নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু নিয়ে মানুষের মতামতের অন্ত নেই। কেউ এই শহরের সমৃদ্ধ ইতিহাস, সংস্কৃতি আর শতবর্ষী স্থাপত্য দেখে মুগ্ধ হন। আবার কেউ ধুলাবালু, যানজট আর কোলাহল এড়িয়ে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়েন হিমালয়ের টানে। তবে কাঠমান্ডু ঘোরার ভালো উপায় হলো, আশপাশের ছোট শহর ও গ্রামগুলোতে ভ্রমণ করা। তাতে শহরের ভেতরের ইতিহাস আর বাইরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দুটিই একসঙ্গে পাওয়া যায়।
নাগরকোট: সূর্যাস্ত আর সূর্যোদয়ের অপূর্ব দৃশ্য
হিমালয়ের ওপর সূর্য ওঠা আর ডোবার দৃশ্য নেপালে ভ্রমণের সেরা অভিজ্ঞতাগুলোর একটি। সেই অভিজ্ঞতার জন্য নাগরকোট খুব জনপ্রিয়। এখানে থাকার ব্যবস্থা থেকে শুরু করে খাবারের জায়গা—সবই সহজে পাওয়া যায়। পরিষ্কার আবহাওয়ার দিনে হোটেল রুমের ব্যালকনি থেকে বা লুকআউট টাওয়ার থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা যায়। চাইলে ছোট জলপ্রপাত হাঁটা দূরত্বে দেখে আসা যায়।
যেভাবে যাবেন
কাঠমান্ডু ভ্যালির পূর্ব প্রান্তে নাগরকোট। বাসে যেতে হলে ভক্তপুরে নামতে হয়। সেখান থেকে আরেকটি বাসে নাগরকোট। তাই বেশির ভাগ ভ্রমণকারী প্রাইভেট গাড়ি নেন, যাতে সময়মতো সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয় দেখা যায়।
নমোবুদ্ধ: নেপালের পবিত্র বৌদ্ধ তীর্থস্থান
বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের কাছে নমোবুদ্ধ অত্যন্ত পবিত্র। প্রচলিত কাহিনি অনুযায়ী, এখানে একসময় বুদ্ধ ক্ষুধার্ত বাঘিনী ও তার শাবকদের নিজের দেহ উৎসর্গ করেছিলেন। সেই স্মৃতিস্তম্ভ হিসেবে আছে ছোট সাদা স্থাপনা। সেখান থেকে হিমালয়ের চমৎকার দৃশ্য দেখা যায়। এ ছাড়া বিশাল থ্রাংগু তাশি ইয়াংৎসে মঠটি দেখার মতো। চাইলে একদিনের সফরে ঘুরে আসা যায়। আবার চাইলে সেখানে থাকতেও পারেন। নমোবুদ্ধ রিসোর্টের আঙিনায় বসে অরগানিক ভেজিটেরিয়ান লাঞ্চ খেতে খেতেও পাহাড় দেখা যায়।
যেভাবে যাবেন
কাঠমান্ডু থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে দুই ঘণ্টার দূরত্ব। পথে বানেয়া ও ধুলিখেলে নামতে হতে পারে। লোকাল বাস পাওয়া যায়, তবে ট্যাক্সি বা ভাড়া গাড়ি বেশি আরামদায়ক।
ফারফিং: হিন্দু ও বৌদ্ধ—দুই ধর্মের মিলনস্থল
কাঠমান্ডুর দক্ষিণ প্রান্তের ফারফিং প্রকৃতি ও ধর্মীয় ঐতিহ্যের দুর্দান্ত মিশেল। এখানে একদিকে আছে বৌদ্ধদের ধ্যানগুহা, অন্যদিকে অল্প দূরেই আছে বিখ্যাত হিন্দু মন্দির দক্ষিণকালী। ফারফিংয়ে আছে ইয়াংলেশো গুহা, যেখানে গুরু রিনপোচে ধ্যান করেছিলেন বলে বিশ্বাস করা হয়। কাছেই নেওয়ারদের বজ্রযোগিনী মন্দির। আর দক্ষিণে হাঁটলেই পৌঁছে যাওয়া যায় দক্ষিণ কালীমন্দিরে। যেখানে দেবী কালীর উদ্দেশে পশু বলি দেওয়া হয়, বিশেষ করে দশাই উৎসবে।
