মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর এই পৃথিবীতে আগমন মানব ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং বরকতময় ঘটনা। তাঁর আগমনের মধ্য দিয়ে মানবসভ্যতা এক নতুন দিগন্তের সন্ধান পায়। সত্য, ন্যায় ও মানবিকতার যে আলোকবর্তিকা তিনি জ্বেলে গেছেন, তা পৃথিবীর আর কোনো ঘটনা দিয়ে পরিমাপ করা সম্ভব নয়।
আমাদের সমাজে, বিশেষত ভারতীয় উপমহাদেশে, ১২ রবিউল আউয়াল এলে একধরনের আনন্দ উৎসবের ঢেউ লাগে। অগণিত আয়োজন চলতে থাকে। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে রাসুল (সা.)-এর পবিত্র স্মৃতি আমাদের জন্য অনেক বড় আনন্দের। কিন্তু সমস্যা হলো, এই পবিত্র স্মৃতিকে আমরা যেন শুধু রবিউল আউয়াল মাস, এমনকি ১২ রবিউল আউয়ালের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে ফেলেছি।
রাসুল (সা.)-এর জীবন ছিল এক জীবন্ত সিরাত। তিনি ২৩ বছর নবুওয়াতের দায়িত্ব পালন করেছেন, কিন্তু একবারও নিজের জন্মদিন পালন করেননি। তাঁর সাহাবিরাও, যাঁরা নিজেদের জীবন তাঁর জন্য উৎসর্গ করতে প্রস্তুত ছিলেন, তাঁরাও কখনো এমনটি করেননি। কারণ, ইসলামে জন্মদিন পালনের কোনো বিধান নেই। ইসলাম কোনো আনুষ্ঠানিকতার ধর্ম নয়, এটি আমলের ধর্ম। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রতিটি মুহূর্তে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিজেকে উৎসর্গ করাই ইসলামের শিক্ষা।
সাহাবিদের কাছে সিরাত ছিল জীবনের প্রতিটি মুহূর্তের নাম। তাঁদের প্রতিটি দিন ছিল সিরাতের দিন। তাঁরা শুধু রাসুল (সা.)-এর কথা শুনতেন না, বরং তাঁর প্রতিটি সুন্নতকে নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করতেন। সাহাবিরা কেবল বাহ্যিক আনুগত্যই দেখাননি, বরং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে রাসুল (সা.)-এর আদর্শকে অনুসরণ করেছেন।
আমাদের আজকের এই দুর্দশার কারণ হলো সুন্নতের প্রতি উদাসীনতা। আমরা ভাবি, সুন্নতের ওপর চললে মানুষ কী বলবে! অথচ সাহাবিরা সুন্নতের ওপর অটল থেকে দুনিয়াতে সম্মান ও ক্ষমতা দুটোই লাভ করেছেন। আল্লাহ আমাদের জন্য রাসুলকে সর্বোত্তম আদর্শ হিসেবে পাঠিয়েছেন। তাঁর জন্মদিন পালন করা নয়, বরং তাঁর জীবনকে নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করাই আমাদের আসল কর্তব্য। আমাদের প্রতিটি কাজ যেন তাঁর সুন্নতের আলোকে হয়। তাহলেই প্রতিটি দিন হবে সিরাতের দিন, প্রতিটি মুহূর্ত হবে সিরাতের মুহূর্ত।