হোম > ইসলাম

ঋণ পরিশোধের এক অবিশ্বাস্য ঘটনা

ফয়জুল্লাহ রিয়াদ

প্রতীকী ছবি

পৃথিবীতে কোনো মানুষই স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। জীবনের নানা প্রয়োজনে মানুষকে অন্যের দ্বারস্থ হতে হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে জরুরি একটি প্রয়োজন হলো আর্থিক আদান-প্রদান বা ঋণ। ব্যবসা ও অর্থনৈতিক প্রয়োজন কিংবা জীবন-জীবিকার তাগিদে মানুষ একে অপরের কাছে ঋণ গ্রহণ করে থাকে। ইসলামে এই ঋণ দেওয়া ও নেওয়া—উভয়কেই অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

প্রয়োজনে কাউকে ঋণ প্রদান করাকে আল্লাহ তাআলা এত বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন, একে সরাসরি আল্লাহকে ঋণ দেওয়া হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এমন কে আছে যে আল্লাহকে দেবে উত্তম ঋণ (কর্জ হাসানা), অতঃপর আল্লাহ তাআলা তাকে (তার প্রতিদানকে) দ্বিগুণ—বহুগুণে বৃদ্ধি করবেন।’ (সুরা বাকারা: ২৪৫)

ঋণ দিলে তা সদকার সমপরিমাণ সওয়াব এনে দেয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘দুবার ঋণ দেওয়া একবার সদকা করা থেকে উত্তম।’ (জামে সগির: ৬১০০)

অন্যদিকে, ঋণগ্রহীতার জন্য যথাসময়ে তা পরিশোধ করা অপরিহার্য কর্তব্য। ঋণ আদায়ে গড়িমসি করাকে জুলুমের অন্তর্ভুক্ত এবং অকৃতজ্ঞতার শামিল বলা হয়েছে। ইসলামের দৃষ্টিতে ঋণ মূলত একটি আমানত। সময়মতো তা আদায় না করা একধরনের খেয়ানত।

পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাআলা তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন যেন তোমরা আমানত তার প্রাপকের নিকট ফিরিয়ে দাও।’ (সুরা নিসা: ৫৮)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে উত্তম সেই, যে উত্তমরূপে ঋণ পরিশোধ করে।’ (সহিহ্ বুখারি: ২২৩২)

ঋণ গ্রহণ করার সময় কোনো ব্যক্তি যদি আন্তরিকভাবে তা পরিশোধ করার নিয়ত রাখে এবং আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা রাখে, তাহলে আল্লাহ তাআলা অবশ্যই তাকে সাহায্য করেন। হাদিস শরিফে ঋণ আদায়ের এমনই এক বিস্ময়কর ঘটনা বর্ণিত হয়েছে।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বনি ইসরাইল সম্প্রদায়ের জনৈক ব্যক্তির কথা বলেছেন। একবার সে বনি ইসরাইলের আরেক ব্যক্তির কাছে এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা ঋণ চেয়েছিল। ঋণদাতা তখন বলল, ‘আমার নিকট সাক্ষী নিয়ে এসো।’ ঋণগ্রহীতা বলল, ‘সাক্ষী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট।’

লোকটি আবার বলল, ‘তাহলে একজন জামিনদার (ঋণের দায়বদ্ধ সহযোগী) নিয়ে এসো।’ সে বলল, ‘জামিন হিসেবেও আল্লাহই যথেষ্ট।’

এ কথা শুনে ঋণদাতা আশ্বস্ত হলো এবং একটি নির্দিষ্ট মেয়াদের শর্তে তাকে এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা দিয়ে দিল।

ঋণগ্রহীতা সেই এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা নিয়ে ব্যবসার উদ্দেশ্যে সমুদ্রপথে যাত্রা করল। নির্ধারিত সময়ে সে তার ব্যবসা সফল করল এবং ঋণ পরিশোধের জন্য সমুদ্র পাড়ি দেওয়ার উদ্দেশে একটি নৌযান খুঁজতে লাগল। কিন্তু কোনো নৌযান খুঁজে না পেয়ে সে হতাশ হলো।

