হোম > বিশ্ব > যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা

যে ৫ কারণে বাইডেন-সির ফোনালাপ এত গুরুত্বপূর্ণ

ইউক্রেন ইস্যু নিয়ে প্রথমবারের মতো ফোনালাপ করতে যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই ফোনালাপ এমন সংকট সময়ে সিনো-মার্কিন সম্পর্কে একটি টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে। 

হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা সি এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সম্পর্ককে উদ্বেগের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছেন। ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা নিয়ে চীনের প্রতিক্রিয়াও এখন পশ্চিমাদের মাথাব্যথার কারণ। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই হতে যাচ্ছে সি ও বাইডেনের ফোনালাপ। 

বাইডেন-সির ফোনালাপকে পাঁচটি কারণে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএন। কারণগুলো হলো: 

 ১. রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সংকট মুহূর্তে এই ফোনালাপ 
একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সির সঙ্গে কথা হবে বাইডেনের। মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চীন রাশিয়াকে সামরিক বা আর্থিক সহায়তা দেওয়ার বিষয় পর্যালোচনা করছে। যদি চীন রাজি হয় তাহলে পশ্চিমাদের সঙ্গে আগামী কয়েক দশক ধরে দেশটির সম্পর্ক খারাপ চলতে পারে। 

গতকাল বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেন, আমরা উদ্বিগ্ন, কারণ চীন ইউক্রেনে ব্যবহারের জন্য সামরিক সরঞ্জাম দিয়ে রাশিয়াকে সরাসরি সহায়তা করতে চাইছে। 
 
এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র কিছু ন্যাটো মিত্রকে জানিয়েছে যে তাদের বিশ্বাস, চীন রাশিয়াকে সহযোগিতা দিতে ইচ্ছুক। তবে মস্কো এটি অস্বীকার করেছে। বেইজিংও জানিয়েছে, তাদের পক্ষ থেকে কোনো সহায়তা করা হচ্ছে না। 

মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইউক্রেনে রুশ হামলা নিয়ে বিচলিত সি। কারণ চীনের গোয়েন্দারাই বলতে পারছে না কী হবে এই যুদ্ধের পরিণতি। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র সতর্ক করে দিয়েছে, যুদ্ধ আরও বেশ কয়েক সপ্তাহ চলবে। 
 
২. রাশিয়াকে বিভিন্ন ধরনের সহায়তা দিতে পারে চীন 
মার্কিন কর্মকর্তারা মনে করছেন না যে, চীন রাশিয়াকে ট্যাংক বা জেটের মতো বড় সমর সরঞ্জাম সরবরাহ করবে। বরং তাঁদের বিশ্বাস, চীন রাশিয়ার জন্য খাবার, গোলাবারুদ, খুচরা যন্ত্রাংশের মতো ছোট রসদ পাঠাবে। 

মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, চীন রাশিয়াকে আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার প্রভাব প্রশমিত করতে সহায়তা করবে। যদিও মার্কিন এবং ইউরোপীয় পদক্ষেপের প্রভাবকে সম্পূর্ণরূপে কমানো চীনের পক্ষে সম্ভব নয়। ধারণা করা হচ্ছে, সির সঙ্গে ফোনালাপে বাইডেন রাশিয়াকে সাহায্য না দেওয়ার জন্য বলবেন। 

এ নিয়ে ব্লিঙ্কেন বলেন, প্রেসিডেন্ট স্পষ্ট করে দেবেন যে, রাশিয়ার আগ্রাসনকে সমর্থন করার জন্য যে কোনো পদক্ষেপের জন্য চীনকে দায়ভার নিতে হবে। 

চলতি বছর বেইজিংয়ে কমিউনিস্ট পার্টির ২০ তম জাতীয় কংগ্রেসের সি তৃতীয় মেয়াদে চীনের ক্ষমতায় আসীন থাকবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বছরে, পশ্চিমা বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে, সি ছোট নিষেধাজ্ঞার কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক ঝুঁকি সম্পর্কেও সচেতন থাকবেন। 

বেইজিংয়ের হিসাব অনুযায়ী, গত বছর চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে ৮০০ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হয়েছে। আর যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে গত বছর ৭৫০ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হয়েছে। সেখানে গত বছর রাশিয়ার সঙ্গে চীনের বাণিজ্যের পরিমাণ ১৫০ বিলিয়ন ডলার। 

অবশ্য রাশিয়াকে চীন সাহায্য করলে বাইডেন এবং তার প্রশাসন কী পদক্ষেপ নেবে তা এখনো জানায়নি। 

 ৩. যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই রাশিয়া এবং চীনের মধ্যে অংশীদারত্বকে ঠেকাতে হবে 
ইউক্রেনে হামলা চালানোর আগেই পুতিন ও সির সম্পর্ক পর্যবেক্ষণে রেখেছিলেন মার্কিন কর্মকর্তারা। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর পরিচালক বিল বার্নস গত সপ্তাহে বলেছিলেন, অংশীদারত্বের মূলে রয়েছে অনেক পরিকল্পিত বিষয়। 

গত ফেব্রুয়ারিতে শীতকালীন অলিম্পিক উদ্বোধনের সময় বেইজিং যান রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন। সেখানে পুতিন ও সি ঘোষণ দেন যে, তাঁদের সম্পর্কের কোনো সীমা নেই। এরপর থেকেই ইউক্রেন যুদ্ধে সির প্রতিক্রিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে পশ্চিমারা। 

