নির্বাচনী ব্যয় কমানো না গেলে নির্বাচনপরবর্তী দুর্নীতি কমানো যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন নাগরিক প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশের আহ্বায়ক ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেছেন, নির্বাচনী ব্যয় কমানো না গেলে নির্বাচনোত্তর দুর্নীতি কমানো যাবে না। কারণ, এই ব্যয় পরে জনগণের কাছ থেকে আদায়ের চেষ্টা করা হয়।
রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আজ বুধবার আয়োজিত ‘নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার: অগ্রগতি পর্যালোচনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এ বৈঠকের আয়োজন করে।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘নির্বাচনী ব্যয় নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দল ও নির্বাচন কমিশন উভয়ের যে দায়িত্ব আছে, দুই ক্ষেত্রেই তা অবহেলা করা হচ্ছে। যেহেতু রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কারের কোনো প্রক্রিয়া হলো না এবং এটা আমরা পারলাম না, সে কারণে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব বেড়ে গেছে। নির্বাচন কমিশন তার সক্ষমতা প্রমাণ করতে পারবে কি না, এটা এখন দেখার বিষয়।’
দেবপ্রিয় বলেন, নাগরিক প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রিফর্ম ট্র্যাকার নামে একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম চালু করা হয়েছে; যেখানে নির্বাচন, দুর্নীতি দমন, মিডিয়া, শ্রমসহ ১৮টি ডোমেইনের সংস্কারকাজ পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। নির্বাচনসংক্রান্ত প্রায় ৫০টি ডকুমেন্টস পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ৩১টি সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে মাত্র দুটি বাস্তবায়নের পর্যায়ে রয়েছে। একটি হলো জেন্ডার গ্যাপ কমানো এবং অন্যটি নির্বাচনের প্রাক্কালে যাঁরা ১৮ বছরে উপনীত হবেন, তাঁরা যাতে ভোটার তালিকায় যুক্ত থাকতে পারেন, সেটার ব্যবস্থা করা।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, অভ্যুত্থানপরবর্তী সময়ে নির্বাচনই এখন চলমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের প্রধান স্তম্ভ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানুষের মনে প্রশ্ন রয়েছে—নির্বাচন আদৌ হবে কি না বা হলেও এর গুণমান কেমন হবে। কয়টা বুথ দখল হলে বা কত শতাংশ ভোট পড়লে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে—এমন প্রশ্ন সবার। একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের সূচক কী হবে এবং ‘অংশগ্রহণমূলক’ ও ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক’ শব্দ দুটির প্রকৃত অর্থ কী, তা স্পষ্ট করা প্রয়োজন। এ শব্দগুলোর সঠিক ব্যাখ্যা না থাকলে নির্বাচনের গুণমান নিয়ে পরে বড় বিতর্কের সৃষ্টি হতে পারে। এ জন্য সরকারের এগুলোর সঠিক ব্যাখ্যা দেওয়া উচিত।
বৈঠকে সুজনের সম্পাদক ও নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদারের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন বিচারপতি এম এ মতিন, ইসির সাবেক অতিরিক্তি সচিব জেসমিন টুলি প্রমুখ।