হোম > বিশ্ব > যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা

মাত্র ৪০ হাজার শরণার্থী নেবে যুক্তরাষ্ট্র, ৩০ হাজারই শ্বেতাঙ্গ দক্ষিণ আফ্রিকান!

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­

গত ১২ মে যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার ডালেস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান প্রথম দফার শ্বেতাঙ্গ দক্ষিণ আফ্রিকান শরণার্থীরা। তাঁদেরই কয়েকজন ‘পিপল মুভার’ থেকে নামছেন। ছবি: সংগৃহীত

আগামী বছরের জন্য শরণার্থী নেওয়ার সীমা প্রায় ৪০ হাজারে নামানোর আলোচনা করছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। তাদের মধ্যে বেশির ভাগ বরাদ্দ দেওয়া হবে দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠীর জন্য। এটি যুক্তরাষ্ট্রের শরণার্থী নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

বিষয়টি সম্পর্কে অবগত দুই মার্কিন কর্মকর্তা ও শরণার্থী কর্মসূচির একটি গোপন ই-মেইলের বরাতে এমন তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

মার্কিন স্বাস্থ্য ও মানবসেবা দপ্তরের (এইচএইচএস) শীর্ষ শরণার্থী কর্মসূচি কর্মকর্তা অ্যাঞ্জি সালাজার ১ আগস্টের এক বৈঠকের পর অঙ্গরাজ্য পর্যায়ের শরণার্থীকর্মীদের জানিয়ে দেন, শরণার্থী নেওয়ার সীমা সর্বোচ্চ ৪০ হাজার হতে পারে। রয়টার্সের হাতে আসা বৈঠকের ই-মেইলের সারসংক্ষেপে বিষয়টি উল্লেখ ছিল।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুই মার্কিন কর্মকর্তা জানান, এই ৪০ হাজার শরণার্থীর মধ্যে প্রায় ৩০ হাজার হবেন ডাচ বংশোদ্ভূত দক্ষিণ আফ্রিকার একটি সংখ্যালঘু গোষ্ঠী। ট্রাম্প প্রশাসনের আফ্রিকানদের অগ্রাধিকার দেওয়ার এ সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের দ্বিদলীয় সমর্থন পাওয়া শরণার্থী নীতিকে বদলে দিতে পারে।

২০২৪ অর্থবছরে সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসন ১ লাখ শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছেল, সেখানে ট্রাম্প দিচ্ছেন মাত্র ৪০ হাজার। তবে ২০২১ অর্থবছরে ট্রাম্প প্রথম মেয়াদের শেষ দিকে রেকর্ড সর্বনিম্ন ১৫ হাজার শরণার্থী নিয়েছিলেন। সে তুলনায় ট্রাম্প এবার উদার হয়েছেন বৈকি।

বিষয়টির সঙ্গে যুক্ত আরও একজন ব্যক্তি জানান, সর্বনিম্ন ১২ হাজার পর্যন্ত সীমা নির্ধারণের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।

জাতিসংঘের হিসাবে, বিশ্বে বর্তমানে ৩৭ মিলিয়ন শরণার্থী রয়েছে। ট্রাম্প জানুয়ারি মাসে ক্ষমতায় এসে শরণার্থী নেওয়া বন্ধ করে দেন, তবে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আফ্রিকানদের জন্য একটি বিশেষ কর্মসূচি চালু করেন। তিনি দাবি করেন, দক্ষিণ আফ্রিকার সংখ্যাগরিষ্ঠ কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীর দেশে এ শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘুরা বর্ণবৈষম্য ও সহিংসতার শিকার; যা দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার অস্বীকার করেছে।

রয়টার্স জুলাই মাসে জানিয়েছিল, কৃষ্ণাঙ্গ বা অশ্বেতাঙ্গ দক্ষিণ আফ্রিকানদের শরণার্থী কর্মসূচির জন্য যোগ্য হিসেবে গণ্য করা হবে কি না, তা নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের ভেতরে মতবিরোধ চলছে।

রয়টার্সের হাতে আসা ই-মেইল অনুযায়ী, আফ্রিকানদের পাশাপাশি ট্রাম্প প্রশাসন আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রকে সহায়তা করা কিছু আফগান ও ইউক্রেনীয়কেও আনার পরিকল্পনা করছে। কিছু স্থান খালি রাখা হবে, যাতে প্রয়োজনে অন্য জাতীয়তার শরণার্থীদেরও আনা যায়।

হোয়াইট হাউসের ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আনা কেলি বলেন, ২০২৬ অর্থবছরের (যা ১ অক্টোবর শুরু হবে) জন্য ট্রাম্প আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত না দেওয়া পর্যন্ত কোনো কিছুই চূড়ান্ত নয়।

কেলি বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মানবিক হৃদয়ের অধিকারী, তাই তিনি এই সাহসী মানুষদের যুক্তরাষ্ট্রে স্বাগত জানিয়েছেন। শরণার্থী নেওয়ার সীমা আগামী মাসে নির্ধারিত হবে, তাই এখন যে সংখ্যা আলোচনা হচ্ছে, সেগুলো কেবল অনুমান।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, দপ্তরের সাম্প্রতিক মানবাধিকার প্রতিবেদনে দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গ আফ্রিকান ও অন্য সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ‘উসকানিমূলক বর্ণবাদী বক্তব্য’ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।

এইচএইচএস শরণার্থী সীমাসংক্রান্ত প্রশ্নগুলো হোয়াইট হাউসে পাঠিয়েছে। তবে সালাজার রয়টার্সের মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেননি।

