গুম ও নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের পৃথক দুই মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে আবারও রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হয়েছেন মো. আমির হোসেন।
ওই দুই মামলায় হাসিনার আইনজীবী থেকে জেড আই খান পান্না নিজেকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর আজ বুধবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ আইনজীবী মো. আমির হোসেনকে এই নিয়োগের আদেশ দেন। এর আগে তিনি জুলাই-আগস্টে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনার আইনজীবী ছিলেন।
গুমের এই দুই মামলায় শেখ হাসিনার পক্ষে আইনজীবী হতে চাইলে গত ২৩ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল-১ জেড আই খান পান্নাকে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দেন। তবে পরে তিনি শেখ হাসিনার পক্ষে আইনজীবী হবেন না বলে ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার বরাবর চিঠি পাঠান। আজ বিষয়টি জেনে ট্রাইব্যুনালের আইনজীবী জেড আই খান পান্নাকে আসতে বলেন।
এরপর জেড আই খান পান্না এসে তাঁর শারীরিক অসুস্থতার বিষয় তুলে ধরে বলেন, ‘আমি আনকনডিশনাল অ্যাপোলজি চাচ্ছি।’ ট্রাইব্যুনাল ফের জানতে চান, তিনি এ মামলায় লড়বেন কি না। জবাবে আইনজীবী পান্না বলেন, ‘না।’ এ সময় ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘আপনি না পারলে কারও বিষয়ে পরামর্শ আছে?’ এতে পান্না বলেন, ‘না।’
ট্রাইব্যুনাল উপস্থিত সব আইনজীবীর উদ্দেশে বলেন, ‘কেউ আগ্রহ দেখাবেন?’ কেউ সাড়া না দিলে ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘আমরা আবারও আমির হোসেনকে নিয়োগ দেব।’ এ সময় ট্রাইব্যুনাল আমির হোসেনের কাছে তাঁর বক্তব্য জানতে চান। জবাবে আমির হোসেন বলেন, ট্রাইব্যুনাল যদি যোগ্য মনে করেন, তাহলে তিনি মামলায় লড়বেন।
এরপর ট্রাইব্যুনাল-১ গুমের এই দুই মামলায় শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে মো. আমির হোসেনকে নিয়োগ দেন।
আজ ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম শুনানি করেন। এ সময় অপর প্রসিকিউটর ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।
আওয়ামী লীগের শাসনামলে গুম ও নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের পৃথক দুই মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর নিরাপত্তা উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিকী, ডিজিএফআইয়ের সাবেক পাঁচ মহাপরিচালসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে গত ৮ অক্টোবর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইব্যুনালের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর গত ১১ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে ১৫ জন কর্মরত সেনা কর্মকর্তাকে হেফাজতে নেওয়ার কথা জানায় সেনাবাহিনী।
আর্মি অফিসার্স মেসে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনীর অ্যাডজুট্যান্ট মেজর জেনারেল মো. হাকিমুজ্জামান বলেন, দুটি মামলার ৩০ জন আসামির মধ্যে ২৫ জনই সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা। তাঁদের মধ্যে নয়জন অবসরপ্রাপ্ত, একজন এলপিআরে গেছেন এবং বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন ১৫ জন।
পরে ঢাকা সেনানিবাসের একটি ভবনকে সাময়িকভাবে কারাগার ঘোষণা করে গত ১২ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষাসেবা বিভাগের উপসচিব মো. হাফিজ আল স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮-এর ধারা ৫৪১(১)-এর ক্ষমতাবলে এবং দি প্রিজন অ্যাক্টের ধারা ৩-এর ‘‘বি’’ অনুসারে ঢাকা সেনানিবাসের বাশার রোডসংলগ্ন উত্তর দিকে অবস্থিত ‘‘এমইএস’’ বিল্ডিং নম্বর-৫৪-কে সাময়িকভাবে কারাগার হিসেবে ঘোষণা করা হলো।’
গ্রেপ্তার সেনা কর্মকর্তাদের পরে এই কারাগারে রাখা হয়।