চমান সহকারী পদের পরীক্ষা। বাধ্য হয়েই তাকে দ্বিতীয় পরীক্ষাটা ছাড়তে হচ্ছে। কিন্তু যেই পরীক্ষায় আশরাফুল অংশ নিচ্ছেন, সেই ব্যাংকের পরীক্ষা নিয়েও শঙ্কায় আছেন তিনি। কারণ প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার কারণে গত নভেম্বরে এই পরীক্ষা বাতিল হয়েছিল। এবারও যে তেমনটা হবে না তা কে বলতে পারে? তারপরেও নিজেকে কিছুটা ভাগ্যবান মনে করছেন এই যুবক।
শুক্রবার একইদিনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ১৪টি সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পদের নিয়োগ পরীক্ষা। বৃহস্পতিবার আজকের পত্রিকাকে আশরাফুল বলেন, ‘আমার তবু কালকে দুইটা পরীক্ষা। অনেকের চাইরটাও আছে। সেই দিক দিয়া তো আমি ভাগ্যবানই।’
জাহিদ হাসান নামের আরেক প্রার্থী বলেন, ‘এক দিনে একাধিক চাকরির পরীক্ষা নিয়ে কথা বলতে বলতে আমরা ক্লান্ত। একটা মাস একটু শান্তিতে ছিলাম। আবার শুরু হইছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা হতে পারলে গুচ্ছ চাকরির পরীক্ষায় সমস্যা কোথায়।’
একই দিনে একাধিক চাকরির পরীক্ষা নিয়ে চাকরিপ্রার্থীদের এই হতাশা নতুন কিছু নয়। করোনার কারণে দীর্ঘদিন নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ থাকার পর গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান একই সঙ্গে পরীক্ষার সময়সূচি প্রকাশ করতে শুরু করে। সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় প্রতি সপ্তাহান্তেই পরে যাচ্ছিল ১০ টির বেশি পরীক্ষা। একই সময়ে একাধিক পরীক্ষা পড়ায় অনেক পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশও নিতে পারেননি। ডিসেম্বরে করোনার সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ায় চাকরির পরীক্ষার সংখ্যা কমতে শুরু করে। কিন্তু ফেব্রুয়ারির শেষ থেকেই করোনা আবার কমে আসায় চাকরির পরীক্ষার ঝড় আবারও শুরু হয়ে গেছে।
আজ যে ১৪ প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে সেগুলো হলো-ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির সদস্যভুক্ত পাঁচ ব্যাংক; কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, ঢাকা (পশ্চিম) ; সাধারণ বিমা করপোরেশন; তথ্য অধিদপ্তর; বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ; বাংলাদেশ ডাক বিভাগ; বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস; বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ; কর কমিশনারের কার্যালয়, কর অঞ্চল-১; , পাইকগাছা পৌরসভা, খুলনা; ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি; বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন; বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) ও জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।
প্রার্থীরা বলছেন, একই সময়ে একাধিক পরীক্ষা থাকায় কয়েকটা পরীক্ষা ছেড়ে দেওয়া ছাড়াও প্রশ্নপত্র ফাঁস সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাদের। আবেদন ফি এবং যাতায়াত খরচ হিসেব করলে একজন পরীক্ষার্থীকে একেকটা পরীক্ষায় অংশ নিতে গড়ে এক দেড় হাজার টাকা খরচ করতে হচ্ছে। বেকারদের জন্য এটা বাড়তি দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এ জন্য গুচ্ছ নিয়োগ পরীক্ষার কোনো বিকল্প নেই বলে দাবি করছেন তারা।
এ বিষয়ে চাকরিপ্রত্যাশী যুব প্রজন্মের সমন্বয়ক মানিক রিপন বলেন, ‘প্রতি সপ্তাহেই একই সময়ে একাধিক পরীক্ষা পরে যাচ্ছে। করোনার কারণে আমাদের দুটো বছর চলে গেছে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের কারণেও আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। আরও নানা ভোগান্তি তো আছেই। গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়া গেলে এই ভোগান্তি অনেকটাই কমে আসত।’
তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গুচ্ছ চাকরির পরীক্ষা নেওয়ার সম্ভাবনা আপাতত নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি ঠিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চাকরির পরীক্ষা নিয়ে সমস্যাও কেটে যাবে। তাই এটা আপাতত কিছু করার সুযোগ নেই।’