অতঃপর সে কাঠের একটি টুকরা নিয়ে তা ছিদ্র করল এবং তার মধ্যে এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা ও প্রাপকের নামে একটি পত্র ঢুকিয়ে দিল। তারপর ছিদ্রটি বন্ধ করে সে সমুদ্রে চলে এল এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করল, ‘হে আল্লাহ! তুমি জানো যে, আমি অমুকের কাছে এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা ঋণ চেয়েছিলাম। সে একজন জামিনদার চেয়েছিল, আমি বলেছিলাম, জামিন হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট। তোমার নাম বলাতে সে রাজি হয়েছিল। এরপর সে একজন সাক্ষী চেয়েছিল, আমি বলেছিলাম, সাক্ষী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট। এ কথা শুনে সে রাজি হয়ে গিয়েছিল। আমি যথাসময়ে তার প্রাপ্য পৌঁছানোর জন্য একটি নৌযান খুঁজতে যথেষ্ট চেষ্টা করি, কিন্তু কোনো ব্যবস্থা করতে পারিনি। এখন এগুলো তোমার নিকট আমানত রাখছি।’

এই বলে সে কাঠের টুকরাটি পানিতে ফেলে দিল। আল্লাহর ইচ্ছায় তা সমুদ্রে ভাসতে লাগল। এদিকে ঋণদাতা আশা নিয়ে নদীর তীরে এসে পৌঁছাল, এই ভেবে যে হয়তো তার প্রাপ্য কোনো নৌযানে করে এসেছে। হঠাৎ তার নজরে পড়ল ওই কাঠের টুকরাটি। নিজের পরিবারের রান্নার লাকড়ি হিসেবে সে এটি উঠিয়ে নিল। ঘরে এনে যখন একটি কুঠার দিয়ে এটি চিরল, তখন তার মধ্যে রাখা স্বর্ণমুদ্রাগুলো এবং পত্রটি পেয়ে গেল।

কিছুদিন পর ঋণগ্রহীতা এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা নিয়ে এসে হাজির হয়ে বলল, ‘শপথ আল্লাহর! আপনার সম্পদ যথাসময়ে পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্যে আমি সব সময় নৌযান খুঁজেছিলাম, কিন্তু কোনো নৌযান পাইনি। তাই আমার বিলম্ব হয়েছে।’

ঋণদাতা তখন বলল, ‘তুমি কি এর আগে আমার নিকট কিছু পাঠিয়েছিলে?’

লোকটি বলল, ‘আমি তোমাকে তো বলেছি যে এর আগে কোনো যানবাহন পাইনি।’

তখন ঋণদাতা বলল, ‘তুমি কাষ্ঠখণ্ডে করে যা পাঠিয়েছিলে, আল্লাহ তাআলা তা তোমার পক্ষ থেকে পৌঁছে দিয়েছেন।’

এ কথা শুনে লোকটি ওই এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা নিয়ে অত্যন্ত খুশিমনে ফিরে এল। (সহিহ্ বুখারি: ২২৯১)

এই হাদিস থেকে আমরা শিখতে পারি যে আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দার আন্তরিকতা ও প্রচেষ্টাকে কতটা মূল্য দেন। যখন একজন মানুষ তার দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হয় এবং কোনো উপায় খুঁজে না পেয়ে একমাত্র আল্লাহর ওপর ভরসা রাখে, তখন আল্লাহ তাকে এমনভাবে সাহায্য করেন, যা মানবীয় বুদ্ধির কাছে অবিশ্বাস্য মনে হয়।

লেখক: মুহাদ্দিস ও ইসলামবিষয়ক গবেষক

জমাদিউস সানির দ্বিতীয় জুমা: মুমিনের করণীয়

মসজিদগুলো হয়ে উঠুক শিশুবান্ধব

ফুটপাতে পথশিশুদের হিমশীতল রাত

ফরজ গোসলের সময় নারীদের চুল ধোয়ার বিধান

শায়খ শরফুদ্দিন আবু তাওয়ামার হারিয়ে যাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়

আজকের নামাজের সময়সূচি: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫

দাওয়াতুল হকের মারকাজি ইজতেমা শনিবার

একের পর এক ভূমিকম্প মুমিনকে যে সতর্কবার্তা দিয়ে যাচ্ছে

স্ত্রীর সঙ্গে ভালোবাসার গভীরতা বাড়াবে যে সুন্নাহ

আজকের নামাজের সময়সূচি: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