অধস্তন আদালতের বিচারকদের নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলাসংক্রান্ত সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ এবং বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে জারি করা রুল শুনানি ১৬ জুলাই পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে।
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জমানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ বৃহস্পতিবার বিচারপতি আহমেদ সোহেল ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
এ সময় আদালতের পক্ষ থেকে বলা হয়, সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ নিয়ে রুল শুনানি অনেক দিন ধরে চলছে। আর যেন সময় চাওয়া না হয়। মামলাটি শেষ করা দরকার।
সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, বিচার বিভাগে নিযুক্ত ব্যক্তিদের ও বিচার বিভাগীয় দায়িত্বপালনরত ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ (কর্মস্থল-নির্ধারণ, পদোন্নতিদান, ছুটি মঞ্জুরসহ) ও শৃঙ্খলাবিধান রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত থাকবে এবং সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক তা প্রযুক্ত হবে।
সংবিধানের এই অনুচ্ছেদের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে গত বছরের ২৫ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের সাত আইনজীবী রিট করেন।
তাঁরা মনে করেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় বড় বাধা সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ।
রিটের পক্ষে শুনানিতে আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেছিলেন, সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদের কারণে বিচারকেরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন না। রাতে কোর্ট বসিয়ে বিচারকদের সাজা দিতে বাধ্য করার ঘটনা ঘটেছে। সরকারের পছন্দমতো আদেশ না দেওয়ার কারণে বিচারককে দেশ ছাড়তে হয়েছে। জামিন দেওয়া না দেওয়ার কারণে বদলি করা হয়েছে। অনেক বিচারককে চোখের পানি ফেলতে দেখা গেছে। আইন মন্ত্রণালয় ফোন করে বলে, কাকে জামিন দিতে হবে, আর কাকে দেওয়া যাবে না।
এই রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে গত ২৭ অক্টোবর রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
রুলে সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ ও ২০১৭ সালের জুডিশিয়াল সার্ভিস (শৃঙ্খলা) বিধিমালা কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।
এ ছাড়া বিচার বিভাগীয় পৃথক সচিবালয় কেন প্রতিষ্ঠা করা হবে না, তা-ও জানতে চান আদালত।
চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর বেঞ্চে রুল শুনানি শুরু হয়।
তবে গত ২৪ মার্চ বিচারপতি ফারাহ মাহবুবকে অন্তর্বর্তী সরকার আপিল বিভাগে নিয়োগ দিলে এ-সংক্রান্ত রুল নিষ্পত্তির জন্য বিচারপতি আহমেদ সোহেল ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে বিশেষ বেঞ্চ গঠন করে দেন প্রধান বিচারপতি।
পুনর্গঠিত বেঞ্চে এ বছরের ২৩ এপ্রিল রুল শুনানি শুরু হয়। প্রতি বুধ ও বৃহস্পতিবার এই বেঞ্চে রুল শুনানি হয়।