যুদ্ধের শুরু থেকে এ পর্যন্ত মার্কিন কর্মকর্তার চীনের মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখেছেন। জাতিসংঘে রাশিয়ার বিরুদ্ধ ভোট দেওয়া থেকে বিরত ছিল চীন। আবার গত মাসে একজন শীর্ষ চীনা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বকে সম্মান জানানো উচিত। 

এ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার ব্লিঙ্কেন বলেন, আন্তর্জাতিক নিয়ম ও নীতিগুলোকে রক্ষা করার জন্য চীনা প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে তাঁর প্রভাব ব্যবহার করতে পারেন। এর পরিবর্তে চীন নিজেকে একটি নিরপেক্ষ সালিসকারী হিসেবে উপস্থাপন করতে গিয়ে এই আগ্রাসনের নিন্দা জানাতে অস্বীকার করে বিপরীত দিকে হাঁটছে। 

 ৪. এশিয়ায় মার্কিন মিত্ররা ইউক্রেন যুদ্ধে চীনের প্রতিক্রিয়া নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে
ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন ইউরোপকে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ সংঘাতের দিকে ঠেলে দিয়েছে। এ নিয়ে পুরো বিশ্বই উদ্বিগ্ন। ইউক্রেনের এই যুদ্ধকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে তাইওয়ান। স্ব-শাসিত দ্বীপটিকে নিজেদের বলে দাবি করে চীন। 

সম্প্রতি দ্বীপটির কাছাকাছি ঘন ঘন সামরিক বিমান উড়িয়েছে চীন। যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের বিরুদ্ধেও সতর্ক করে দিয়েছে বেইজিং। ইউক্রেন সংঘাতের প্রথম দিকে আশঙ্কা ছিল যে, তাইওয়ানের প্রতি চীন যেমন আচরণ করছে, রাশিয়াও ইউক্রেনের ব্যাপারে একইভাবে পা ফেলবে। 

মার্কিন কর্মকর্তার বলছেন, রাশিয়ার এই যুদ্ধের পরিণতি তাইওয়ানকে নিয়ে পুনরায় ভাবাতে পারে চীনকে। রাশিয়ার এই যুদ্ধের দিকে শুধু পশ্চিমারা কিংবা ন্যাটোই তাকিয়ে নয়, এর প্রভাব এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলেও পড়েছে। মার্কিন গোয়েন্দাদের ধারণা, রাশিয়ার সঙ্গে অর্থনৈতিক স্বার্থ এশিয়ার দেশগুলোকে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে বাধা দেবে। আর এটি নিয়ে প্রস্তুত ছিলেন না সি। জাপান এবং অস্ট্রেলিয়াসহ এশিয়ার কিছু মার্কিন মিত্র রাশিয়ার সামরিক অভিযানের পরেই নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে যে সাড়া দেবে, এমনটি দেখে বিস্মিত বাইডেনের নিজস্ব জাতীয় নিরাপত্তা দল। 

 ৫. বাইডেন এবং সির দীর্ঘ জানাশোনা
ওবামা প্রশাসনে ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকার সময় জো বাইডেন সির সঙ্গে দীর্ঘ সময় একসঙ্গে কাটিয়েছেন। তবে করোনা মহামারির কারণে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর বাইডেন এখনো সির সঙ্গে সশরীরে সাক্ষাৎ করতে পারেননি। এ সময়ে তাঁদের বেশির ভাগ বৈঠক হয়েছে ফোনে অথবা ভিডিও কনফারেন্সে। 

ইউক্রেন সংঘাতের আগে, বাইডেন আমেরিকান পররাষ্ট্রনীতিতে এশিয়ার ওপর নজর দেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে প্রতিযোগিতাকে পরবর্তী শতাব্দীর একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে হোয়াইট হাউস সাম্প্রতিক সময়ে ব্যস্ত থাকলেও তাঁরা অন্যান্য অধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থেকে নজর সরাননি।

ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে বেঁচে ফেরা ২ শিক্ষার্থী বেঁচেছিলেন স্কুল জীবনেও

এইচ–১বি ভিসা ফি বৃদ্ধি: ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে ২০ অঙ্গরাজ্যের মামলা

সিরিয়ায় মার্কিন বাহিনীর ওপর আইসিসের হামলার জবাব দেবেন ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন ইউনিভার্সিটিতে গুলিতে নিহত ২, আহত ৮

যুক্তরাষ্ট্রকে বর্জন করে কোথায় যাচ্ছেন কানাডার পর্যটকেরা

বাইডেনের সময় ইসরায়েলকে গোয়েন্দা তথ্য দেওয়া বন্ধ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র

এপস্টাইন ফাইল: নতুন ছবিতে বিল ক্লিনটন ও বিল গেটসসহ প্রভাবশালী অনেকে

লাতিন আমেরিকাজুড়ে শিগগির ‘স্থল অভিযান’ শুরু করবেন ট্রাম্প

বড় কোম্পানি থেকে ‘ভারতীয় নির্মূলের’ আহ্বান মার্কিন জরিপকারীর, সমালোচনার ঝড়

গর্ভে সন্তান আছে কি না পরীক্ষা করে ভিসা দেবে যুক্তরাষ্ট্র