আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় মুগ ডালের উপস্থিতির ইতিহাস বহু প্রাচীন। মুগ দিয়ে তো ডাল রান্না হয়-ই, সে সঙ্গে বড় কোনো মাছের মাথা দিয়ে রান্না হয় মুড়িঘণ্ট। এ ছাড়া এর গুঁড়া বা বেসন দিয়ে তৈরি করা হয় লাড্ডুজাতীয় মিষ্টি। ডালের বাইরে মুগ দিয়ে রান্না খাবারের মধ্যে সম্ভবত সবচেয়ে বিখ্যাত খাবারের নাম মুগ পাকন পিঠা। শীতকালে খাওয়া হয় রসে ভিজিয়ে কিংবা চিনির সিরায় ভিজিয়ে।
এখানে খাবারদাবার নিয়ে আলাপ করা হবে না। আলাপ হবে মূলত মুগ দিয়ে রূপচর্চা নিয়ে। হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন, মুগ ডালে রূপচর্চা। এখানে একটি কথা বলে রাখা ভালো। তা হলো, রূপচর্চায় মুগ ডালের ব্যবহারের পদ্ধতি মূলত ঐতিহ্যগত। চীনের প্রাচীন চিকিৎসাপদ্ধতি ও আয়ুর্বেদে ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এর ব্যবহারের উল্লেখ আছে। মনে করা হয়, মুগ ডাল ঠান্ডা প্রকৃতির প্রাকৃতিক উপাদান। এটি ব্রণ, ফুসকুড়ি বা প্রদাহের মতো ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা উপশম করে। ত্বকের জ্বালা প্রশমিত করতে মুগ ডালের পেস্ট ব্যবহার করা হয়। মানুষের ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য মুগ ডালের প্রভাবের ওপর করা আধুনিক বৈজ্ঞানিক গবেষণার সংখ্যা সীমিত।
তবে প্রাকৃতিক উপাদান বিবেচনায় মুগ দিয়ে ত্বক ও চুলের যত্ন নেওয়া ইদানীং আবার জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আগে বলেছি, আয়ুর্বেদিক চর্চা ও প্রাচীন চীনা রূপচর্চায় এর ব্যবহার বহু পুরোনো। ধারণা করা হয়, চীনা সম্রাজ্ঞীদের অনেকে রূপচর্চার জন্য মুগ ডালের পেস্ট ব্যবহার করতেন।
ত্বকের জন্য মুগ ডালের ব্যবহার
মুগ ডালের গুঁড়া বা বেসন প্রাকৃতিক ক্লিনজার এবং এক্সফোলিয়েটর হিসেবে কাজ করে। এটি ত্বকের মৃত কোষ, ময়লা ও অতিরিক্ত তেল দূর করে পরিষ্কার ও উজ্জ্বল করে তোলে। এর গুঁড়া মিহি হওয়ায় ত্বকের জন্য মৃদু এক্সফোলিয়েন্টের কাজ করে। এটি সংবেদনশীল ত্বকের জন্য উপযোগী। ব্রণ ও ব্ল্যাকহেডস দূর করতে এর ভূমিকা রয়েছে। এতে ত্বক শুষ্ক হলে নরম হয় ও উজ্জ্বল হয় এবং বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ; যেমন একজিমা ও চুলকানি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
এর ব্যবহার কিন্তু খুব সহজ। মুগ ডাল সাধারণত সারা রাত কাঁচা দুধ বা পানি দিয়ে ভিজিয়ে রেখে পরদিন তা দিয়ে মিহি পেস্ট তৈরি করে ত্বকে লাগানো হয়। এ ছাড়া সহজ ফেসপ্যাক তৈরি করতে মুগ ডালের গুঁড়া বা বেসনের সঙ্গে গোলাপজল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করা যায়। এটি মুখ ও গলায় ১৫-২০ মিনিট ম্যাসাজ করে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বকের রং উজ্জ্বল ও কোমল করতে সহায়তা করবে। ত্বক বেশি তৈলাক্ত হলে দই ও মুগ ডালের গুঁড়া মিশিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি তেল নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এ ছাড়া এই পেস্টে দই, মধু, গোলাপজল, কমলার খোসা, অ্যালোভেরা, হলুদ ইত্যাদি উপাদান মিশিয়ে ত্বকের সমস্যা অনুযায়ী ব্যবহার করা যেতে পারে। মুগ ডালের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও প্রদাহ নিরাময় ক্ষমতা ত্বকের জ্বালাপোড়া ও বলিরেখা সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া মুগ ডালের গুঁড়ার সঙ্গে কমলার খোসা গুঁড়া বা অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে ব্যবহার করলে ত্বকের মলিনতা দূর হয়।
চুলের যত্নে মুগ ডাল
মুগ ডালের গুঁড়া শ্যাম্পুর বিকল্প হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। এটি চুলের খুশকি দূর, চুল পরিষ্কার এবং চুলের গোড়া শক্ত করে। মুগ ডালের গুঁড়া ঘন করে পানিতে ভিজিয়ে রেখে সেই পেস্ট মাখলে চুল নরম ও চকচকে হয়।
চুলের দৈর্ঘ্য ও ঘনত্বের ওপর নির্ভর করে উপযুক্ত পরিমাণ মুগ ডালের পাউডার পানি দিয়ে মিশিয়ে মসৃণ পেস্ট তৈরি করুন। তারপর পেস্টটি আপনার ভেজা মাথার ত্বক ও চুলে লাগিয়ে নিন। কয়েক মিনিটের জন্য ধীরে ধীরে পেস্টটি আপনার মাথার ত্বকে ম্যাসাজ করে ৫-১০ মিনিটের জন্য চুলে রেখে দিন। তারপর পেস্ট অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত চুল পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এরপর চাইলে নিয়মিত কন্ডিশনার ব্যবহার করতে পারেন।
এসব পদ্ধতি ব্যবহারে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় না বা হলেও খুব কম। তবে মুগ ডালের যেকোনো পেস্ট ঋতু অনুসারে সপ্তাহে এক বা দুবার ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। এ জন্য ত্বক বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্যবহার শুরু করতে পারেন।
সূত্র: কেয়ারিং সানশাইন ডটকম, বার্ডি ডটকম, হ্যাপি আর্থ ফার্ম ডট ওআরজি