নভেম্বর মাসে অক্টোবর মাসের তুলনায় রাজনৈতিক সহিংসতাসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। বিশেষ করে গ্রেপ্তার, সীমান্ত পরিস্থিতি ও নারী-শিশুর প্রতি সহিংসতা বেড়েছে। নভেম্বর মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরেছে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)।
আজ সোমবার এক বিজ্ঞপ্তিতে সংস্থাটি এ তথ্য জানায়। সংবাদপত্রের প্রতিবেদন এবং নিজেদের তথ্যানুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
প্রতিবেদন বলা হয়, নভেম্বরে রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে মামলায় অক্টোবরে ১২ জন থেকে নভেম্বর মাসে ৩৮৫-তে পৌঁছায়। এমএসফের ভাষ্যে যা বহুগুণ বৃদ্ধি এবং রাজনৈতিক দমনপীড়ন বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়। রাজনৈতিক সহিংসতাও বেড়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে। অক্টোবরে ৪৯টি সহিংসতার ঘটনায় ৫৪৭ জন আহত ও ২ জন নিহত হয়েছিলেন। পরের মাসে ৭২টি রাজনৈতিক সহিংসতায় ৭২৪ জন আহত এবং নিহত হয়েছেন ৯ জন।
এমএসএফের প্রতিবেদন বলছে, সীমান্তে হত্যা ও নির্যাতন বন্ধে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণে এসব ঘটনা বন্ধ হচ্ছে না; বরং ধারাবাহিকভাবে অব্যাহত রয়েছে। নভেম্বরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে ১ জন নিহত ও ৪ জন আহত হন। ভারতীয় সীমান্তবর্তী নাগরিকের গুলিতে ১ জন নিহত ও ভারত সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে অজ্ঞাতনামা ১ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। চোরাকারবারিদের হামলা ঠেকাতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) গুলিতে এক যুবক নিহত হন। ভারতীয় সীমান্তবর্তী বঙ্গোপসাগর থেকে ১০৮ জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে ভারতীয় কোস্ট গার্ড। এ ছাড়া নাফ নদী থেকে নৌকাসহ ৪৭ জেলেকে ধরে নিয়ে যায় আরাকান আর্মি। ফলে সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকেরা উৎকণ্ঠা ও আতঙ্কের মধ্যে জীবনযাপন করছেন।
নারী ও শিশু সহিংসতার ক্ষেত্রে পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে বলে মন্তব্য এমএসএফের। অক্টোবরের তুলনায় যৌন নিপীড়ন ও শারীরিক নির্যাতন বেড়েছে। অক্টোবরে ছিল ২৪টি যৌন নিপীড়নের ঘটনা, যা নভেম্বরে ২৮টি হয়েছে, শারীরিক নির্যাতন যেখানে ছিল ৫৭টি, সেখানে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৭টিতে।
এ ছাড়া নভেম্বরে গণপিটুনি বা মব সন্ত্রাসে হতাহতের ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে ঘটেই চলেছে। চলতি সময়ে গণপিটুনির সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাওয়ায় জনমনে নিরাপত্তা বোধের বিষয়টি প্রশ্নাতীতভাবে ভাবিয়ে তুলেছে।
এমএসএফ বলছে, মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রতিরোধ ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রাজনৈতিক চর্চা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সমমর্যাদা ও নাগরিক জীবনে নিরাপত্তার বিষয়গুলোর নিশ্চয়তা বিধানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে তারা জোর দাবি জানায়।