হোয়াইট হাউসের একজন কর্মকর্তা জানান, প্রথম দল হিসেবে ৫৯ জন দক্ষিণ আফ্রিকান মে মাসে যুক্তরাষ্ট্র এসেছেন, তবে আগস্টের শুরুর দিক পর্যন্ত মাত্র ৩৪ জন অতিরিক্ত এসেছেন।

গত জুলাইয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ব্যাপক কর্মী ছাঁটাইয়ের অংশ হিসেবে শরণার্থী কর্মসূচির অনেক কর্মীকে ছাঁটাই করে। এর ক্ষতিপূরণ হিসেবে শরণার্থী সহায়তা নিয়ে কাজ করা এইচএইচএসের কর্মীদের দক্ষিণ আফ্রিকা কর্মসূচিতে পাঠানো হয়েছে। একজন কর্মকর্তা জানান, গত সোমবার ১৩ জন এইচএইচএসের কর্মী প্রিটোরিয়ায় পাঠানো হয়েছে, যদিও তাঁদের বেশির ভাগের শরণার্থী যাচাইয়ের সরাসরি অভিজ্ঞতা নেই।

এইচএইচএসের একজন মুখপাত্র বলেন, প্রশিক্ষিত কর্মীদের শরণার্থী পুনর্বাসনে সহায়তার জন্য পাঠানো হয়েছে, তবে তাঁরা শরণার্থী নিপীড়নের শিকার হয়েছেন কি না, তা নির্ধারণের জন্য সাক্ষাৎকার নেওয়া হচ্ছে না।

প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ

মার্কিন কর্মকর্তাদের একজন জানান, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে শরণার্থী মর্যাদা পাওয়া কিছু দক্ষিণ আফ্রিকান এইচএইচএসের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানিয়েছেন যে, তাঁদের সহায়তার জন্য যথাযথ ভাতা নেই। ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর শরণার্থী সুবিধা কমিয়ে দিয়েছেন। যেখানে আগে এক বছরের জন্য নগদ সহায়তা ও স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হতো, তা কমিয়ে চার মাসে আনা হয়েছে।

প্রথম দফায় মে মাসের মাঝামাঝি যুক্তরাষ্ট্রে আসা ৫৯ জনের মধ্যে একজন দুই সপ্তাহ পর এইচএইচএসের শরণার্থী অফিসে ই-মেইল করে সামাজিক নিরাপত্তা নম্বর (এসএসএন) ও কাজের অনুমতি পাওয়ার জন্য সাহায্য চান।

মন্টানায় যাওয়া মিসুলা নামের এক ব্যক্তি জানান, তাঁদের পরিবার খরচ মেটাতে হাজার হাজার ডলার ব্যয় করেছে। ২৭ মে তারিখের এক ই-মেইলে পরিবারের এক সদস্য লিখেছেন, ‘আমরা পাগলের মতো চাকরির জন্য আবেদন করেছি, কিন্তু এসএসএন না থাকায় কেউ নিয়োগ দিতে চাচ্ছে না। আমরা প্রায় ৪ হাজার ডলার খরচ করেছি উবার, খাবার ও মোবাইল ফোন সিম কার্ডের জন্য—যা কাজই করে না।’

তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন, সরকারি অর্থায়নে হোটেলে থাকার মেয়াদ জুন মাসে শেষ হলে তাঁদের থাকার জায়গা নাও থাকতে পারে। রয়টার্স ওই পরিবারের সঙ্গে পরে আর যোগাযোগ করতে পারেনি।

এইচএইচএসের মুখপাত্র জানান, সংস্থা অভিযোগগুলো গুরুত্বসহকারে নেয় এবং অস্থায়ী আবাসে রাখা শরণার্থীরা খাবারসহ মৌলিক প্রয়োজনের জন্য সহায়তা পেয়ে থাকেন।

বিষয়টির সঙ্গে যুক্ত একজন ব্যক্তি বলেন, কিছু দক্ষিণ আফ্রিকান যুক্তরাষ্ট্রে এসে ভেবেছিলেন, তাঁরা আগের মতোই শরণার্থী সুবিধা পাবেন, যা ট্রাম্প স্থগিত করেছেন বা কমিয়ে দিয়েছেন।

মার্কিন নাগরিকদের অবিলম্বে ভেনেজুয়েলা ছাড়তে বলল স্টেট ডিপার্টমেন্ট

এইচ-১বি ভিসার ফি বাড়ানোর পর এবার যাচাই প্রক্রিয়াও কঠোর করল ট্রাম্প প্রশাসন

সোমালি অভিবাসীদের ‘আবর্জনা’ বললেন ট্রাম্প

আমি আগের তুলনায় এখন আরও বেশি প্রাণবন্ত—বলেই মন্ত্রিসভায় ঘুমিয়ে পড়লেন ট্রাম্প

বাইডেনের ‘অটোপেনে’ সই করা সব নথি বাতিল করছেন ট্রাম্প

গ্রিন কার্ড থেকে নাগরিকত্ব—১৯ দেশের অভিবাসীদের সব আবেদন থামিয়ে দিল যুক্তরাষ্ট্র

নিউইয়র্কে শ্রম আইন লঙ্ঘন: ৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার জরিমানা দিচ্ছে স্টারবাকস

ট্রাম্পের এমআরআই পরীক্ষার রিপোর্টে যা আছে

‘শিগগির ক্ষমতা ছাড়’—মাদুরোকে ট্রাম্পের আলটিমেটাম

আমার মাথায় সমস্যা নেই, বিশ্বাস না হলে এমআরআই রিপোর্ট দেখাব—সাংবাদিকদের ট্রাম্প