ডিজিটাল যুগে দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও ডিগ্রি—সবকিছুর মধ্যেই যেন এক অদৃশ্য প্রতিযোগিতা চলছে। প্রতিদিন তৈরি হচ্ছে নতুন স্কিল, নতুন চাকরির সুযোগ ও নতুন কর্মসংস্কৃতি। কিন্তু এত কিছুর ভিড়ে ক্যারিয়ারের আসল পার্থক্যটা কোথায় তৈরি হয়? ফোর্বসের সাম্প্রতিক বিশ্লেষণ বলছে, শুধু স্কিল বা অভিজ্ঞতাই নয়; বরং সঠিক মানুষের সঙ্গে সঠিক সম্পর্কও এ ক্ষেত্রে বড় ব্যবধান তৈরি করে দিতে পারে।
পরিকল্পনা আগে, সংযোগ পরে
নেটওয়ার্কিং হোক বা ব্যবসা, সব কাজের জন্য স্পষ্ট পরিকল্পনা থাকা জরুরি। অনেকেই ভাবেন, ‘নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচিত হব’—এটিই পরিকল্পনা। কিন্তু এটি প্রকৃতপক্ষে লক্ষ্য, পরিকল্পনা নয়। পরিকল্পনা শুরু হয় নিজের প্রত্যাশা থেকে। আপনি কী চান? কোন ধরনের মানুষের সঙ্গে সংযোগ তৈরি করতে চান? তাঁদের কাছ থেকে কী শিখতে চান?
সংযোগের গতি নয়, স্থায়িত্বই আসল
অনেকে নেটওয়ার্কিংকে দ্রুত পরিচয় বাড়ানোর প্রতিযোগিতা মনে করেন। অল্প সময়ে বেশি
মানুষের সঙ্গে যুক্ত হওয়াই যেন সাফল্যের মান! কিন্তু বাস্তব নেটওয়ার্কিংয়ের শক্তি সংখ্যায় নয়, আসল সাফল্য হলো সম্পর্কের স্থায়িত্বে। ২ মিনিটের সংক্ষিপ্ত আলাপে সত্যিকারের সম্পর্ক তৈরি হয় না। নিয়মিত যোগাযোগ, আন্তরিক আগ্রহ এবং সময় দেওয়া হলো আসল সম্পর্কের ভিত্তি। যোগাযোগের এ ক্ষেত্রে কমসংখ্যক মানুষের সঙ্গে গভীর; বরং দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কই আসল শক্তি।
ওপেন বনাম ক্লোজড নেটওয়ার্কিং
নেটওয়ার্কিং মানে শুধু পরিচিতির সংখ্যা নয়; কার সঙ্গে সংযুক্ত হচ্ছেন, সেটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমরা প্রায়ই শুধু একই ক্ষেত্রের মানুষের সঙ্গে যুক্ত হই। এতে স্বস্তি থাকে, অভিজ্ঞতা শেয়ার হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে নতুন ধারণা বা নতুন কিছু শেখার সুযোগ সীমিত থাকে। তাই নেটওয়ার্ককে ওপেন রাখাও জরুরি। অন্য শিল্প বা ক্ষেত্রের মানুষের সঙ্গে সংযোগ যে কারও জন্য নতুন কৌশল, ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি এবং অপ্রত্যাশিত সুযোগ তৈরি করে দিতে পারে।
ছোট উদ্যোগেই শুরু হয় বড় সংযোগ
নেটওয়ার্কিং মানে বড় ইভেন্ট বা দীর্ঘ আলাপ নয়। ছোট ছোট পদক্ষেপও শক্তিশালী সম্পর্ক তৈরি করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ সংক্ষিপ্ত শুভেচ্ছা বার্তা, সামাজিক মাধ্যমে চিন্তাশীল মন্তব্য অথবা বিশেষ দিনে অভিনন্দন জানানো। এই ছোট উদ্যোগগুলো ধীরে ধীরে বিশ্বাস এবং বোঝাপড়ার ভিত্তি গড়ে তোলে। বড় সম্পর্কগুলো শুরু হয় ছোট উদ্যোগ থেকে, আর নিয়মিত ছোট ছোট সংযোগই দীর্ঘমেয়াদি নেটওয়ার্কের ভিত্তি গড়ে দেয়।
সম্পর্কের আসল পরীক্ষা হলো ফলোআপ
নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচয় হওয়া সহজ; কিন্তু সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা কঠিন। এ জন্য নিয়মিত ফলোআপ জরুরি। নতুন কারও সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর দীর্ঘবিরতি না দিয়ে সময় করে তার খোঁজ নিন। উপলক্ষ অনুযায়ী তাঁকে বার্তা পাঠান। তিনি খোঁজ না নিলেও আপনি প্রয়োজন অনুযায়ী যোগাযোগ রক্ষা করে চলুন। তাঁর সঙ্গে নতুন কোনো তথ্য শেয়ার করুন বা নতুন কিছু জানতে চান। এটি দেখায়, আপনি সম্পর্ক বজায় রাখতে কতটা মনোযোগী।
নেটওয়ার্কিং আসলে গবেষণার একটি দক্ষতা নেটওয়ার্কিং শুধু সামাজিক
দক্ষতা নয়, এটি শেখার একটি উপায়ও। যাঁর সঙ্গে কথা বলছেন তাঁর অভিজ্ঞতা, দৃষ্টিভঙ্গি এবং ক্ষেত্র-পরিবর্তন সবই আপনার শেখার উপকরণ। সফল নেটওয়ার্কাররা শেখে, বিশ্লেষণ করে এবং সে জ্ঞান নিজেদের কাজে প্রয়োগ করে। ফলে নতুন ধারণা আসে, নিজেকে আরও শক্তিশালী ভিত্তির ওপর গড়ে তোলা সম্ভব হয়।
শ্রবণ ও পর্যবেক্ষণ জরুরি
সফল নেটওয়ার্কাররা শুধু কথা বলেন না, তাঁরা অনেকটা শ্রোতা ও পর্যবেক্ষক হিসেবেও কাজ করেন। নতুন মানুষের সঙ্গে আলাপের সময় তাঁদের কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শোনা, আচরণ এবং কাজের পদ্ধতি লক্ষ্য করা—এসব তথ্য ভবিষ্যতে সম্পর্ক এবং ক্যারিয়ারে কাজে আসে। শ্রবণ এবং পর্যবেক্ষণ শুধুই শেখার জন্য নয়; এটি বিশ্বাস গড়ার একটি উপায়ও। যখন মানুষ দেখে যে আপনি তাঁদের কথা গুরুত্ব দিয়ে শুনছেন, তাঁরা আপনাকে আরও বেশি মূল্য দেন এবং সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়।
সূত্র: ফোর্বস ও হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