ভোট কারচুপি, সাজানো ও প্রহসনের নির্বাচন অনুষ্ঠান করে রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধ করার অভিযোগে করা মামলায় সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা ‘দিনের ভোট রাতে’ ও বিভিন্ন অনিয়ম করার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। আজ মঙ্গলবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াদুর রহমানের খাস কামরায় তিনি ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
দুপুর ১২টার দিকে নূরুল হুদাকে আদালতে হাজির করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইর পরিদর্শক সৈয়দ সাজেদুর রহমান তাঁর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করার আবেদন করেন। পরে আদালত তাঁকে দুই ঘণ্টা সময় দেওয়ার পর বেলা ২টা থেকে জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করা শুরু করে। সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত তিনি জবানবন্দি দেন।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, নূরুল হুদা আদালতের কাছে স্বীকার করেছেন, তিনি সজ্ঞানে দিনের ভোট আগের রাতে তাঁরা সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছিলেন। এ ছাড়া তাঁর একক নির্দেশে ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের নেতা-কর্মীদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ, এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ও প্রশাসন। তিনি ভোটের বিভিন্ন অনিয়মের বিস্তারিত বিবরণ দেন। তিনি আদালতকে জানান, পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় নেওয়ার জন্য এই নির্বাচনে বিভিন্ন অনিয়মের আশ্রয় নেওয়া হয়।
জবানবন্দি শেষে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।
গত ২৭ জুন নূরুল হুদাকে দ্বিতীয় দফায় চার দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। এর আগে ২৩ জুন তাঁকে প্রথমে চার দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছিল।
গত ২২ জুন সন্ধ্যার দিকে রাজধানীর উত্তরা এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে স্থানীয় জনগণ তাঁকে আটক করে পুলিশের হাতে সোপর্দ করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, লুঙ্গি পরিহিত নূরুল হুদাকে আটক করেছে। যাঁরা আটক করেছেন, তাঁরা নূরুল হুদাকে জুতার মালা পরিয়েছেন। মারধর করতেও দেখা যায়।
এর আগে ২২ জুন সকালে শেরেবাংলা নগর থানায় দশম, একাদশ ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন পরিচালনাকারী কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ, কে এম নূরুল হুদা ও কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশনের বিরুদ্ধে মামলা করে বিএনপি। দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন খান মামলাটি করেন।
মামলায় সাবেক তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ ২৪ জনকে আসামি করা হয়।
এ মামলার অপর আসামি সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালকে গত বৃহস্পতিবার তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।