একজন সফল ও প্রকৃত মোমিনের কাজ হচ্ছে—যে কোনো বস্তু থেকে কাঙ্ক্ষিত ও প্রয়োজনীয় শিক্ষা গ্রহণ করা। সেই হিসেবে কোরবানি থেকে শিক্ষা কী—তা জানা জরুরি। কোরবানি থেকে আমরা কী শিক্ষা নিতে পারি, তা নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে।
১. একত্ববাদের শিক্ষা
বান্দা কোরবানি নামক বিধান থেকে যেসব শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে, তার অন্যতম একটি একত্ববাদের শিক্ষা। অর্থাৎ আল্লাহর প্রতি বান্দার আস্থা-বিশ্বাস দৃঢ় ও নিখুঁত করা। কোরবানি থেকে এই শিক্ষা নেওয়া যায় যে—যাবতীয় সব ধরনের ইবাদত একমাত্র আল্লাহ তাআলার জন্য হতে হবে।
পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘বলে দাও, নিশ্চয়ই আমার নামাজ, আমার ইবাদত ও আমার জীবন-মরণ সবই আল্লাহর জন্য—যিনি জগৎসমূহের প্রতিপালক।’ (সুরা আনআম: ১৬১)
২. নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের শিক্ষা
কোরবানির যাবতীয় কার্যক্রম থেকে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ ও আনুগত্যের শিক্ষা পাওয়া যায়। তা কীভাবে? হ্যাঁ, তাই বলছি। পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম হজরত ইবরাহিম (আ.) এবং ইসমাইল (আ.) অবিস্মরণীয় নির্দেশের সাক্ষী হোন। আর তা হল পিতা কর্তৃক পরমপ্রিয় সন্তান কোরবানির নির্দেশ। কিন্তু এই পাহাড়সম কঠিন নির্দেশ তাঁরা নিঃশর্তভাবে মেনে নেন এবং বাস্তবায়নের চূড়ান্ত চেষ্টা করেন।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সুতরাং (সেটা ছিল এক বিস্ময়কর দৃশ্য) যখন তারা উভয়ে আনুগত্য প্রকাশ করল এবং পুত্রকে পিতা কাত করে শুইয়ে দিল।’ (সুরা সাফফাত: ১০৩)
৩. আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের শিক্ষা
কোরবানি থেকে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা পাওয়া যায় যে—যাবতীয় সব ধরনের কাজ একমাত্র আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির জন্য করা।
পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘আল্লাহর কাছে তাদের গোশত পৌঁছে না, আর তাদের রক্তও না, বরং তাঁর কাছে তোমাদের তাকওয়াই পৌঁছে। এভাবেই তিনি এসব পশু তোমাদের বশীভূত করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা আল্লাহর মহিমা ঘোষণা কর—তিনি তোমাদের হেদায়েত দান করেছেন বলে। যারা সুচারুরূপে সৎকর্ম করে তাদের সুসংবাদ দাও।’ (সুরা হজ: ৩৭)
এ ছাড়াও পশু কোরবানির সঙ্গে সঙ্গে মনের পশুকেও কোরবানি করা এবং ভ্রাতৃত্ববোধের মন-মানসিকতা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা আর অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া ইত্যাদি মানবীয় ও কল্যাণকর গুণের শিক্ষা পাওয়া যায়।
মহান আল্লাহ কোরবানির যথাযথ শিক্ষা নিয়ে, শরিয়ত নির্দেশিত সত্য, সুন্দর ও সুশৃঙ্খল ব্যক্তিজীবন ও সমাজ গঠন করার তৌফিক দান করুন।
লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া কাশেফুল উলূম (হাটখোলা মাদ্রাসা), মধুপুর, টাঙ্গাইল