যেভাবে যাবেন
পাটনের লাগাঙ্কেল বাস পার্ক বা কাঠমান্ডুর রন পার্ক থেকে বাসে যাওয়া যায়। সময় লাগে প্রায় দেড় ঘণ্টা। ট্যাক্সি নিলে সময় কম লাগে।
পানাউটি: ঐতিহাসিক নেওয়ার শহরের অদ্ভুত সৌন্দর্য
নেওয়ার সম্প্রদায় অধ্যুষিত ছোট ব্যবসায়িক শহর পানাউটি নেপালের পুরোনো শহরগুলোর একটি। পুরোনো বাজারের দালানগুলো থেকে শুরু করে নদীর ধারে থাকা মন্দির—সবই দেখার মতো। স্থানীয় বিশ্বাস আছে যে পুরো শহরটি একটি বিশাল পাথরের ওপর তৈরি, তাই ভূমিকম্পেও ক্ষতি হয় না। ইন্দ্রেশ্বর মহাদেব প্যাগোডা মন্দিরটি এখানে অবশ্যই দেখার মতো। এটি নেপালের প্রাচীনতম টিকে থাকা প্যাগোডা বলে ধারণা করা হয়।
যেভাবে যাবেন
কাঠমান্ডু থেকে প্রায় দুই ঘণ্টার পথ। চাইলে ট্রেইল ধরে হেঁটে যেতে পারেন। সাঙ্গা পানাউটি কমিউনিটি হাইকিং ট্রেইল অনেক জনপ্রিয়।
চাংগুনারায়ণ: প্রাচীনতম মন্দির ও শান্ত পরিবেশ
ভক্তপুর ঘোরার সময় খুব সহজেই চাংগুনারায়ণ যোগ করা যায়। পাহাড়ের ওপর ছোট এই শহরটি থেকে ভক্তপুর শহর ও দূরের পাহাড় দেখা যায়। পঞ্চম শতকের কিছু অংশসহ নেপালের পুরোনো মন্দির এখানে অবস্থিত। ইউনেসকো ঘোষিত ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হলেও এখানে ভিড় তুলনামূলক কম। মন্দির ছাড়াও লিভিং ট্রেডিশনস মিউজিয়াম ঘুরে দেখা যেতে পারে। ২০১৫ সালের ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এখন আবার খুলে গেছে এটি। এখানে নেপালের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী সম্পর্কে জানা যায়।
যেভাবে যাবেন
ভক্তপুর থেকে ট্যাক্সিতে ২০ মিনিটের মতো সময় লাগে। কাঠমান্ডু থেকে গাড়িতে যেতে একটু বেশি সময় লাগে। এখান থেকে নাগরকোট পর্যন্ত হেঁটে বা হাইকিং করেও যাওয়া যায়।
শিবপুরী ন্যাশনাল পার্ক: শহরের কাছেই প্রকৃতি
কাঠমান্ডুর উত্তরের শিবপুরী ন্যাশনাল পার্ক প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য একদম উপযুক্ত। বুধানীলকংঠার ওপরের অংশ থেকে শুরু হয় এই অরণ্য। সেখানে হাঁটার ট্রেইল, মঠ নানাবাড়ি আর পরিষ্কার দিনে শহরের দুর্দান্ত দৃশ্য পাওয়া যায়। এর জনপ্রিয় রুট হলো বুধানীলকংঠা থেকে নেগি গোম্পা হয়ে শিবপুরী শিখর বা বাগদ্বার পর্যন্ত। এরপর চাইলে শিবপুরীর চূড়া (৮ হাজার ৯৬৩ ফুট) পর্যন্ত উঠতে পারেন।
যেভাবে যাবেন
কাঠমান্ডুর বিভিন্ন জায়গা থেকে বুধানীলকংঠা যাওয়ার বাস পাওয়া যায়। সাঝা যাতায়াতের সবুজ বাসও যায়। সেখান থেকে পার্কের প্রবেশদ্বার অল্প দূর।
সূত্র: লোনলি প্ল্যানেট